ফ্লাডলাইট দিয়ে সাজানো ন’টি কৃত্রিম মাঠ। তাও আবার রাজ্যের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার নিজস্ব। গোটা মহারাষ্ট্রে সব ধরনের বয়সভিত্তিক ফুটবল মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোচ। যাঁদের প্রত্যেকের কোচিং করিয়ে মাসিক রোজগার তিরিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা। তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার তুলে আনার জন্য ফিফা ও এএফসি-র একাধিক প্রকল্প ও বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা। যা একেবারেই গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে নয়। পুরোদস্তুর পেশাদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলা। যা বলে দিচ্ছে ক্রিকেটের শহর মুম্বই এ বার এগোচ্ছে ফুটবলেও। ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (উইফা) কর্তারা সরাসরি বলছেনও সে কথা। সংস্থার জেলা ফুটবল দেখেন আদিত্য ঠাকরে। সম্পর্কে যিনি মহারাষ্ট্রের প্রয়াত রাজনৈতিক নেতা বালাসাহেব ঠাকরের নাতি। সেই আদিত্যই এ দিন আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘বাংলার ফুটবলের ঐতিহ্যকে সম্মান করি। আমাদের লক্ষ্য, ২০২০ সালের মধ্যে মুম্বইকে ফুটবলের আঁতুরঘর বানানো।’’
তারই ছোট্ট একটা উদাহরণ, বান্দ্রার নেভিল ডি’সুজা ফুটবল মাঠ। যা উদ্বোধন হয়েছে মঙ্গলবার সকালেই। এই জায়গা আগে ছিল ঝুপড়িতে ভরা। মাদক চোরাচালানকারীদের স্বর্গরাজ্য। পুলিশ সেই ঝুপড়ির অবৈধ বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে হঠানোর পরে একটা বড় জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়। এলাকার খুদে বাসিন্দারা যাতে অল্প বয়সেই অপরাধের জগতে না ঢুকে পড়ে, তার জন্যই উইফা উদ্যোগ নিয়ে এই এলাকায় কৃত্রিম ফুটবল মাঠ তৈরি করেছে। রয়েছে ফ্লাডলাইটও। সঙ্গে প্রশিক্ষিত কোচ ও স্থানীয়দের নিয়ে হবে ফুটবল কোচিং। আর প্রতি তিন মাস অন্তর শিক্ষার্থী ফুটবলারদের (প্রায় তিনশো জন)নিয়ে হবে প্রতিযোগিতা। যা দেখে নতুন প্রতিভা খুঁজবেন উইফার স্পটাররা। কাউকে খুঁজে পেলে তাঁকে পাঠানো হবে পরের স্তরের কোনও ফুটবল স্কুলে।
উইফার সিইও প্রাক্তন ফুটবলার হেনরি মেনেজিস। তিনিও বলছেন, ‘‘সাত বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই আমার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটের শহর মুম্বইয়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে অনেকটাই সফল। কলকাতায় হয়তো ফুটবলের সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু সেখানে পেশাদারিত্ব নেই। তাই প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও বাংলায় শৈলেন মান্না, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, শিশির ঘোষদের মানের ফুটবলার উঠে আসছে না। ফুটবলে পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গিতেই জোর দিয়েছি আমরা।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বাংলার ফুটবল হয়তো এখনও বুঝতে পারেনি ফুটবল আজকের দিনে বিনোদনের পাশাপাশি খেলা একটা ব্যবসাও। তাই ফিফা, এএফসি-র ফুটবলার তুলে আনার বেশির ভাগ কাজ এখন মুম্বইয়েই হচ্ছে।’’
কী পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছে উইফা? কুপারেজ স্টেডিয়ামে মহারাষ্ট্রের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার দফতরে বসে হেনরি বলেন, ‘‘প্রথম দায়িত্ব নিয়েই আবেদন করেছিলাম ফিফা ও এএফসি-র কাছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই আসে ফিফার ‘উইন ইন ইন্ডিয়া, উইথ ইন্ডিয়া’ প্রকল্প।’’ হেনরির দাবি, এই প্রকল্পের সহায়তাতেই ফ্লাডলাইট দিয়ে সাজানো ন’টি কৃত্রিম ফুটবল মাঠ পেয়েছে মুম্বই। হেনরির কথায়, ‘‘কুপারেজ মাঠের যাবতীয় সংস্কার করার পরে রাজ্যের সব কটি স্কুল ও ক্লাবে ‘ডি’ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফুটবল কোচ রাখা বাধ্যতামূলক করে দিই। প্রশিক্ষিত কোচদের বলা হয়েছিল এলাকায় গিয়ে ফুটবল কোচিং ক্যাম্প চালু করতে। এ রকম ফুটবল স্কুল এখন গোটা রাজ্যে দুই হাজার ছাড়িয়েছে। যেখান থেকে বেকার ফুটবল কোচেরা এখন মাসে তিরিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় করছেন। পরিকাঠামো, বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে উইফা। প্রতি সপ্তাহে গিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করে উইফার স্পটাররা।’’ এ ছাড়াও মহারাষ্ট্রের ২১টি জেলায় হোম ও অ্যাওয়ে ভিত্তিতে চলছে অনূর্ধ্ব-১২, ১৪, ১৬, ১৯-এর লিগ। যেখানে খেলছে ছেলে ও মেয়েরা। সেখান থেকেই নতুন ফুটবলার উঠে আসছে খালিদ জামিল, সন্তোষ কাশ্যপদের শহরে। যার ফলে মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে মহারাষ্ট্রের পাঁচ জন, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে দু’জন, অনূর্ধ্ব-২৩ দলে তিন জন জায়গা করে নিতে পেরেছে গত কয় বছরে।’’
শুধু তা-ই নয়। হেনরি বলছেন, ‘‘প্রতিটি প্রতিযোগিতা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করে উইফা। তার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যে সব সংস্থা খেলা দেখাতে চায় বলে আবেদন করে, তাদের ম্যাচ প্রতি ৭০০ টাকা করে দিতে হয় উইফাকে। মোবাইল ফোনে যা দেখে অংশগ্রহণকারী সব দল। ফলে বিজ্ঞাপন ও স্পনসরের অভাবও হয় না।’’ এ ছাড়াও আগামী বছর থেকে শুরু হতে পারে রোভার্স কাপ। তা হবে অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলারদের নিয়ে। যেখানে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল-সহ গোটা দেশের সেরা দশটি দলকে নিয়ে প্রতিযোগিতা চালানোর পরিকল্পনা উইফা কর্তাদের।
আইএফএ কর্তারা কি জানেন উইফার এই পেশাদার কর্মকাণ্ডের কথা? ক্রিকেটের শহর কিন্তু ফুটবলেও ‘মক্কা’ হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy