Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Football

আনন্দ নেই, চুক্তির ফাঁসে আটকেই বার্সায় মেসি

মেসি এই প্রথম প্রকাশ্যে এসে মুখ খুললেন। শুক্রবার তিনি জানিয়ে দেন, বার্সেলোনাতেই থাকছেন।

অপ্রসন্ন: ক্লাবের মনোভাবে খুশি নন মেসি।  ফাইল চিত্র

অপ্রসন্ন: ক্লাবের মনোভাবে খুশি নন মেসি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০২
Share: Save:

যদি কেউ মনে করে থাকেন লিয়োনেল মেসি নিখাদ ভালবাসার জন্য বার্সেলোনায় থেকে গেলেন, তা হলে ‘গোল’ নামক ফুটবল ওয়েবসাইটে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকারটি দেখুন। নীচে ইংরেজি অনুবাদ দেখতে থাকুন। স্পষ্ট হয়ে যাবে, মোটেও ভালবেসে নয়, থাকতে বাধ্য হলেন বলেই থাকলেন মেসি।

বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্সেলোনা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়ার পরে নানা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। কেউ সরব হয়েছেন তাঁকে যে কোনও মূল্যে রেখে দেওয়ার জন্য। আবার কেউ নিন্দা করে বলেছেন, যে ক্লাব তাঁকে এত কিছু দিল, দুঃসময়ে তাকে ছেড়ে চলে যাওয়াটাই বা কেমন আচরণ!

মেসি এই প্রথম প্রকাশ্যে এসে মুখ খুললেন। শুক্রবার তিনি জানিয়ে দেন, বার্সেলোনাতেই থাকছেন। যা খুশির ঘোষণা হওয়া উচিত তাঁর ক্লাব বার্সেলোনার জন্য। তা হলে এটাও প্রত্যাশিত ছিল যে, মেসি তাঁর ক্লাবের ওয়েবসাইটে এসে যা বলার, বলবেন। তা তো তিনি করেনইনি, বরং বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউয়ের বিরুদ্ধে তাঁর অসন্তোষ, অনাস্থার কথা। কার্যত অভিযোগ করে বলেছেন, ‘‘এক বছরে নানা সময়েই আমি বার্সেলোনা ছাড়ার কথা বলেছি ক্লাব প্রেসিডেন্টকে। উনি বার বার বলেছেন, এখন নয়, মরসুমের শেষে গিয়ে এ নিয়ে কথা বলা যাবে। কিন্তু মরসুমের শেষে উনি কথা রাখেননি।’’ প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে ‘উনি কথা রাখেননি’ বলাটা নিশ্চয়ই মধুচন্দ্রিমা চলা নয়, ভাঙারই লক্ষণ।

কেন তিনি চলে যেতে চেয়েছিলেন? ‘গোল’ ওয়েবসাইটকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে মেসি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, নিজের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ দরকার। বার্সেলোনাতেও পরিবর্তন দরকার। নতুন রক্ত দরকার। তাই ছেড়ে যেতে চেয়েছিলাম। শুধু বায়ার্নের কাছে ২-৮ হারের জন্য চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নয়।’’ আরও একটা ইঙ্গিত করেছেন। বার্সেলোনায় আর সেই উচ্চাশা দেখতে পাচ্ছেন না। সাময়িক পদক্ষেপ করে সমস্যা মেটানো হচ্ছে। মেসি ও বার্সার সম্পর্কের জন্য আরও উদ্বেগের কারণ রয়েছে। যে ক্লাবে তিনি এতগুলো খুশির বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছেন, সেখানেই তিনি আর আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। সাক্ষাৎকারের শেষের দিকে গিয়ে মেসি পরিষ্কার বলছেন, ‘‘আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম কারণ ফুটবল জীবনের শেষের বছরগুলোতে আনন্দ পেতে চেয়েছিলাম। সম্প্রতি এই ক্লাবে আমি সেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’’

সারা জীবন যাঁর বার্সেলোনোয় আনন্দ-খুশিতে কেটেছে, যাঁর সম্পর্কে বরাবর বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনা নামেই তাঁর দেশ, আসলে তিনি স্পেনের সন্তান, তিনি বলছেন বার্সায় আনন্দ নাই! এর চেয়ে বড় বিচ্ছেদ আর কী হতে পারে!

সাক্ষাৎকারের একটি জায়গায় মেসি বলছেন, ‘‘আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম। এবং, চলে যাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে।’’ মনে হবে, বার্সা ছেড়ে তাঁর মন চলেই গিয়েছে। শরীরটাই শুধু পড়ে থাকতে পারে। ফের প্রশ্ন করা হয় বার্সেলোনা-প্রেম নিয়ে। মেসির জবাব, ‘‘আমি বার্সেলোনাকে ভালবাসি। বার্সেলোনা আমাকে সব কিছু দিয়েছে। আমিও সব কিছু দিয়েছি এই ক্লাবকে। তবু আমার ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।’’ ঠিক কী কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে ক্লাবের? প্রশ্নের জবাবে মেসি যা বলেছেন, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। বলেছেন, ‘‘ক্লাব প্রেসিডেন্টকে আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, চলে যেতে চাই। উনি মরসুম শেষের কথা বলতে থাকেন। কিন্তু মরসুম শেষে যখন আমি বললাম, তখন ওঁরা বললেন, আমি ১০ জুনের মধ্যে জানাইনি। তখন অতিমারির মধ্যে আমরা লা লিগা খেতাবের জন্য লড়াই করছি। অতিমারির জন্য মরসুম এ বারে অনেক পরে শেষ হয়েছে।’’ বলে চলেন তিনি, ‘‘ফুটবল মরসুম শেষই তো হয়নি তখনও। আমরা লা লিগার জন্য লড়ছি, অন্য চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। তার উপরে অতিমারির মধ্যে এ রকম একটা কঠিন পরিস্থিতি। তাই আমার মনে হয়েছিল, মরসুম শেষ হলেই আমি বলতে পারি। প্রেসিডেন্ট সে রকমই বলেছিলেন।’’

এখন বার্তোমেউ কী বলছেন? মেসির কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্ট বলছেন, একমাত্র ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর বাইআউট ক্লজেই আমি ক্লাব ছেড়ে যেতে পারি। যেটা অসম্ভব। এর পরেই তাঁর স্পষ্ট মন্তব্য, ‘‘এই কারণেই আমি বার্সেলোনা ছেড়ে যাচ্ছি না।’’ একটি জায়গাতেই শুধু মেসির বার্সেলোনা-প্রেম কিছুটা অটূট বলে মনে হয়েছে। যখন তিনি বলছেন, ‘‘প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করতে হলে আদালতে যেতে হত। আমি সেটা করতে চাইনি। যে ক্লাব আমাকে এত কিছু দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারি না। এই ক্লাবের সঙ্গে লড়াইয়ে যেতে চাইনি আমি।’’ আইনসিদ্ধ মতে বার্তা পাঠানোর জন্য বুরোফ্যাক্স করেছিলেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত? মেসি বলে দিচ্ছেন, ‘‘কারণ, আমি সরকারি তকমা দিতে চেয়েছিলাম বিষয়টিতে যে, আর বার্সায় থাকতে চাই না। প্রেসিডেন্টকে বার বার বলেও কোনও প্রতিক্রিয়া তো পাচ্ছিলাম না।’’

সামনের রাস্তা? এ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। নতুন ম্যানেজার রোনাল্ড কোমানের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক যাবে, কেউ জানে না। মেসি নিজেও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘নতুন ব্যক্তি এসেছে। নতুন পরিকল্পনা থাকবে। জানি না সামনে কী আছে। দেখা যাক। তবে আমি একশো শতাংশ দেব।’’

কোমানের একটি বক্তব্য মনে রাখা দরকার। ক্যাম্প ন্যু-তে এসেই তিনি ঘোষণা করেন, যারা বার্সায় থাকতে চায় না তাদের চাই না। নতুন ম্যানেজার কী বলবেন তাঁর সব চেয়ে বড় তারকাকে নিয়ে? যাঁর মন বার্সা ছেড়ে চলে গিয়েছে, শরীরটা পড়ে থাকছে চুক্তির ফাঁসে আটকে গিয়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football Lionel Messi Barcelona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE