স্মরণীয়: বিশ্বকাপ হাতে কপিল। পাশে মোহিন্দর। ফাইল চিত্র
আট বছর আগে এই দিনটাতেই মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মুকুট মাথায় উঠেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের। আর যাঁরা প্রথম বিশ্বজয়ের স্বাদ এনেছিলেন তারও অনেক আগে, সেই তিরাশির কপিলের দৈত্যরা মঙ্গলবার জড়ো হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করার সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন কপিল ও তাঁর সতীর্থরা। ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে গার্ড অব অনার জানিয়ে যাঁদের মঞ্চে তোলা হয়েছিল। এক ঘণ্টার সেই মজাদার আড্ডা জুড়ে রইল নানা অজানা স্মৃতির ভিড়।
আট বছর আগের দোসরা এপ্রিলে যে সময়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-সচিন তেন্ডুলকরদের জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলেন, এ দিন ঠিক সেই সময়েই বেঙ্গালুরুর হোটেলের সভাঘরে বড় পর্দায় ভেসে উঠেছিলেন কপিল ও তাঁর বিশ্বজয়ী দল। আর এই ২০১৯ সালেও ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি যে নতুন প্রজন্মের কাছেও কতটা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা বোঝা গেল হাততালি আর উচ্ছ্বাসে। জমজমাট যে আড্ডার আয়োজক ছিল ব্রিটানিয়া সংস্থা।
শুরুতেই দক্ষিণ ভারতীয় কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের কাছে ঘোষক জানতে চেয়েছিলেন, কপিলদের সঙ্গে ভাষা নিয়ে কোনও সমস্যা হত কি না? যা শুনে হাসতে হাসতে শ্রীকান্ত শুরু করলেন, ‘‘আরে, কপিল, মদনলাল, যশপালদের ভাষাই বুঝতাম না আমি আর রজার বিনি। সানি (সুনীল গাওস্কর)-কপিলরা নিজেদের মধ্যে কোন ভাষায় কথা বলছে, সেটা আমাদের বোঝাতে দোভাষী ছিল কিরমানি।’’ রসিক শ্রীকান্ত এ বার যোগ করলেন, ‘‘আসলে তখন আমার হিন্দি আর কপিলের ইংলিশ ছিল একই রকম। ২০১৯ সালে এসেও সেটা একই জায়গায় রয়েছে। আমরা কেউ কাউকে ছাপিয়ে যেতে পারিনি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শ্রীকান্তের কথা শুনে কপিল বলে উঠলেন, ‘‘আরে তোদের ইংরেজি আবার আমাকে তর্জমা করে বোঝাত যশপাল শর্মা।’’ যা শুনে চোখ টিপে কিরমানি বলতে থাকেন, ‘‘যেমন কপিল, তেমন তাঁর ইংরেজির শিক্ষক।’’ খেলা ঘোরানোর মতো পরিবেশ পাল্টে দিলেন শ্রীকান্তই। তিরাশির স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বললেন, ‘‘অনেক রসিকতা হল। এ বার আসল কথাটা বলি। তিরাশিতে যে আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি, সেটা দলের অনেকে ভাবতেই পারেনি। সেই দলে আমিও পড়ি। দলের এক জনই প্রথম দিন থেকে বলত, আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বারবিসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর দিন থেকে। সেই লোকটা কপিল দেব। আমাদের নেতা।’’
একটু পরে শ্রীকান্তই শোনালেন আর এক মজাদার কাহিনি। ‘‘তিরাশির মার্চে বিয়ে করেছিলাম। তার আগে দু’টো বিশ্বকাপে ভারত জিতেছিল মাত্র একটাই ম্যাচ। ভেবেছিলাম, দু’-তিনটে ম্যাচের পরেই তো হেরে যাব, তার পরে বউকে নিয়ে সেমিফাইনাল, ফাইনাল দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাব মধুচন্দ্রিমায়। এ রকম একটা দল কপিলের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতে যাওয়ায় আমার আর সে বার স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকা যাওয়া হয়নি। টিকিট বাতিল করতে হয়েছিল। বহু টাকা নষ্ট হয়ে যায়।’’
এ রকম একটা দলকে নিয়ে বিশ্বকাপ জিতলেন কী ভাবে? এ বার প্রশ্ন গেল কপিলের দিকে। দ্রুত জবাব এল, ‘‘আমার দলে মদনলাল, মোহিন্দর, কীর্তি আজাদ, বিনি, কিরমানিদের মতো ম্যাচউইনার ছিল। ওদের দায়িত্ববোধটা শুধু জাগিয়ে তুলেছিলাম। তার পর ওরাই কামাল করে দিল।’’ সেটা কী রকম? কপিল বলে চলেন, ‘‘ফাইনালে ভিভিয়ান রিচার্ডস আউট হচ্ছে না। মদনলাল খুব মার খাচ্ছে। ভাবলাম সরিয়ে দেব। বলতেই মদন বলে বসল, ভিভকে বারবিসে আউট করেছিলাম। আজও ওকে প্যাভিলিয়নে পাঠাব। আর একটা ওভার দাও। ফের বল দিতেই ভিভ আউট।’’ যোগ করেন, ‘‘মাঠের বাইরেও তো চনমনে থাকত দলটা। গান গেয়ে ড্রেসিংরুম মাতিয়ে রাখত মোহিন্দর আর কিরমানি।’’
এ বার রজার বিনির পালা। যিনি বিশ্বকাপ চলাকালীন একটি পার্টিতে সুইমিং পুলে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারাতে বসা কীর্তি আজাদকে বাঁচিয়েচিলেন। সেই কাহিনি শোনাচ্ছিলেন কপিল, ‘‘কীর্তি স্যুট-বুট পরেই সাঁতার কাটার চেষ্টা করছিল সে দিন। আমাদের স্ত্রীরাও ওই পার্টিতে ছিল। আমার স্ত্রী রোমি ভয় পেয়ে গিয়ে বলে, কীর্তিকে বাঁচাও। এর পর বিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়েছিল কীর্তিকে।’’
বোঝা গেল, তিরাশির সেই ইতিহাসের মূল মন্ত্র ছিল টিম স্পিরিট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy