ক্লাবের নির্বাচনী যুদ্ধে চার প্রাক্তন ফুটবলার নেমে পড়েছেন শুনে সনি নর্ডি প্রশ্ন করলেন, ওঁরা কী প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন?
বিমানে পাশের সিটে বসে পিয়ের বোয়া আলোচনায় যোগ দিয়ে বললেন, ‘‘দু’-একজন সমর্থক আমাকে এ সব নিয়ে বলেছেন, কিন্তু ক্লাবে সকালে প্র্যাকটিসে গিয়ে তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’’
নয় বছর সবুজ-মেরুন জার্সি পরে খেলা টিমের সবচেয়ে সিনিয়র শিল্টন পালের মন্তব্য, ‘‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কী দরকার? কাগজে পড়ছি। ব্যাস, ওইটকুই। আমাদের এখন একমাত্র টার্গেট আই লিগ। কিছুতেই ফোকাস নষ্ট করা যাবে না।’’
নির্বাচন নিয়ে ধুন্ধুমার যুদ্ধ লেগে গিয়েছে মাঠের বাইরে। চলছে তর্কের তুফান। কিন্তু পাঁচ বছর পর আই লিগ জয়ের গন্ধ পাওয়া বাগান টিমের তাতে হেলদোল নেই। দশ দিনের জন্য আজই ভারত সফরে বেরিয়ে পড়লেন কাতসুমি-দেবজিৎরা। টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। তার প্রথমটা করিম বেঞ্চারিফার পুণের এফসি-র বিরুদ্ধে খেলার জন্য বেরনো সঞ্জয় সেন ব্রিগ্রেডের বিমান সঙ্গী হয়ে কথা বলার সময় বোঝা যাচ্ছিল, শুধু বোয়াদের মতো বিদেশিরাই নন, বঙ্গসন্তান প্রীতম, কিংশুকরাও ক্লাব নির্বাচন নিয়ে ভাবিত নন। তাঁদের কাছে অনেক বেশি শুরুত্ব পাচ্ছে আই লিগ খেতাব।
বরং কোচ সঞ্জয় সেনের চিন্তা পরের ম্যাচগুলোর রেফারিং নিয়ে। রয়্যাল ওয়াহিংডো ম্যাচের পর যা আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাগানে। টিমের এক নম্বর তারকা সনি বললেন, ‘‘আমাদের তো চোদ্দো জনের বিরুদ্ধে খেলতে হয়। সেটা মাথায় রেখেই বেরিয়েছি।’’ বোয়া আর কিংশুকের তিনটে করে হলুদ কার্ড় আছে। আর একটা দেখলেই পরের ম্যাচে নেই। এ দিন সকালে কলকাতায় প্র্যাক্টিসের পর সঞ্জয় ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, ‘‘রেফারির সঙ্গে কেউ কোনও তর্ক করতে যেও না। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এই তিনটে ম্যাচ ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ।’’
নির্বাচনের প্রভাব টিমের উপর পড়তে পারার আশঙ্কায় শাসকগোষ্ঠীর কর্তারা সকালে টিমের প্র্যাক্টিসের সময় ক্লাব তাঁবুতে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজ রাখছেন না। অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলছিলেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি যা কাজ করার প্লেয়াররা চলে গেলে করার। কোচ আর টিমের সাপোর্টিং স্টাফকেও বলে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা কেউ যেন না করে।’’
সেটা মাথায় রাখছেন বাগান কোচও। ‘‘আমি কোনও দিনও এসবের মধ্যে থাকি না। প্র্যাক্টিস ঠিক মতো হচ্ছে। ফুটবলারদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। যা চাওয়া হচ্ছে সবই পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের জন্য কোনও সমস্যা তো হচ্ছে না।’’ পুণেতে এ দিন রাত দশটা নাগাদ নামল টিম মোহনবাগান।
বোয়া ছাড়া কোনও ফুটবলারের চোট নেই। বুধবার ডেম্পোর কাছে ওয়াহিংডো হারায় সন্তোষ কাশ্যপের দলকে আর খেতাবের দৌড়ে রাখতে রাখতে নারাজ বাগান ফুটবলাররা। সনি-বোয়া দু’জনেরই এক যুক্তি—‘‘খেতাবের ব্যাপারে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন একমাত্র বেঙ্গালুরু। তবে ওদেরও কঠিন ম্যাচ বাকি আছে। পয়েন্ট নষ্ট করবেই। কিন্তু আমাদেরও জিততে হবে।’’
সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, এক-একটা ম্যাচ ধরে-ধরে এগোতে চাইছেন কোচ। পুণেকে কলকাতায় হারানো সত্ত্বেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। ‘‘ওদের হারানোর কিছু নেই—সেটাই আমাদের চিন্তা।’’ শনিবার পুণে ম্যাচ খেলে এখানেই থেকে যাবে বাগান। মুম্বই যাবে এপ্রিলের শেষ দিন। আবার ফিরে আসবে পুণেতেই। ভারত এফসি ম্যাচ খেলতে।
আদালত হস্তক্ষেপ না করলে বাগান নির্বাচন হওয়ার কথা ১০ মে। সঞ্জয়-ব্রিগেড কলকাতা ফিরবে তার চার দিন আগে। নির্বাচনের গনগনে আগুন তখন তুঙ্গে থাকবে। কিন্তু তাতে কী? এই সফরে তিন ম্যাচ থেকে অন্তত সাত পয়েন্ট তুলতে পারলে কোনও ‘আগুনের আঁচ’-ই আর ছুঁতে পারবে না বাগান টিমকে। শাসকগোষ্ঠীও তো সেটাই চাইছে। টিম যত জিতবে ততই যে ভোট-বাক্স ফুলে ফেঁপে উঠবে তাদের সমর্থনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy