ইডেনে মনোজের ব্যাট থেকে এল ডাবল সেঞ্চুরি। ছবি: পিটিআই।
প্রশ্ন: সেঞ্চুরির পরে উৎসবটি কার উদ্দেশে ছিল?
মনোজ: এত দিন ধরে এত কিছু শুনেছি যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব! সব সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্যই আজকের এই ইনিংস। মাঠে নামার আগে নিজেকে বলেছিলাম, উইকেট দিয়ে আসা চলবে না। গত কাল দু’টি সুযোগ দিয়েছি ঠিকই। আজ একটিও দিইনি। যাঁরা সমালোচনা করেছেন, আশা করছি তাঁরা এই ইনিংসটি দেখেছেন। সমালোচনা যেমন করেছিলেন, আশা করব প্রশংসাও করবেন। নিজের উপর ভরসা ছিল। জানতাম, আমার এই ব্যাটই ওই লোকগুলোকে জবাব দেবে।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছিল, দু’ম্যাচের পরীক্ষায় আছেন আপনি। এমনকি, পারফর্ম করতে না পারলে দল থেকে বাদ পড়ারও হুমকি চলছিল। এর ফলে কতটা চাপ তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: চাপ ছিল ঠিকই, কিন্তু এ ব্যাপারগুলো আমাকে আরও বেশি তাতিয়ে দেয়। বাইরের কথায় কান দিই না বললে মিথ্যে বলা হবে। ক্রিকেটারেরাও তো মানুষ। তাদেরও আবেগ থাকে। শুধুমাত্র অধিনায়ক থাকার সুবিধে নিয়ে প্রথম একাদশে জায়গা করতে চাইনি। কখনওই না। বরাবরই মাঠে নেমে নিজেকে প্রমাণ করেছি। নিয়মিত দলে সুযোগও পেয়েছি। আশা করি, এর পরের ম্যাচে অন্তত আমাকে বাদ দেওয়া হবে না।
প্রশ্ন: দু’ম্যাচের পরীক্ষার পরে নিজেকে একশোর মধ্যে কত নম্বর দেবেন?
উত্তর: আশা করছি ভাল ভাবে অন্তত পাশ করে গিয়েছি। যে-হেতু ডাবল সেঞ্চুরি করেছি, তাই লেটার মার্কস পেতে পারি কি? তবে আমি কিন্তু এখনই নম্বর দিতে চাই না। টিমের কাজ এখনও অনেক বাকি। ম্যাচের ফলাফল কী হয় দেখি। সেই অনুযায়ী নিজের নম্বরটা বসাব।
আরও পড়ুন
ইডেনে ঝোড়ো ইনিংসের সঙ্গে এল মনোজের আগ্রাসী রানের উৎসবও
প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচটি ডাবল সেঞ্চুরির মধ্যে এই ইনিংসকে কোন জায়গায় রাখবেন?
উত্তর: প্রথম দু’টি ডাবল সেঞ্চুরির মধ্যে থাকবে এই ইনিংস। কারণ আমার মা মাঠে এসেছিলেন, প্রথম বার আমাকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেখেছেন। আরেকটা কারণও রয়েছে। আমি আজ যে ব্যাটে খেলেছি, সেটায় আমার ছেলের নাম (যুবা, যার বয়স চার মাস) লেখা রয়েছে। আজকের এই ইনিংসটা আমার মা আর ছেলেকে উৎসর্গ করতে চাই।
হুঙ্কার: সেঞ্চুরির পরে সেই আগ্রাসী উৎসব মনোজ তিওয়ারির। যা নিয়ে চর্চা চলল ইডেনে। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র
প্রশ্ন: ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখেন?
মনোজ: অবশ্যই। তার জন্যই তো এত দিনের পরিশ্রম। অম্বাতি রায়ডু যদি এই বয়সে ওয়ান ডে দলে ফিরতে পারে, তা হলে আমি কেন টেস্ট খেলতে পারব না! বয়স তো শুধুমাত্র একটি সংখ্যা। তিরিশ পেরিয়ে গেলেও আমি যথেষ্ট ফিট। এখনও রান করছি। দলকে সাহায্য করছি। আমার তো আর কিছু করার নেই। বাকিটা নির্বাচকদের উপরে। এ মরসুমে রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় শীর্ষে নিজের নামটা দেখতে চাই। তার পরে দেখি কী হয়।
প্রশ্ন: মেন্টর হিসেবে ড্রেসিংরুমে অরুণ লালের আসাটা কত বড় অনুপ্রেরণা?
মনোজ: লালজি এই মুহূর্তে আমাদের সব চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আজ সকালেও টিম হাডলে আমাকে বলেন, ‘‘তোমাকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে হবে। তবেই দলের রান ৪৫০-এর গণ্ডি পেরোবে। উইকেট কামড়ে পড়ে থাকো।’’ ওঁর কথা মাথায় রেখেই ব্যাট করছিলাম। ফলও পেলাম।
আরও পড়ুন
ইডেনে ঝোড়ো ইনিংসের সঙ্গে এল মনোজের আগ্রাসী রানের উৎসবও
প্রশ্ন: আর কোচ মানবেন্দ্র ঘোষ? তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি?
মনোজ: প্রত্যেক দিন নিয়মিত কথা হয় মানব স্যরের সঙ্গে। গত কাল আমাকে স্যর ফোন করেছিলেন। আমিই জিজ্ঞাসা করলাম, কী ভাবে ইনিংসটিকে সাজাব? স্যর আমাকে বলে দিলেন ‘‘হাফসেঞ্চুরির পরে ৮৫ পর্যন্ত দ্রুত রান করে নাও। তার পরে সেঞ্চুরি পর্যন্ত একটু সাবধান হয়ে যাও। একশো থেকে দেড়শো করতে বেশি সময় নিলে চলবে না। তার পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী ডাবল সেঞ্চুরির জন্য ঝাঁপাও।’’ ছোটবেলার মতো আজও স্যরের কথা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করেছি।
প্রশ্ন: এই ডাবল সেঞ্চুরির পরে কি গোটা মরসুমের অধিনায়ক হিসেবে মনোজকে পাওয়া যাবে?
মনোজ: নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাকে রঞ্জি ট্রফি জেতানোর স্বপ্ন এখনও দেখি। সেই স্বপ্নটা পূরণ হবে কি না সময় বলবে। পুরোটাই প্রশাসকদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তবে আমার নেতৃত্ব দিতে কোনও সমস্যা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy