জয়ের উল্লাস। ছবি: এএফপি।
চার বছর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে ডুকরে কেঁদেছে বাংলাদেশ দল। অঝোরে কেঁদেছে ক্রিকেটপাগল দর্শক। সেই ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকেও পারেননি দলকে জেতাতে। বুধবার সন্ধ্যায় সেই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আনোয়ার আলিকে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দলকে জয় এনে দিলেন সেই মাহমুদুল্লাহই! ওই শটের আনন্দেই এখন ভাসছে গোটা বাংলাদেশ।
আকাশের চাঁদ হাত দিয়ে ধরার স্বপ্ন কখনও দেখান না, অথচ আকাশের চাঁদটাই বার বার হাত দিয়ে ধরছেন মাশরাফি। মনের গভীরের বিশ্বাসটাই তাঁর কাছে বড়। আর তাতেই পাচ্ছেন একটার পর একটা সাফল্য। গত বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তান,ভারত,দক্ষিন আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সতীর্থদের সামর্থ্যে অগাধ বিশ্বাস করে প্রতিনিয়ত নতুন শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় দলকে।
ধর্মশালায় ৯ মার্চ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড শুরু করবে বাংলাদেশ। তার আগে ৩ ও ৫ মার্চ দু’টি অনুশীলন ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ রেখেছিল আইসিসি। বাংলাদেশ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে পারবে না, এটা ধরে নিয়েই সূচি ঠিক করেছিল আইসিসি। কিন্তু ১১ বাঙালির দুর্দান্ত ফর্ম আইসিসিকে বাধ্য করল সেই দু’টি ওয়ার্ম আপ ম্যাচ বাতিল করতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে খেলার সুযোগ দেওয়া যাবে না বলে যে আইন করেছে আইসিসি, এটা যেন সেই ‘ষড়যন্ত্রের’ জবাব।
সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে নেদারল্যান্ড,আয়ারল্যান্ড,হংকংয়ের কাছে হার, র্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানের নীচে চলে যাওয়া বাংলাদেশকে যে এশিয়া কাপে খুব বড় কিছু করবে, সে স্বপ্ন দেখেনি ক্রিকেটপ্রেমীরাও। বর্তমান এবং সাবেক তিন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে এশিয়া কাপে খেলার সুযোগটাকেই টি-২০ বিশ্বকাপের বড় প্রস্তুতি হিসেবে নিতে হয়েছিল হাতুরুসিংহের শিষ্যদের। অথচ, সেই নুতন ফরম্যাটের এশিয়া কাপেই এখন ট্রফির লড়াইয়ে ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ! আর একটা ম্যাচ। আর সেটা জিতলেই হবে ইতিহাস।
ভারতের কাছে ৪৫ রানে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করার পরও ফাইনালের স্বপ্ন দেখেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে গোপন রাখা সে স্বপ্নের কথাই বলেছেন অধিনায়ক নিজেই। বললেন, “আমরা এখানে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে খেলতে আসিনি। যা অর্জন করব সেটাই আমাদের জন্য একটা অর্জন হয়ে থাকবে। তারপরও প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর মনে হয়েছে আমরা ফাইনাল খেলতে পারি, এ বিশ্বাস ছিল। লক্ষ্য ছিলো ওয়ান বাই ওয়ান ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার পর ভাবলাম পাকিস্তানের সঙ্গে যদি জিততে পারি তা হলে ফাইনাল খেলব।”
বড় কোনও স্বপ্ন না দেখিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেছেন মাশরফি। এখন অপেক্ষায় স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। “এখন তো শুধু ফাইনাল ম্যাচই বাকি। তিনটা ম্যাচ জেতার পর আমরা এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। সবাইকে বলব মাটিতে পা রেখে চলতে, স্বাভাবিক খেলা খেলতে। অনুরোধ করবো অপ্রয়োজনীয় চাপ না নিতে। এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলবো, কেউ নিশ্চিত ছিল না। মনের ভেতরে থাকা বিশ্বাস থেকেই আমরা পেরেছি। ফাইনালে চেষ্টা করব সেরাটা খেলার।”
১৮ বলে ২৭, এমন এক টার্গেটটা কঠিন করে দিয়েছিলেন সাকিব। ১৮তম ওভারে আমিরকে লেগ স্ট্যাম্প ছেড়ে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। সেখান থেকে সেই আমেরকে পরপর দু’বার বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দলকে জয়ের রাস্তায় ফেরান মাশরফি। “তখন বল একটু রিভার্স করছিল, কোচ এসে আমাকে বলে, যদি সাকিব ওই ওভারের শেষ দিকে এসে আউট হয়, তা হলে তোমার যাওয়ার দরকার নেই। এর আগে যদি ওভারের প্রথম এক দুই বলের মধ্যে আউট হয়ে যায় তা হলে তুমি এই চান্সটা নাও। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটাই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয়।”
মুস্তাফিজুরের চোট চার পেসারের কম্বিনেশন থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ দলকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাসকিন,আল আমিনরা তাঁর অভাব তেমন বুঝতে দেননি। দুই সতীর্থকে ধন্যবাদ দিয়েও মাশরফির আক্ষেপ, “মুস্তাফিজ যদি থাকত অন্তত ১৫ রান কম হত। তারপরও পাকিস্তানের মতো দলকে ১৩০য়ের মধ্যে বেঁধে ফেলাটা কম নয়। ৪৮ রানের সময়োচিত ইনিংসে সৌম্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেও তাসকিনের স্পেলই আজকের সেরা।”
আরও পড়ুন:
দেশকে রূপকথার রাত উপহার দিলেন মাশরফি
জানতাম আমরাই জিতব: মাশরফি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy