Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ধর্মশালা ও নয়াদিল্লি: চলছে দুই যুদ্ধের প্রস্তুতি

‘মেন্টর’ ধোনি বললেন, বিরাটের মগজটা বেশি কাজে লাগাচ্ছি

তিনি জানেন, আওয়াজটা বাড়ছে। লোকে বলছে কত দিন আর? টেস্ট টিমকে টানা সাফল্য দেওয়ার পর ওয়ান ডে নেতৃত্বের তাজ পেতে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে কোহালিকে? তিনি জানেন সব।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩৮
Share: Save:

তিনি জানেন, আওয়াজটা বাড়ছে। লোকে বলছে কত দিন আর? টেস্ট টিমকে টানা সাফল্য দেওয়ার পর ওয়ান ডে নেতৃত্বের তাজ পেতে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে কোহালিকে? তিনি জানেন সব। কিন্তু তাই বলে কোনও সংঘাতমূলক কাজকর্মে যাবেন না। বরং আরও বেশি করে টিমের সিস্টেমে প্রাধান্য দেবেন উত্তরসূরি, আরও বেশি ব্যবহার করতে উদ্যোগী হবেন উত্তরসূরির ক্রিকেট-মস্তিষ্ক।

তিনি জানেন, ক্রিকেটটা আর এক রকম নেই। বারো বছর আগে নিজে যখন এসেছিলেন, সেই সময়ের ক্রিকেটার, ক্রিকেট আজ আর কিছু নেই। নিজেকে তিনি তাই ক্রমাগত পাল্টাতে চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন, যুগধর্ম মেনে নিজের ক্রিকেটকে পাল্টাতে। ভুলে যেতে চেষ্টা করেন, তিনি অধিনায়ক। ক্যাপ্টেনের ট্যাগলাইনটা খুলে রেখে চেষ্টা করেন একজন সিনিয়র হিসেবে টিমের সঙ্গে মিশে যেতে।

তিনি জানেন, তাঁর পরিবর্ত একদিনে আসবে না। মানে, ফিনিশার হিসেবে তাঁর পরিবর্ত। যে ব্যাপারটাকে প্রায় লোকগাথার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। বোঝেন যে, ছ’মাস কিংবা এক বছরে ফিনিশার আসবে না। ফিনিশার খুঁজে তৈরি করতে হবে। কাউকে কাউকে যে ভূমিকায় বাছাও হয়ে গিয়েছে। এবং সেই কারণেই কি না কে জানে, নিজেকে তিনি ব্যাটিং অর্ডারে তুলে আনার কথা ভাবছেন।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এখন শুধু নিজেকে আর অধিনায়ক নন। নিজেকে টিমের মেন্টর হিসেবে দেখছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি চাইছেন, টিমের থিঙ্কট্যাঙ্কে বিরাট কোহালিকে আরও ঢুকিয়ে নিতে। কোহালির ক্রিকেট-মগজের ব্যবহার টিমে আরও বাড়িয়ে দিতে!

ওয়ান ডে যুদ্ধের মহড়া। ক্যাপ্টেন কুল কখনও ডুবে নেটে, কখনও মেতে ফুটবলে। শনিবার। -পিটিআই ও টুইটার

শনিবার ধর্মশালার আবহে কোহালি-ধোনি রসায়নের যা খবরাখবর শোনা গেল, তার সঙ্গে কোহালি সম্পর্কে ভারতের ওয়ান ডে অধিনায়কের সশ্রদ্ধ মন্তব্যের মিল পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতীয় টিমের নেট সেশনে কোহালিকে প্রবল উদ্যোগী ভূমিকা নাকি নিতে দেখা যাচ্ছে। গত কাল অজিঙ্ক রাহানেকে থ্রো ডাউন দিয়েছেন। কোনও শটে গণ্ডগোল মনে হলে, দৌড়ে গিয়ে নিজে সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। এ দিন আবার নাকি সোজা এমএস ধোনিকে থ্রো ডাউন দিতে ছোটেন কোহালি। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ধোনি বলেও দেন, ‘‘কোহালির মগজ ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। খেয়াল করলে দেখবেন, ম্যাচে এখন ওর সঙ্গে অনেক বেশি কথাবার্তা বলি আমি।’’ ইঙ্গিত স্পষ্ট— ভারতীয় সংসারে কোহালির মর্যাদা কী, ধোনি জানেন। এবং কোহালিকে তাঁর প্রাপ্য দেবেনও।

ধোনিকে জিজ্ঞেস করা হয়, তা হলে টিমে তাঁর নিজের ভূমিকা এখন কী? উত্তরে ভারত অধিনায়ক বলে দেন, ‘‘টিমের সিনিয়র সদস্য হয়ে গেলে আপনি ক্যাপ্টেন না ভাইস ক্যাপ্টেন, তার কোনও মানে থাকে না। আপনাআপনি বাড়তি দায়িত্ব এসে যায়। জুনিয়রদের সঙ্গে কথা বলতে হয়, তাদের গাইড করতে হয়।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ক্রিকেট অনেক পাল্টে গিয়েছে এখন। আমাদের সময় যে ধরনের প্লেয়াররা আসত, তাদের চেয়ে এখনকার প্লেয়াররা অনেক আলাদা। আমার ভূমিকাটা একই আছে। শুধু সময়ের আমি পাল্টেছি।’’

তার মানে অধিনায়কের বদলে মেন্টর? ধোনি যা ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন, শুনলে সেটাই মনে হবে। তিনি তো বললেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তুলে আনার ব্যাপারে। যার মধ্যে নিজের ফিনিশারের জায়গাটাও আছে। ‘‘ধারাবাহিক পারফর্মার আমাদের খুঁজতে হবে। ফিনিশিংটা ক্রিকেটের কঠিনতম কাজের মধ্যে একটা। ফিনিশার হিসেবে কয়েক জনকে আমরা বেছেছি। নাম করছি না তাদের। কারণ তাতে ওদের চাপে ফেলে দেওয়া হবে।’’

এবং ধোনির নতুন ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়া ছাড়া রবিবার থেকে শুরু হতে চলা ভারত-নিউজিল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজের আকর্ষণ দু’টো। একটা ইতিহাসগত। একটা তার বাইরের। ধর্মশালা ওয়ান ডে ভারতের ন’শোতম ওয়ান ডে ম্যাচ। আর দ্বিতীয়টা হল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও তার প্রস্তুতি। আগামী বছর জুন মাসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মহাযজ্ঞ। তার আগে ভারত হাতে পাচ্ছে মোট আটটা ওয়ান ডে! অর্থাৎ, যোগ্য প্রস্তুতির সুযোগ খুবই সংক্ষিপ্ত।

ভারত অধিনায়ক নিজেও সেটা নিয়ে কিছুটা চিন্তায়। আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা এবং মহম্মদ শামিকে বিশ্রাম দিয়েছে জাতীয় নির্বাচক কমিটি। ধোনির মনে হচ্ছে, কাজটা ঠিকই হয়েছে। এতে অন্যান্যদের দেখে নেওয়া যাবে, যা সমান জরুরি। ‘‘আমরা তো এই মরসুমে খেলব মাত্র আটটা ওয়ান ডে। যা পরীক্ষা করার এর মধ্যেই করে ফেলতে হবে।’’ সঙ্গে মৃদু স্বভাবসিদ্ধ খোঁচা, ‘‘আসলে লোকজন আর মিডিয়া ভারতীয় টিমকে শুধু জিততে দেখতে চায়। বিরাট আর রাহানেকে যদি বিশ্রাম দেওয়া হয়, প্রশ্ন উঠে যাবে, ব্যাপারটা কী হচ্ছে আসলে? কখনও কখনও তাই কাজটা খুব কঠিন হয়ে যায়। আর তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বাকিদের দেখে নেওয়ার সুযোগ পেলে, সেটা করে নেওয়া উচিত। সোজাসুজি বলছি, ভারতীয় টিম যেমন জেতা ছাড়া আর কিছু ভাবে না, ঠিক তেমন চায় তার প্রসেসটা ঠিক থাকুক।’’

ভারত অধিনায়ক নিজেও শোনা গেল, খাটাখাটনির পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছেন। টেস্ট এখন আর খেলেন না ধোনি। শুধু টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে। এ দিন শোনা গেল, নেটে দু’বার ঢুকতে দেখা গিয়েছে ধোনিকে। একবার টিমের সেশন চলার সময়, পরের বার সেশন শেষের পর। একা। পরে ধোনি বলে দেন, ব্যাটিং অর্ডারে একটু উপরে যাওয়ার ইচ্ছে তাঁর আছে। তবে তাই বলে চার নম্বরে নয়।

এক কথায়, ভারতের শৈলশহরে ক্রিকেট-যুদ্ধ থেকে নতুন মোড়কে নিজেকে পেশ করতে চাইছেন ধোনি। অধিনায়কের রাজবস্ত্র সরিয়ে রেখে, টিমের অভিভাবক হিসেবে নিজেকে আমদানি করে। কোহালির প্রভাব নিঃশর্ত মেনে নিয়ে। দ্রষ্টব্য একটাই। বাইশ গজের ‘নতুন’ ধোনি তাঁর বায়োপিকের মতোই সুপারহিট হয় কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE