ফেল্পস
লন্ডন অলিম্পিক্স শেষে অবসর ঘোষণা করেছিলেন তিনি। অবসর কাটছিল ভিডিও গেমস খেলে, গল্ফ কোর্সে সময় কাটিয়ে, বার্গার খেয়ে, স্টেডিয়ামে বসে আমেরিকান ফুটবল দেখে। তাঁর অবসর জীবন ভালই কাটছিল। শুধু একটা কাঁটাই খচখচ করছিল। একটা জিনিসই ভুলতে পারছিলেন না। লন্ডন অলিম্পিক্সে নিজের স্পেশ্যাল ইভেন্ট ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে সোনা হাতছাড়া হওয়ার রাত। প্রতিদিনই ভাবতেন, যে ইভেন্টে তিনি অপ্রতিরোধ্য, কী করে তাঁকে টেক্কা দিয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাঁতারু লে ক্লস। আঠারো সোনার পদক জিতেও চ্যাম্পিয়নের অহংকে যা আঘাত করত।
সেই অহংই তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনল অলিম্পিক্সে। সেই অহং থেকেই আবার তিনি প্রমাণ করে দিলেন, সাঁতারের পুলে একচ্ছত্র সম্রাট কে। শুধু তাই নয়, এই প্রশ্নও তুলে দিলেন, এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদের নাম মাইকেল ফেল্পস কি না।
আর একটা অলিম্পিক্স। আর একটা বাটারফ্লাই। আরও একবার শরীরটা ঝাঁপিয়ে পড়ল পুলে। বাকিটা ইতিহাস। আবার তাঁর গলায় ঝুলছে সোনার পদক। গ্যালারি জুড়ে চলছে তাঁর নামের চিৎকার। পোডিয়ামে বাজছে তাঁর দেশের জাতীয় সঙ্গীত। অলিম্পিক্স গ্রহে ফের তাঁকেই বলা হচ্ছে সর্বকালের সেরা।
আথেন্স-বেজিং-লন্ডন যা দেখেছিল, বুধবার ভোরের রিও সেটাই দেখল। চার বছর আগে লে ক্লসের বিরুদ্ধে হারের যন্ত্রণা তখন ইতিহাস। বাকি প্রতিযোগীরা যতই তাঁর থেকে ছোট হন না কেন, প্রসঙ্গ যখন বাটারফ্লাইয়ের তখন তিনিই অবিসংবাদিত রাজা। মাত্র ০.০৪ সেকেন্ডের ব্যবধানে জাপানের মাসাতা সাকাইকে হারিয়ে আবার বাটারফ্লাইয়ের সিংহাসনে বসলেন ফেল্পস। তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লে ক্লস হলেন চতুর্থ। তার এক ঘণ্টার মধ্যে ৪x২০০ মিটার রিলেতে ২১ নম্বর সোনাও চলে আসে ফেল্পসের ক্যাবিনেটে।
২১ নম্বর সোনা জিতে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাতার-সম্রাট। রিওর অ্যাকোয়াটিক সেন্টারে দাঁড়িয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‘এতগুলো সোনার পদক। ভাবাই যায় না। পাগল পাগল লাগছে।’’ তবে অলিম্পিক্সে নামার সময় থেকেই বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘এই রেসটা হারার কোনও প্রশ্নই ছিল না। পদক নিতে এসে জানতে পারি মাত্র ০.০৪ সেকেন্ডে আমি জিতেছি। কিন্তু বাটারফ্লাইতে আবার নিজের নাম এক নম্বরে দেখতে পারার থেকে ভাল অনুভূতি আর কী হতে পারে,’’ বলছেন ফেল্পস।
ফেল্পসের পাঁচ অলিম্পিক্সে পদক সংখ্যা দাঁড়াল ২৫। সোনা ২১। যা দেখার পর ১১টা অলিম্পিক্স পদকজয়ী কিংবদন্তি সাতারু মার্ক স্পিৎজ বলছেন, ‘‘ফেল্পস সর্বকালের সেরা সুইমার এতে কোনও সন্দেহ নেই। ওকে অনেকে সেরা অলিম্পিয়ানও বলছে। তবে আমি বলব, ও সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট।’’ স্পিৎজের এই মন্তব্য চ্যালেঞ্জ করার মতো গলা এখনও ওঠেনি। পরিসংখ্যান বলছে, ফেল্পসের পরে যাঁরা আছেন তাঁরাও সোনার নিরিখে অনেক পিছনে পড়ে। যেমন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জিমন্যাস্ট লারিসা ল্যাতিনিনা (৯)। ফিনল্যান্ডের অ্যাথলিট পাভো নুর্মি (৯)। যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিট কার্ল লুইস (৯)।
বুধবার ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় ট্রেন্ডিং টপিক ছিলেন ফেল্পস। যাঁর প্রশংসায় প্রতি মিনিটেই একটা করে টুইট করতে থাকেন ভক্তরা। কেউ লেখেন, ফেল্পস অন্য গ্রহের। কেউ আবার লেখেন, ফেল্পস তো সুপারম্যান।
মজার সমস্ত পরিসংখ্যানও নেটে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন ফেল্পস যদি কোনও দেশ হতেন তা হলে সর্বোচ্চ সোনা জেতার তালিকায় থাকতেন ৩৯ নম্বরে। ১৭৪-টা দেশের থেকে বেশি সোনা জিতেছেন ফেল্পস। অলিম্পিক্সে ভারতের এখন পর্যন্ত মোট পদকসংখ্যা ২৫। যার থেকে মাত্র এক পদক দূরে ফেল্পস। ফেল্পস যদি একটা দেশের নাম হত, পদক তালিকায় তিনি থাকতেন ন’নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্রের কামব্যাক কিঙ্গসদের মধ্যে মাইকেল জর্ডন, ম্যাজিক জনসনের মতো নাম ঘুরপাক খায়। ফেল্পসের সামনে এই অলিম্পিক্সে এখনও দু’টো সোনা জেতার সুযোগ আছে। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নন সম্রাট। রিওর পরেও যিনি চালিয়ে যেতে চান তাঁর রূপকথার দৌড়। এ বার কারণ বদলা নয়। তাঁর ছোট্ট ছেলে বুমার। ফেল্পসের ছেলে গ্যালারিতে থাকলেও এখনও বোঝার বয়স হয়নি সুইমিং কী? তাই তো ফেল্পস বলছেন, ‘‘আপনারা হয়তো আমায় মারবেন, কিন্তু আমি চাই বুমারও দেখুক বাবার রেস। তাই জানি না, হয়তো পরের অলিম্পিক্সেও আমাকে দেখতে পারেন আপনারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy