Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিজেকে সোনায় মুড়ে বিদায় চান ‘মৎস্যপুত্র’

সাঁতার কাটেন মাছের মতো। শরীরের গড়ন মাছের মতো। বাল্টিমোরের বাড়িতে থাকার সময় ডাঙার চেয়ে জলে সময় কাটে বেশি। যত বেশি জল খান তত কম কথা বলে থাকেন। ইনি মাইকেল ফেল্পস। একশো কুড়ি বছরের আধুনিক অলিম্পিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্ণময়, সবচেয়ে সফল ক্রীড়াবিদ।

ঘুমন্ত ছেলেকে নিয়ে ফেল্পস। ছবি টুইটার

ঘুমন্ত ছেলেকে নিয়ে ফেল্পস। ছবি টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৫৮
Share: Save:

সাঁতার কাটেন মাছের মতো। শরীরের গড়ন মাছের মতো। বাল্টিমোরের বাড়িতে থাকার সময় ডাঙার চেয়ে জলে সময় কাটে বেশি। যত বেশি জল খান তত কম কথা বলে থাকেন।

ইনি মাইকেল ফেল্পস। একশো কুড়ি বছরের আধুনিক অলিম্পিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্ণময়, সবচেয়ে সফল ক্রীড়াবিদ।

রিও এই ছয় ফুট চার মার্কিন সাঁতারুর পাঁচ নম্বর অলিম্পিক্স। পনেরো বছর বয়সে প্রথম অলিম্পিক্স পুল-এ নামা। এখন একত্রিশ। ট্রফি ক্যাবিনেটে ১৮ সোনা-সহ ২২টা অলিম্পিক্স পদক। তাঁর ২৯টা বিশ্বরেকর্ডের শেষটা দীর্ঘ সাত বছর আগে ২০০৯-এ এলেও নিজের শেষ গেমসে নিজেকে ‘পুনরাবিষ্কার’-এ নামছেন ফেল্পস। রিওতে পা রেখে এটাই তাঁর শুরুতে ব্যবহৃত শব্দ।

ফেল্পস কী? কেমন? নিজেই বলেছেন, ‘‘সেটা আমিই ঠিক জানি না পৃথিবী কখনও দেখেছে কি না যে, আমি লোকটা কে? আমাকে তো সবাই সাঁতারু হিসেবেই দেখে আসছে। কখনও একজন মানুষ হিসেবে দেখেনি বোধহয়। সুইমিং পুলে আমাকে যে অর্ধেকটাই দেখা যায়। আমি বাকি অর্ধেকটা তো সব সময় জলের ভেতর!’’

আট বছর আগে বেজিং অলিম্পিক্সে টানা আট রাতে আটটা সোনা জিতেছিলেন ফেল্পস। আবার চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক্স ফেল্পসের কাছে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। কেন? ‘মা-ত্র’ চারটে সোনা জিতেছিলেন যে! সেই অতুলনীয় সাঁতারু নিজেকে ‘পুনরাবিষ্কার’-এ রিওতে মাত্র তিনটে ইভেন্টে নামবেন বলে ঠিক করেছেন। রিলে ধরলে চারটে। ‘‘আসলে চার বছর আগে লন্ডন গেমসের জন্য আমার কোনও নির্দিষ্ট ট্রেনিং শিডিউল ছিল না। নিজেকে নিজেই ডুবিয়েছিলাম। নিজেই যেন জানতাম না ঠিক কী করতে চাই, কী করতে চাইছি! এ বার তাই বেছে বেছে ইভেন্টে নামব আর সেগুলোয় সেরা হয়ে তবেই পুল থেকে উঠব।’’

রিওর শুক্র-সন্ধেয় ২০১৬ অলিম্পিক্স গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মার্চপাস্টে বিশাল আমেরিকা দলের জাতীয় পতাকা বহন কে করবেন তা এখনও চূড়ান্ত করেনি মার্কিন অলিম্পিক্স কমিটি। একটা শর্ট লিস্ট হয়ে আছে মাত্র। যে তালিকায় অবশ্যই আছেন ফেল্পস। এবং তাঁর শেষ অলিম্পিক্স বলে ফেল্পসের কপালই শেষমেশ খুলতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। কিন্তু তার আগেই ফেল্পসের শেষ অলিম্পিক্স নিয়ে প্রবল হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে কর্পোরেট দুনিয়ায়।

তিনি রিও রওনার দিনই ‘ফেল্পসমোজি’ নামের নতুন অ্যাপ বাজারে চালু হয়েছে। ইমোজির সংখ্যা একশো। ৯৯ ডলার খরচ করলেই ডাউনলোড করা যাচ্ছে। যা করার ঢল নেমেছে আমেরিকা ছাড়িয়ে দুনিয়ার সর্বত্র। ফেল্পস বনাম রিও-র তুলনা চলছে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম হিলারি ক্লিটন লড়াইয়ের সঙ্গে। এমনকী ইন্সটাগ্রামে সম্প্রতি দশ বার ‘সবচেয়ে মিষ্টি বাবা’ হয়েছেন ফেল্পস। গত মে মাসে যে দিন ফেল্পসের বাগদত্তা নিকোল জনসন এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সেই ইস্তক।

নাক উঁচু ইংরেজ মিডিয়া পর্যন্ত জন টেরি-কে বলতে শুরু করে দিয়েছে ‘চেলসির ফেল্পস’। দু’জনেই তিরিশোর্ধ্ব। বিখ্যাত ইংল্যান্ড ফুটবলারের জেতা ট্রফি ১৯। যে সংখ্যাটা ফেল্পসের ১৮ অলিম্পিক্স সোনার গায়ে গায়ে। টেরির মতোই বিতর্কিত ফেল্পসও।

গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রামিস আনিস নামে এক সিরিয়ান উদ্বাস্তু সাঁতারুর সঙ্গে সেলফি তুলতে অস্বীকার করেছিলেন ফেল্পস। আনিসের কোচের অভিযোগ, ‘‘চোদ্দো বছর বয়স থেকে ফেল্পসের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ খুঁজছে উদ্বাস্তু ছেলেটা। এখন ওর বয়স পঁচিশ। দু’টো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পুল-এ নেমেছে। রিওতেও সিরিয়ার সাঁতার টিমে আছে। এ বার ফেল্পস নিশ্চয়ই আনিসকে কষ্ট দেবে না।’’

সেটা হয়তো সময় বলবে। তবে রিওতে ফেল্পস নিশ্চিত ‘কষ্ট’ দিতে চাইবেন দক্ষিণ আফ্রিকার চাঁদ লে ক্লস, হাঙ্গেরির লাজলো সে, জাপানের কোসুকে হাজিনো আর সতীর্থ মার্কিন রায়ান লোচে-কে। এঁরা কারা? এঁরা রিওর পুল-এ একশো মিটার বাটারফ্লাই, দুশো মিটার ব্যক্তিগত মেডলি, দুশো মিটার বাটারফ্লাইয়ে সোনার দাবিদার।

জীবনের শেষ অলিম্পিক্সে মার্কিন ‘মৎস্যপুত্র’ যে ওই তিনটে ইভেন্টেই নামছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Michael Phelps Rio Rio Olympics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE