বিপর্যয়: তিন বারের ব্যালন ডি’ওর জয়ী এখন পুলিশি হাজতে। ফাইল চিত্র
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তিন বারের ব্যালন ডি’ওর জয়ী। উয়েফার সর্বেসর্বা ছিলেন। প্রায় নিশ্চিত ছিল, শেপ ব্লাটারের পরে তাঁর ফিফা প্রেসিডেন্ট পদে বসা। এ হেন কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি এখন পুলিশের জিম্মায়। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। প্রাক্তন ফরাসি অধিনায়কের আইনজীবী অবশ্য বলছেন, এটা ঠিক গ্রেফতার নয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা। আর জিজ্ঞাসাবাদটা আসলে কিছু তথ্য যাচাই করে নিতে।
অনেক দিন ধরে প্লাতিনির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কাতারকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের দায়িত্ব দিতে ব্লাটার, প্লাতিনি-সহ ফুটবলের বড় বড় মাথারা নাকি প্রচুর টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে, প্লাতিনি ২০১৫ সাল থেকে চার বছরের জন্য নির্বাসনে। ব্লাটারের মতো। নির্বাসনের সময় প্রাক্তন ফরাসি তারকা উয়েফার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অভিযোগ কাতারকে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিতে প্লাতিনি নিজেই প্রায় বিশাল অঙ্কের টাকা উৎকোচ নেন। হালফিলে প্লাতিনি খুব চেষ্টা করছিলেন সম্পূর্ণ অভিযোগমুক্ত হয়ে ফুটবল প্রশাসনে ফেরার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আলাদা করে তদন্ত করছিল ফরাসি অর্থ দফতর। যার ভিত্তিতে গ্রেফতার এবং প্লাতিনিকে সম্পূর্ণ হেফাজতে নেওয়া।
কাতার বিশ্বকাপের দায়িত্ব পেতে ডলার ছড়িয়ে ভোট কিনেছে তা প্রথম দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের এক স্বাধীন তদন্তকারী মাইকেল গার্সিয়া। যা নিয়ে বিশ্বফুটবলের নিয়ামক সংস্থায় ঝড় ওঠে। জড়িয়ে গিয়েছিল ব্লাটার, প্লাতিনির মতো বড় বড় নাম। মারাত্মক গরমের দেশ কাতার। ফুটবল ঐতিহ্য বিরাট কিছু নয়। বারবার সে দেশের বিরুদ্ধে ওঠে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। সে দেশে নিষিদ্ধ সমকাম। শ্রমিকদের উপরেও নাকি অত্যাচার হয়। এত কিছু অভিযোগের পরেও কাতারকে দায়িত্ব দেওয়া মেনে নিতে পারেনি পশ্চিমী দেশগুলি এবং যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু প্লাতিনি কাতারকে সমর্থন করেন। এবং তাঁর পরিণতি যাই হোক, বিশ্বকাপ পশ্চিম এশিয়ার দেশে হচ্ছে। হচ্ছে, ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর কাতারের আটটি কেন্দ্রে।
প্লাতিনির গ্রেফতারের খবরে হতচকিত ফুটবল মহল। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা গ্যারি লিনেকার রীতিমতো ব্যথিত। তাঁর কথায়, ‘‘ও আমাদেরই মতো একজন। তাই এতটা খারাপ লাগেছে। আজ পর্যন্ত এই ঘটনায় যে যে’কজন অভিযুক্ত তাদের মধ্যে সবচেয়ে দুঃখজনক প্লাতিনির নাম দেখা। আমি ঠিক কতটা হতাশ বলে বোঝাতে পারব না।’’ পাশাপাশি প্লাতিনির আইনজীবী উইলিয়াম বুঁদো দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাঁর আরও দাবি তাঁকে আদৌ গ্রেফতার করা হয়নি। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের স্বার্থে আলোচনার জন্য ফ্রান্সের অর্থ দফরের অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঙ্গে এও জানিয়েছেন যে, প্লাতিনি তদন্তকারীদের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতাও করবেন।
ফ্রান্সের এক নামী সংবাদপত্র ল্য মুঁদের খবর অনুযায়ী, প্লাতিনিকে মূলত তখনকার ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজ়ির ডাকা মধ্যাহ্নভোজের একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যেখানে প্রাক্তন ফরাসি ফুটবল তারকা ছাড়াও ছিলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ তামিম বেন হামাদ আলি থানি। সেখানেই প্লাতিনি নাকি ২০২২ বিশ্বকাপের দাবিদার কাতারকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রসঙ্গত সে বার যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বকাপ আয়োজনের দাবিদার ছিল। বিচারবিভাগের খবর, শুধু প্লাতিনি নন, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সারকোজ়ির প্রতিনিধিদেরও। প্লাতিনির আত্মবিশ্বাসী আইনজীবীর বক্তব্য, ব্যাপারটাকে যতটা বড় করে দেখানো হচ্ছে মোটেই তেমন মারাত্মক কিছু নয়। একটা তদন্ত চলছে, তার স্বার্থে অনেক তথ্য তদন্তকারী দফতরের যাচাই করে নেওয়া দরকার। সেই কারণেই তিন বারের ব্যালন ডি’ওর জয়ী ফুটবলারকে ডাকা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সারকোজ়ির আইনজীবী অবশ্য এখনও বিযয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। সব কিছু দেখেশুনে গ্যারি লিনেকারদের মতো প্রাক্তনদের বক্তব্য, যা-ই ঘুটক, প্লাতিনির উচ্চতার একজনের এত বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা তাঁদের কাছে অবিশ্বাস্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy