Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাস গড়ে খেতাব ঘরে তুলল মিনার্ভা

দু’বছর আগে আত্মপ্রকাশ মিনার্ভার। গত বার অবনমনে পড়ে গিয়েছিল ব্যক্তিগত মালিকানার এই ক্লাব। কিন্তু  ফ্র্যাঞ্চাইজি দল প্রথম বছর অবনমনে পড়লে ছাড় পাবে, এই নিয়মে বেঁচে গিয়েছিল তারা। সেই মিনার্ভা-ই এ বার  পেল শিরোপা। চার্চিল ব্রাদার্সকে অবনমনে পাঠিয়ে।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৬
Share: Save:

এ যেন নব্বই মিনিটের হলিউড থ্রিলার।

যার পরতে পরতে নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, উত্তেজনা, দুঃখ, আফসোস, উচ্ছ্বাস, আনন্দের উপকরণ মিলেমিশে একাকার। আই লিগ তো বটেই, এ রকম রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি এবং পরিসমাপ্তি কখনও দেখেনি এ দেশের ফুটবল।

এবং সেই নজিরবিহীন ঘটনার মঞ্চে অ্যাকাডেমির মোড়কে বেড়ে ওঠা মিনার্ভা পঞ্জাব বৃহস্পতিবার নাম লিখিয়ে ফেলল ইতিহাসে। উত্তর ভারতের প্রথম দল হিসাবে আই লিগ পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন। এর আগে পঞ্জাবের আর একটি দল জেসিটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তবে তা ছিল জাতীয় লিগ। মজার ব্যাপার হল, চণ্ডীগড়ের যে ক্লাব এ দিন নজির গড়ল তাদের নিজেদেরই কোনও অতীত ইতিহাস নেই। দু’বছর আগে আত্মপ্রকাশ মিনার্ভার। গত বার অবনমনে পড়ে গিয়েছিল ব্যক্তিগত মালিকানার এই ক্লাব। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি দল প্রথম বছর অবনমনে পড়লে ছাড় পাবে, এই নিয়মে বেঁচে গিয়েছিল তারা। সেই মিনার্ভা-ই এ বার পেল শিরোপা। চার্চিল ব্রাদার্সকে অবনমনে পাঠিয়ে।

প্রথম বছর আই লিগ জিতে চমকে দিয়েছিল বেঙ্গালুরু। পাহাড়ের প্রথম দল হিসাবে গত বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইজল। সেই পরম্পরাই যেন বজায় রাখল মিনার্ভা। কোটি কোটি মানুষের আবেগের এবং ঐতিহ্যের ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে পিছনে ঠেলে দিয়ে এ দেশের ফুটবল-আকাশে ধ্রুবতারা হল চেঞ্চো গিলসেনদের টিম। যার কোচ খগেন সিংহ পঞ্চকুল্লা থেকে ফোনে বলে দিলেন, ‘‘আমার একার নয়, আমাদের সবার স্বপ্নপূরণের দিন আজ। স্মরণীয় মুহূর্ত। বড় ক্লাব হলেই সে চ্যাম্পিয়ন হবে, সেই মিথ ভেঙে দিতে পেরেছি।’’ সঙ্গে অ্যাকাডেমির কোচ থেকে হঠাৎ-ই সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়া মিনার্ভা কোচের গলায় ধরা পড়ে আবেগ। দাবি করলেন, ‘‘ক্লাবের কর্তা বা কর্মীদের বলেছিলাম গ্যালারিতে বসে অন্য দু’টো ম্যাচের খবর রাখতেই পারো। কিন্তু সেই খবর যেন রিজার্ভ বেঞ্চে বা ড্রেসিংরুমে না আসে। তাতে ফুটবলারদের ফোকাস নড়ে যেতে পারে। বিশ্বাস করুন, খেলার পর জেনেছি অন্য ম্যাচের ফল।’’ খগেন জানতেন, একমাত্র জিতলেই তাঁর দলকে অন্য কোনও ম্যাচের ফলের দিকে তাকাতে হবে না। সে দিকেই তাই পাখির চোখ রেখেছিল মিনার্ভা। ষোলো মিনিটের মধ্যেই উইলিয়াম ওপোকু তাঁকে অনেকটা নিশ্চিত করে দেন চার্চিল ব্রাদার্সের গোলে বল ঢুকিয়ে। কিন্তু বাকি টিমের কোচেরা কী করছিলেন নব্বই মিনিট?

নেরোকা কোচ গিফট রাইকান স্বীকার করলেন, ‘‘বিরতিতেই জেনে যাই মিনার্ভা জিতছে। তাই আমরাও জেতার জন্য ঝাঁপিয়েছিলাম। কারণ চার্চিল ব্রাদার্স যদি ১-১ করে দিত, আমরাই চ্যাম্পিয়ন হতাম।’’ বিধ্বস্ত খালিদ জামিল নিজে এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। তবে ক্লাব সূত্রের খবর, প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর লাল-হলুদ কোচ খোঁজ নিয়েছেন অন্য দুই ম্যাচে কী হচ্ছে। কালিকটে মোহনবাগান দিপান্দা ডিকার গোলে ১-০ এগিয়ে গিয়েছে শুনে নাকি রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে পাগলের মতো ছটফট করেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, বিরতিতে ও খেলা শেষে ফল ১-১ হওয়ার পর কালিকটের ড্রেসিংরুমে ফিরে মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী, শিল্টন পাল-রাও খোঁজ নিয়েছেন অন্য দুটি ম্যাচের।

আসলে শুধু যুবভারতীতেই নয়, এ দিন বিকেলে দেশের তিনটি স্টেডিয়ামেই একসঙ্গে নজর ছিল খেতাবের লড়াইতে থাকা চার দলের সমর্থক, কর্তা, কোচ ও ফুটবলারদের। একটা ম্যাচ তাঁরা দেখছিলেন চোখের সামনে। অন্য দুটি ম্যাচের ফল জানার মাধ্যম ছিল মোবাইল, কম্পিউটারের ইন্টারনেট।

লিগ টেবলের সহজ অঙ্ক ছিল, লিগ শীর্ষে থাকা মিনার্ভা জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। রঞ্জিৎ বাজাজের টিমের পাঁচ জন অ্যাকাডেমির ফুটবলার আর কম দামের বিদেশিরা এ দিন সূর্যাস্তের মুখে পঞ্চকুল্লায় রামধনু হয়েছেন। আর অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে ময়দানের লাল-হলুদ তাঁবু, গঙ্গাপাড়ের একশো সাতাশ বছরের ক্লাব। দেড় দশক হয়ে গেল আই লিগ নেই ইস্টবেঙ্গলে। শেষ চার বছরে সবথেকে খারাপ ফল মোহনবাগানের। রানার্স থেকে তাদের তিন নম্বরে ঠেলে দিয়েছে মণিপুরের আর এক নতুন দল নেরোকা।

বাংলায় বসন্ত এলেও কলকাতা ময়দানে এ বার বসন্ত নেই। পঞ্চকুল্লার একটা সেনা ব্যারাকের আশেপাশে পড়েছে সব আলো। নতুনের আবাহনে ফের গা ভাসানো ভারতীয় ফুটবলের মঞ্চে এ বার হাজির মিনার্ভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE