Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মন্থর রক্ষণেই লিগ হাতছাড়া ইস্টবেঙ্গলের

খেলা শেষে যুবভারতীর প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল লাল-হলুদের টিম বাস। যেখানে পুরনো স্পনসরের লোগো জ্বলজ্বল করছিল। প্রতীকী এই ছবিটাই বুঝিয়ে দেয় বর্তমান ইস্টবেঙ্গলে পেশাদারিত্বের হাল। 

লিগ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ। হতাশ ইস্টবেঙ্গলের আমনা ও আকোস্তা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

লিগ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ। হতাশ ইস্টবেঙ্গলের আমনা ও আকোস্তা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

খেলা শেষে যুবভারতীর প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল লাল-হলুদের টিম বাস। যেখানে পুরনো স্পনসরের লোগো জ্বলজ্বল করছিল। প্রতীকী এই ছবিটাই বুঝিয়ে দেয় বর্তমান ইস্টবেঙ্গলে পেশাদারিত্বের হাল।

মাস আড়াই আগে ধুমধাম করে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছিল ইস্টবেঙ্গলে। যা নতুন আশা জাগিয়েছিল লাল-হলুদ শিবিরে। কিন্তু ক্লাবের এই সুদিনেই যে গত আট বছরের জেতা কলকাতা লিগে স্বপ্নভঙ্গ হবে তা কে জানতেন?

টানা তিন ম্যাচ ধরেই আমনাদের খেলা দেখতে দলবল নিয়ে মাঠে থাকছেন ক্লাবের নয়া স্পেনীয় কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস। ছিয়াশি মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা ম্যাচ ১-২ হেরে ফেরার পরে তাঁর উদ্দেশে উড়ে এল গ্যালারিতে হাজির সমর্থকদের বিষোদগার। এদেরই একজন স্বরূপনগরের প্রতীক দত্ত। মহমেডানের কাছে হেরে লিগ হাতছাড়া হওয়ার পরে তাঁর বিলাপ, ‘‘আমাদের যন্ত্রণা কি বিনিয়োগকারী সংস্থার বাবুরা বুঝতে পারছেন? দরকার ছিল বিদেশি স্ট্রাইকার। বদলে রক্ষণে এলেন মন্থর এক বিশ্বকাপার! যখনই সে খেলতে নামে, দু’গোল খেয়ে তবেই থামে। এ বার লিগে রানার্সও হয়তো হব না।’’

আলেসান্দ্রোর সঙ্গে এ দিন ছিলেন লাল-হলুদের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার। কলকাতা লিগ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দিনে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আই লিগে এ রকম হবে না।’’ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিতে মাঠ ফেরত সমর্থকরা শান্ত হচ্ছেন কোথায়?

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

ইস্টবেঙ্গল • মহমেডান

দুর্বল মহমেডানের বিরুদ্ধে শুরুতেই জনি আকোস্তার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সুভাষ ভৌমিকের দল। লেফ্ট ব্যাক ফানাইয়ের কর্নারে হেড করেছিলেন লালডানমাউইয়া। যা মহমেডান গোলকিপার অরূপ দেবনাথের হাত থেকে বেরিয়ে এলে তা গোলে ঠেলে দেন জনি। কিন্তু তার পরেই গোটা ম্যাচ ফ্যাকাশে হয়ে রইল লাল-হলুদের পারফরম্যান্স। ব্যতিক্রম মহম্মদ আল আমনা। তিনি খেললেই সচল হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল।

রঘু নন্দী ময়দানের পোড় খাওয়া কোচ। তিনি ধরে ফেলেছিলেন, বিপক্ষের ছন্দহীনতা। তাই প্রথমার্ধের শেষ দিকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে সত্যম শর্মাকে তুলে তিনি মাঝমাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন উইঙ্গার প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীকে। লক্ষ্য ছিল, মাঝমাঠে বল ধরে গতিতে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে পরাস্ত করা। সঙ্গে লাল-হলুদের দুই সাইডব্যাককে চেপে ধরা তাঁর দুই উইঙ্গার দিয়ে। সেই চালে তিনি সফল। দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠে কাশিম, কমলপ্রীতরা ভুল পাস করছিলেন। সাইডব্যাক ফানাই আক্রমণ ও রক্ষণ দুই ভূমিকাতেই ব্যর্থ। জনি ও মেহতাবের মাঝে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল। সেই জায়গাকে নিশানা করেই লাল-হলুদ সিঁদুরের টিপ পরে আসা রঘু নামিয়ে দিয়েছিলেন ঘানা থেকে আসা ফিলিপ আজাকে। সেই জায়গা দিয়েই তাঁর একক প্রচেষ্টায় দুই গোল।

সাতাশি মিনিটে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠ থেকে মন্থর ব্যাকপাস করেছিলেন ডানমাউইয়া। যার কাছে পৌঁছতে দেরি করেন জনি। ট্যাকলও করলেন না। সেই সুযোগেই আকোস্তা ও মেহতাব সিংহ ও ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার রক্ষিতকে কাটিয়ে ডান পায়ের বাইরের দিক দিয়ে প্রথম গোল।

এর কিছু পরেই চতুর্থ রেফারি জানিয়ে দিলেন নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ। সংযুক্ত সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছে আরও ছয় মিনিট। কিন্তু তার পরেও খেলা হল এগারো মিনিট। এই সময়েই ইস্টবেঙ্গল রাইটব্যাক সামাদের পা থেকে বল কেড়ে ফের মেহতাব ও পরে রক্ষিতকে কাটিয়ে দ্বিতীয় গোল আজার। বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি বলে গেলেন, ‘‘ওদের রক্ষণটা খুব মন্থর। সেটা দেখিয়ে দিলাম।’’

ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে উঠে এল অতিরিক্ত ১১ মিনিট খেলানোর প্রসঙ্গ। যা নিয়ে ক্ষোভ নেই ইস্টবেঙ্গলে। কোচ বাস্তব রায় বলে গেলেন, ‘‘সংযুক্ত সময়ে খেলোয়াড় চোট পেয়েছিল। তাই রেফারি নষ্ট হওয়া সময় যোগ করেছেন।’’ আর নাটকীয় ম্যাচ জিতে মহমেডান টিডি রঘু বলছেন, ‘‘ট্রেভর মর্গ্যান কোচ থাকার সময়ে এরিয়ানের বাচ্চাদের নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছি। কিন্তু এই জয়টা স্মরণীয়। বিপক্ষে সুভাষ ভৌমিক, বিশ্বকাপার ডিফেন্ডার...।’’

কেন লেফ্ট ব্যাকে এ দিন চুলোভার বদলে ফানাই? কেন জিততেই হবে এ রকম পরিস্থিতিতে তিরিশ মিনিটের জন্য ইয়ামি? কেন জনি ম্যাচফিট নন? উত্তর নেই কোচ বাস্তবের কাছে। তিনি আমতা আমতা করেন। শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মতামত উপেক্ষা করেই দলে এই পরিবর্তনের নির্দেশ রোজ খেলা দেখতে আসা স্পেনীয় কোচ আলেসান্দ্রোর। যা ফোকাস নষ্ট করেছে গোটা দলের। তা হলে বাস্তব কোচের আসনে কেন? লিগ হারানোর দিনে নয়া পেশাদারিত্বও প্রশ্ন তুলছে লাল-হলুদে।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত ডাগার, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, জনি আকোস্তা, লালরোজামা ফানাই, কাশিম আইদারা, প্রকাশ সরকার (কমলপ্রীত সিংহ), লাল়ডানমাউইয়া রালতে (বালি গগনদীপ), মহম্মদ আল আমনা, ইয়ামি লংভা (সুরাবুদ্দিন মল্লিক), জবি জাস্টিন।

মহমেডান: অরূপ দেবনাথ, তন্ময় ঘোষ, ল্যান্সিন ত্যুরে, প্রসেনজিৎ পাল, কামরান ফারুক, লাল্টু হেমব্রম, রাহুল কেপি (সুমিত দাস), সত্যম শর্মা (প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী), বাজি আর্মান্দ, দীপেন্দু দোয়ারি, প্রিন্সউইল এমেকা (ফিলিপ আজা)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Mohammedan Sporting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE