Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে শ্রীনি জানিয়ে দিলেন, বার্ষিক সভায় তিনি নেই

এত দিন খবরটা ছড়াচ্ছিল বেসরকারি ভাবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা বলছিলেন, তাঁর পক্ষে নির্বাচন লড়া আর সম্ভব নয়। তাঁর শিবির থেকেও বলা হচ্ছিল, প্ল্যান ‘বি’-র দিকে এগোচ্ছেন ‘স্যর’। প্রেসিডেন্ট পদে নিজে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছেড়ে। শুক্রবার খবরটায় সিলমোহর পড়ে গেল। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জানিয়ে দিলেন, ২ মার্চের বোর্ড নির্বাচন তিনি লড়বেন না। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে চেয়ার করার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাও চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে। বলে দিলেন, বোর্ডের কোনও প্রশাসনিক ব্যাপারে তিনি ঢুকবেন না তত দিন, যত দিন না লোঢা কমিশন তাঁকে ক্লিনচিট দেয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

এত দিন খবরটা ছড়াচ্ছিল বেসরকারি ভাবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা বলছিলেন, তাঁর পক্ষে নির্বাচন লড়া আর সম্ভব নয়। তাঁর শিবির থেকেও বলা হচ্ছিল, প্ল্যান ‘বি’-র দিকে এগোচ্ছেন ‘স্যর’। প্রেসিডেন্ট পদে নিজে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছেড়ে।

শুক্রবার খবরটায় সিলমোহর পড়ে গেল। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জানিয়ে দিলেন, ২ মার্চের বোর্ড নির্বাচন তিনি লড়বেন না। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে চেয়ার করার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাও চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে। বলে দিলেন, বোর্ডের কোনও প্রশাসনিক ব্যাপারে তিনি ঢুকবেন না তত দিন, যত দিন না লোঢা কমিশন তাঁকে ক্লিনচিট দেয়।

যার পর সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলে দিল, শ্রীনির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা আর টানা হবে না। কিন্তু নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন— তিনি কোনও ভাবে ২ মার্চের বোর্ড বৈঠকে ঢুকতে পারবেন না। কোনও আলোচনায় থাকতে পারবেন না। যদি নির্বাচন হয়, তা হলে তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার হয়ে স্রেফ ভোটটা দিয়ে আসতে পারবেন!

৮ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক কোন যুক্তিতে শ্রীনি চেয়ার করেছিলেন, তার জবাবদিহি চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ দিন যার শুনানি ছিল। বিচারপতি খলিফুল্লাহ্ এবং টিএস ঠাকুরের ডিভিশন বেঞ্চ রীতিমতো অগ্নিশর্মা হয়ে পড়ে রায় বেরিয়ে যাওয়ার পরেও শ্রীনির ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বোর্ড মিটিং চেয়ার করতে বসে পড়া নিয়ে। শুক্রবার আদালতে শ্রীনির আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রথমে বলে যান যে, শ্রীনি ২ মার্চের বোর্ড বৈঠক চেয়ার করবেন না। কিন্তু বিচারপতি টিএস ঠাকুর তাতে মোটেও সন্তুষ্ট না হয়ে শ্রীনির আইনজীবীকে পাল্টা জিজ্ঞেস করেন, “কিন্তু উনি ৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠক কেন চেয়ার করলেন, সেটা বলুন? আপনার তো সেটা ব্যাখ্যা করার কথা ছিল।” ঠাকুর জানতে চান তা হলে কি ধরে নিতে হবে শ্রীনি মিটিংটা চেয়ার করেছিলেন ভুল বোঝাবুঝিতে?

আদালতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, উত্তরে আর কোনও তর্কের রাস্তায় যাননি শ্রীনির আইনজীবী। বরং নিঃশর্ত ক্ষমা চান শ্রীনির হয়ে। বলে দেন, “আমার শুধু এটাই বলার আছে যে আমি দুঃখিত। ব্যস্।” যে উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হয় ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিরা বলে দেন, আমরা ঠিক এই উত্তরটাই শুনতে চেয়েছিলাম। আদালত এখন ধরে নেবে যে, শ্রীনি ইচ্ছাকৃত ব্যাপারটা ঘটাননি। আর শ্রীনিকেও মানতে হবে যে, ওঁর এটা করা কোনও ভাবেই উচিত ছিল না।

বিরোধীপক্ষের তরফে অবশ্য এই ব্যাপারটাকে আরও টানার চেষ্টা করা হয়েছিল। আদিত্য বর্মার পক্ষ থেকে আরও দু’টো আবেদন পেশ করা হয়েছিল। এক, বোর্ড নির্বাচন চেন্নাই থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে মুম্বইয়ে। ভারতীয় বোর্ডের হেড কোয়ার্টারে। দুই, লোঢা কমিশনের সামনে নির্বাচন করতে হবে। যাতে তাতে স্বচ্ছতা থাকে।

কিন্তু আদালত দু’টো প্রস্তাবের একটাতেও সম্মতি দেয়নি। বিরোধীপক্ষের আইনজীবী নলিনী চিদম্বরম বলতে থাকেন, শ্রীনি ক্ষমা চাইলেই সব মিটে যায় না। ক্ষমা চেয়েছেন তিনি মিটিং চেয়ার করে তাতে অংশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু বৈঠকে শ্রীনির যাওয়াটাই তো জলজ্যান্ত আদালত অবমাননা! আরও বলা হয় শ্রীনির এর পরেও ২ মার্চের বোর্ড বৈঠকে যাবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তিনি ভোট দিতে যেতে পারেন মানে তো তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওখানে অংশও নিতে পারেন। যেটা আদালতের রায়ের বিরোধী। বেঞ্চ তাতে বলে দেয়, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ শ্রীনি নিজে হলফনামা পেশ করে বলেছেন যে, বোর্ডের কোনও ব্যাপারে তিনি আর থাকবেন না। দ্বিতীয়ত, ভোটাভুটি হলে শ্রীনি মোটেও তামিলনাড়ু সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেখানে যাবেন না। যাবেন, তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে, ভোট দিতে। বিচারপতি খলিফুল্লাহ বিরোধী আইনজীবীকে বলেও দেন, আমরা টিএনসিএ-র অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। কেন আপনারা এটা নিয়ে হইচই করছেন?

বিরোধীপক্ষের তরফ থেকে পরে দাবি করা হল, এটা পরিষ্কার তাদের জয়। নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা বললেন, “শ্রীনিকে শুধু বোর্ড থেকে নয়, আজ থেকে তো ওকে তামিলনাড়ু ক্রিকেট থেকেও এক রকম বার করে দিল সুপ্রিম কোর্ট!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bcci srini unconditional apology srinivasan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE