Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুবাইকে উদাহরণ লায়নের, কাজ শেষ করতে চায় ভারত

দু’মাস আগে দুবাইয়ে পাকিস্তান তাদের সামনে ৪৬২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। হাতে ছিল দেড় দিন মতো সময়। সেখান থেকে ইয়াসির শাহকে খেলে দিয়ে অভাবনীয় ভাবে টেস্ট বাঁচিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া

 অস্ত্র: অস্ট্রেলিয়ার ত্রাস হয়ে ওঠার পথে অশ্বিন। অ্যাডিলেডে। এএফপি

অস্ত্র: অস্ট্রেলিয়ার ত্রাস হয়ে ওঠার পথে অশ্বিন। অ্যাডিলেডে। এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

ভারতের যদি প্রার্থনা হয় গল যেন না ফেরে, অস্ট্রেলিয়া চায় দুবাই ফিরুক।

দু’মাস আগে দুবাইয়ে পাকিস্তান তাদের সামনে ৪৬২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। হাতে ছিল দেড় দিন মতো সময়। সেখান থেকে ইয়াসির শাহকে খেলে দিয়ে অভাবনীয় ভাবে টেস্ট বাঁচিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। রবিবার নেথান লায়ন এসে সাংবাদিকের সামনে দুবাই টেস্টের কথা বার বার বলে গেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নেওয়া অফস্পিনার বললেন, ‘‘আমাদের ড্রেসিংরুমে বিশ্বাস এখনও হারিয়ে যায়নি। বরং এক্ষুনি আমরা সবাই বলাবলি করেছি যে, দুবাইয়ে যদি আমরা পেরে থাকি তা হলে অ্যাডিলেডে পারব না কেন?’’

দুবাইয়ে পাকিস্তান জেতার মতো অবস্থা রাখেনি অস্ট্রেলিয়ার সামনে। হয় হারো, নয়তো ড্র। এখানে ফলাফল হচ্ছেই বলা যায়। কারণ শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ২১৯ রান। ভারতের প্রয়োজন ছয় উইকেট। লায়ন সেটা মাথায় রেখে বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা এই টেস্ট এখনও জিততে পারি। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে। প্রথম বলটা জিততে হবে, তার পর প্রথম ওভারটা, তার পর প্রথম ঘণ্টাটা। একটা-একটা করে হার্ডল পেরোতে হবে।’’

দুবাইয়ের সেই টেস্ট বাঁচানোর ব্যাপারে যাঁরা প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের এক জন আউট হয়ে গিয়েছেন। উসমান খোয়াজা। সেই ম্যাচে ৩০২ বল ধরে পড়ে থেকে করেছিলেন ১৪১। অন্য জন ট্রাভিস হেড। সেই টেস্টে অভিষেক ঘটেছিল। অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংসে তাঁর দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। এখনও ক্রিজে আছেন শন মার্শের সঙ্গে। তাঁরা দু’জনে মিলে শেষের দিকে ১২.১ ওভার ধরে ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করে গেলেন।

আরও পড়ুন: ওয়ার্নের পরামর্শ, তৈরি করা হচ্ছে কুলদীপ অস্ত্রও

শন মার্শকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত শোনাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সফল অফস্পিনারকে। ‘‘শেফিল্ড শিল্ডে আমি ওকে অনেক বল করেছি। আমাকে মাঠের সর্বত্র উড়িয়ে দিয়েছে। আমার চোখে ও সুপারস্টার। এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শন মার্শ।’’

ভারতকে কিছুটা উদ্বেগে রাখছে শেষের দিকে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার বিলাসিতা। শেষ সাত উইকেট পড়ল ৭৩ রানে, শেষ পাঁচ উইকেট ২৫ রানে। একটা সময়ে লায়ন হ্যাটট্রিকের মুখে ছিলেন। অজিঙ্ক রাহানে রান পেলেও রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন। মহম্মদ শামি এসে প্রথম বলেই চালালেন। রোহিত শর্মার টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন থেকে গেল। এর পর ইংল্যান্ডে সফল হওয়া হনুমা বিহারীকে কী ভাবে বসিয়ে রাখা যাবে? ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারও দেখা গেল শেষের দিকে ব্যাটিং শৃঙ্খলার অভাব নিয়ে বিরক্ত।

নিজের ক্রিকেট জীবনে ক্রিজ আগলে পড়ে থাকার জন্য সুনাম ছিল বাঙ্গারের। হেডিংলের ভিজে পিচে ওপেন করতে নেমে উইকেট দিয়ে আসেননি। তাঁদের তৈরি করা মঞ্চের উপরে সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়রা সেঞ্চুরি করে ঐতিহাসিক জয়ের রাস্তা তৈরি করেছিলেন। বাঙ্গার না বলে পারছেন না, ‘‘শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে আমাদের উন্নতি করার দরকার। অন্তত আরও ২৫ রান হতে পারত। আরও শৃঙ্খলা আনতেই হবে।’’

আরও পড়ুন: ওয়ার্নারদের জন্য খারাপ লাগছে কোহালির

চেতেশ্বর পূজারার থেকে শিক্ষা নিতে পারেন রাহানে, শামিরা। প্রথম ইনিংসে ১২৩ করার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭১। রাহুল দ্রাবিড়ের উত্তরসূরি ভাবা হত পূজারাকে। এখনও দ্রাবিড়ের সেই ধারাবাহিকতা বা উৎকর্ষ দেখাতে না পারলেও অন্তত মিনি দ্রাবিড় তাঁকে বলাই যায়। এই অ্যাডিলেডেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ভারত। তার মুখ্য কারিগর ছিলেন দ্রাবিড়। প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৭০-এর উপর। এ বার জিতলে প্রধান চরিত্র হিসেবে থেকে যাবেন এ যুগের ‘দেওয়াল’।

ভারতের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার বলে গেলেন, তাঁরা সীমানাটা দেখতে পাচ্ছেন। এ বার সেটা অতিক্রম করতে হবে। কাজটা সম্পূর্ণ করাই লক্ষ্য হবে সোমবার। বোঝাই যাচ্ছে, বাঘ রক্তের স্বাদ পেয়েছে। এখান থেকে শিকার ফস্কাতে চায় না। ও দিকে লায়নের পাল্টা গর্জন, তাঁরাও ছাড়বেন না। পিচ নিয়ে পর্যবেক্ষণও জুড়ে দিচ্ছেন তিনি, ‘‘পিচটা কিন্তু এখন মন্থর নেই। ভাল গতিতে ব্যাটে বল আসছে। তাই পেসাররা অতটা সুবিধে পাবে না আর। অবশ্যই ভারতের বিশ্বমানের স্পিনার আছে এবং আমাদের দলে বাঁ হাতিরাও রয়েছে। তাই বড় চ্যালেঞ্জ থাকছে আমাদের সামনে। কিন্তু আমরা মনে করি না, অসম্ভব।’’

অস্ট্রেলিয়া না! ভাঙবে, তবু মচকাবে না। আরও একটা রুদ্ধশ্বাস পরিণতির অপেক্ষা অ্যাডিলেডে। কে বলে টেস্ট ক্রিকেট মৃতপ্রায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE