Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঘরোয়া ক্রিকেট এ বার তুলেই দিক না বোর্ড

ভারত ‘এ’ দল যে ভবিষ্যতের ভারতীয় দলের দিকে তাকিয়ে গড়া হয়, এত দিন তাই জানতাম। সেখানে উঠতি তরুণদের সুযোগ দেওয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০৪:২৬
Share: Save:

লোঢা কমিটির সুপারিশে অনেক কিছুই নতুন ভাবনা, পরিকল্পনা উঠে আসছে। যার মধ্যে ভাল-মন্দ দুইই আছে। কিন্তু তিন জাতীয় নির্বাচক কমিটির ভাবনা যে কত বড় ভুল, তা বৃহস্পতিবার বোঝা গেল। তিন নির্বাচকের ভারত ‘এ’ দল বাছাই দেখে। দল নির্বাচনে যেন ভারতীয় ক্রিকেটের সেই পুরনো দিন ফিরে এল। ফের সেই অভাগা বাঙালি। ফের অভাগা পূর্বাঞ্চল।

ভারত ‘এ’ দল যে ভবিষ্যতের ভারতীয় দলের দিকে তাকিয়ে গড়া হয়, এত দিন তাই জানতাম। সেখানে উঠতি তরুণদের সুযোগ দেওয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যোগ্যতার মাপকাঠিকে পুরোপুরি ভুলে গিয়ে সেই দল বাছাই করা যায় না বোধহয়। মনোজ তিওয়ারি বা অশোক ডিন্ডার পারফরম্যান্স ভাল হলে ওরা কেন সুযোগ পাবে না?

আইপিএল দেখে দলটা বাছা হল, না ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দেখে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। কখনও মনে হচ্ছে এই দলে যেন আইপিএলের-ই ছায়া রয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে, তা হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের দরকার কী? রঞ্জি ট্রফি, বিজয় হাজারে, মুস্তাক আলি, দলীপ দেওধর বন্ধ করে দিয়ে শুধু আইপিএলই হোক।

আবার মনে হচ্ছে, সবার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠি এক নয়। যদি আইপিএল-এর পরিসংখ্যান সামনে রেখেই ‘এ’ দল বাছা হয়ে থাকে, তা হলে মনোজ তিওয়ারি সেই দলে নেই কেন? দীপক হুডা, বিজয় শঙ্করের তুলনায় মনোজের পারফরম্যান্স অনেক ভাল। বয়সের কথা বললেও মানতে পারছি না। মনোজের বয়স ৩২। কেন ওকে দলে নেওয়া যাবে না, মাথায় ঢুকছে না। একসময় জাতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছি বলে বলতে পারি, দল বাছতে বসে বয়সের চেয়ে পারফরম্যান্সকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন নির্বাচকরা। কিন্তু এখন তো দেখছি সব উল্টে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘টপ অফ দ্য রক’এ বান্ধবীকে প্রোপজ করলেন স্টিভ স্মিথ

অন্তত তিন জনের পারফরম্যান্সকে উপেক্ষা করে তাঁদের চেয়ে পরিসংখ্যানে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের দলে নেওয়া হয়েছে। যেমন ঘরোয়া ক্রিকেটে শেষ মরসুমে প্রথম শ্রেণির চার দিনের ম্যাচে অশোক ডিন্ডা ৮ ম্যাচে পেয়েছিল মোট ৪০ উইকেট। অথচ, দক্ষিণ আফ্রিকাগামী দলে ডিন্ডাকে উপেক্ষা করে নেওয়া হয়েছে অনিকেত চৌধুরি (৭ ম্যাচে ২১ উইকেট), অঙ্কিত রাজপুত (৮ ম্যাচে ২১ উইকেট), নভদীপ সাইনি-কে (৫ ম্যাচে ১৬ উইকেট)। এরা সকলেই পেসার এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে চার দিনের ফর্ম্যাটে সারা মরসুমের বিচারে সকলেই ডিন্ডার চেয়ে পিছিয়ে।

তেমনই এক দিনের দলে মনোজ তিওয়ারিকে (ঘরোয়া এক দিনের ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ৪২৯ রান) নেওয়া হয়নি। অথচ তার চেয়ে অনেক কম রান করা দীপক হুডা (১০ ম্যাচে ৩৭৪ রান) এবং মনদীপ সিংহ-কে (৯ ম্যাচে ২৯৪) নেওয়া হয়েছে। বিস্ময়কর ভাবে, ১১ ম্যাচে মাত্র ২৬৯ রান করা ভি শঙ্করের পর্যন্ত জায়গায় হয়েছে এক দিনের দলে। অথচ মনোজ বা ৯ ম্যাচে ৪৭২ রান করে গত মরসুমে এক দিনের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তালিকার উপরের দিকে থাকা অভিমন্যু ঈশ্বরনের জায়গা হয়নি।

দুটো ‘এ’ দল দেখতে দেখতে কতগুলো প্রশ্ন জাগছে— হনুমা বিহারি কে? অঙ্কিত বাওনে কী করেছে? অনিকেত চৌধুরি ভারত অধিনায়কের পছন্দের ক্রিকেটার বলে শুনেছি। সেই জন্যই কি ওকে নেওয়া হল? পূর্বাঞ্চল থেকে যদি মাত্র দু’জন শাহবাজ নাদিম ও সুদীপ এই দলে জায়গা পায়, তা হলে পূর্বাঞ্চল এ বার মুস্তাক আলি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হল কী করে? বাংলা থেকে যদি মাত্র একজন ক্রিকেটার সুযোগ পায়, তা হলে বাংলা বিজয় হাজারে ট্রফির ফাইনাল খেলল কী করে? তিন জনের বাছাই কমিটিতে বাংলার এক প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে লাভটা কী হল?

ভারত ‘এ’ দল

ত্রিদেশীয় সিরিজ: মণীশ পাণ্ডে (অধিনায়ক), মনদীপ সিংহ, শ্রেয়স আইয়ার, সঞ্জু স্যামসন, দীপক হুডা, করুণ নায়ার, ক্রুনাল পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থ (উইকেটকিপার), বিজয় শঙ্কর, অক্ষর পটেল, যুজবেন্দ্র চহাল, জয়ন্ত যাদব, বাসিল থাম্পি, মহম্মদ সিরাজ, শার্দূল ঠাকুর, সিদ্ধার্থ কল।

চার দিনের ম্যাচ: করুণ নায়ার (অধিনায়ক), প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চল, অভিনব মুকুন্দ, শ্রেয়স আইয়ার, অঙ্কিত বাওনে, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, ইশান কিষাণ (উইকেটকিপার), হনুমা বিহারি, জয়ন্ত যাদব, শাহবাজ নাদিম, নভদীপ সাইনি, মহম্মদ সিরাজ, শার্দূল
ঠাকুর, অনিকেত চৌধুরি, অঙ্কিত রাজপুত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE