Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নতুন কোচের ভরসাও সেই র‌্যা-ডু আলাদিন

কোচ বদলালেও সেই ছবিটা একই আছে! এক মাস এগারো দিন পরেও এতটুকু বদলায়নি। ঊনচল্লিশ দিন আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি আর্মান্দো কোলাসোর কলকাতায় শেষ ডার্বিতে তাঁরাই ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের আশা। ২৮ মার্চও তাই। সেই র‌্যা-ডু (র‌্যান্টি-ডুডু) জুটিকে আঁকড়েই ডার্বির তরি পার করার পরিকল্পনা লাল-হলুদ শিবিরের।

সংকল্প। যুবভারতীতে র‌্যান্টি মার্টিন্স। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

সংকল্প। যুবভারতীতে র‌্যান্টি মার্টিন্স। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩২
Share: Save:

কোচ বদলালেও সেই ছবিটা একই আছে! এক মাস এগারো দিন পরেও এতটুকু বদলায়নি। ঊনচল্লিশ দিন আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি আর্মান্দো কোলাসোর কলকাতায় শেষ ডার্বিতে তাঁরাই ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের আশা। ২৮ মার্চও তাই। সেই র‌্যা-ডু (র‌্যান্টি-ডুডু) জুটিকে আঁকড়েই ডার্বির তরি পার করার পরিকল্পনা লাল-হলুদ শিবিরের।

সদ্য দাদাসাহেব ফালকে পাওয়া শশী কপূরের ‘দিওয়ার’ সিনেমার সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘মেরে পাস মেরা মা হ্যায়’-এর মতোই এ দিন বিকেলে মোহনবাগান তাঁবুতে যুগ্ম সাংবাদিক সম্মেলনে আসা ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো সতৌরির একটা কথাকে যেন শোনাল! “আমার কাছে ডুডু-র‌্যান্টি আছে।”

মোহনবাগানের সনি-বোয়া জুটি নিয়ে বলতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচের জবাব, “ওদের যদি সনি-বোয়া থাকে, তা হলে আমার হাতেও ডুডু-র‌্যান্টি রয়েছে। র‌্যান্টি তো আই লিগে আমাদের টিমের ১৪ গোলের মধ্যে একাই ১২ গোল করে বসে আছে।”

যা শুনে আবার পাশে প্রতিদ্বন্দ্বী কোচের পাশেই বসা বাগান কোচ সঞ্জয় সেনও যেন সতর্ক! “র‌্যান্টি-ডুডু জুটি সব সময়ই বিপজ্জনক।”

শুধু কি যুযুধান দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের কোচ? ৩৯ দিন আগের কোচও যে কলকাতা ডার্বির উত্তেজনায় গোয়ার বাড়ি থেকে ফোনে বলে দিলেন বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের ‘ট্রাম্প কার্ড’ ওই নাইজিরিয়ান জুটিই। আর্মান্দো কোলাসো বলছিলেন, “র‌্যান্টির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসটা আবার দেখতে পাচ্ছি। ইস্টবেঙ্গল কাল যেন বেশি ডিফেন্সিভ না হয়ে পড়ে। র‌্যান্টি-ডুডুকে বল জোগালে কিন্তু ওরা ভয়ঙ্কর। ইস্টবেঙ্গলে তো ওই জুটিটাই তুরুপের তাস।”

যাদের নিয়ে মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যের ছড়াছড়ি সেই র‌্যা-ডু জুটি কিন্তু বড় ম্যাচের আগের সকালে আশ্চর্যজনক ভাবে চুপ। মিডিয়াকে এক রকম এড়িয়েই গেলেন র‌্যান্টি-ডুডু দু’জনই। পরনে কালো টি-শার্ট। বুকে লেখা ‘স্কোরিং মেশিন’। যুবভারতীতে অনুশীলন সেরে বাড়ি ফেরার আগে গত ডার্বিতেই লাল-হলুদের গোলদাতা র‌্যান্টি বলে গেলেন, “ক্লাবের নির্দেশ। কথা বলা যাবে না।” র‌্যান্টির দেশোয়ালি দোসর ডুডু হাসতে হাসতে শুধু বলে গেলেন, “ইদানীং কয়েকটা ম্যাচে গোল পাইনি। আশা করি ডার্বিতে পেয়ে যাব।”

ইস্টবেঙ্গল কোচ যে রণকৌশল সাজিয়েছেন তার মহড়াতেও দেখা গেল ডুডু-র‌্যান্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। এ দিন সকালে এলকোর অনুশীলন জুড়ে ছিল সেট পিস। আই লিগে যে দশ গোল হজম করেছে ইস্টবেঙ্গল তার মধ্যে আটটাই সেট পিস থেকে বলেই হয়তো। মোহনবাগান যাতে লাল-হলুদের ওই দুর্বলতা কাজে না লাগাতে পারে তার জন্যই বাড়তি ব্যবস্থা। বক্সে একের পর কর্নার উড়ে আসছিল। আর তা থেকে হেডে গোল করার জন্য সেকেন্ড পোস্ট থেকে ডুডু-র‌্যান্টি সরছিলেন প্রথম পোস্টের দিকে। এটা হল নিজেদের আক্রমণের সময়। আর কাল্পনিক বিপক্ষের সেট পিসের সময় সেকেন্ড বল ধরে প্রতি-আক্রমণের জন্য র‌্যান্টি-ডুডু প্র‌্যাকটিসে নেমে আসছিলেন মাঝমাঠে।

লাল-হলুদ অধিনায়ক হরমনজ্যোত্‌ সিংহ খাবরাও ডার্বি থেকে তিন পয়েন্ট তুলে ‘স্যাটারডে নাইট’ সেলিব্রেশনের জন্য তাকিয়ে রয়েছেন নাইজিরিয়ান জুটির উপরই। শনিবার রাইট ব্যাকে নেমে তাঁর দায়িত্ব বাগানের সনি নর্ডিকে থামিয়ে দেওয়া। র‌্যান্টির ‘ক্যাপ্টেন কারেজিয়াস এইচকে সেভেন’ খাবরা বলছেন, “এ বারের কলকাতা লিগের ডার্বিতেও কিন্তু আমরা পিছিয়ে থেকে নেমেছিলাম। ডুডু-র‌্যান্টিই সব ওলটপালট করে দিয়েছিল মাঠে। কাল ডুডু-র‌্যান্টি জুটিকে বল জোগানোর পাশাপাশি ওদের সনিকে থামাতেও আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।”

খাবরার মতোই ফুটছেন মেহতাব। “কয়েকটা ম্যাচ প্রত্যাশা মতো খেলতে না পারায় সমালোচনা শুনতে হয়েছে। শনিবার নিজেকে প্রমাণ করার ম্যাচ। রাতে নিজের জন্য ছাড়াও ডুডুর গোলের জন্যও প্রার্থনা করব,” বলছিলেন ইস্টবেঙ্গলের বহু পোড়খাওয়া বাঙালি মিডিও।

প্রাক্তন থেকে বর্তমান কোচ, সতীর্থ থেকে প্রতিপক্ষ—সকলের কাছেই আজ লাল-হলুদের আলাদিন র‌্যা-ডু জুটি। গোলের প্রদীপ জ্বলল কি না জানতে অপেক্ষা শনিবার সন্ধের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE