অপ্রতিরোধ্য: নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচে তৃতীয় উইকেট নিয়ে উচ্ছ্বাস শামির। ছবি: গেটি ইমেজেস
নেপিয়ারের সূর্যের মতোই তেজ এই ভারতীয় দলের। যে সূর্য প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচকে আধ ঘণ্টা মতো থামিয়ে দিয়েছিল। আর ভারতীয় ক্রিকেটারদের তেজের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল নিউজ়িল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসন, রস টেলরের দলকে ৩৮ ওভারে ১৫৭ রানে থামিয়ে দিয়ে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে আট উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।
এই ম্যাচে একটা মন ভাল হওয়া ঘটনা দেখলাম, আর একটা খুব অবাক করে দেওয়া। অনেক দিন পরে সাদা বলে দুরন্ত বোলিং করলেন মহম্মদ শামি। আর দেখলাম, রোদের জন্য অদ্ভুত ভাবে ম্যাচ বন্ধ থাকল আধ ঘণ্টার মতো! যার জেরে ডাকওয়ার্থ-লুইসের নিয়ম জারি করতে হল। এত দিন জেনেছি, এটা একটা রেন রুল। এ বার দেখলাম, সান রুল হয়ে গিয়েছে!
টিভি-তে শুনছিলাম, নিউজ়িল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে এই রকম কারণে খেলা অনেক সময়ই বন্ধ থাকে। যাকে ক্রিকেটের ভাষায় বলে ‘সানস্ট্রাইক’। সূর্যের আলো এমন ভাবে প্রধানত ব্যাটসম্যানদের চোখে এসে পড়ে, যে খেলতে অসুবিধে হয়। ফিল্ডারদেরও একই সমস্যায় পড়তে হয়। ফিল্ডারদের জন্য তাও সানগ্লাস আছে, ব্যাটসম্যানদের তো তাও নেই। যে কারণে অপেক্ষা করতে হয়, কখন রোদ সরে যাবে। বিরাট কোহালি-শিখর ধওয়নদের সেটাই করতে হল। বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ থাকলে যে ভাবে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হল। আসলে প্রাকৃতিক কারণে খেলা সাময়িক বন্ধ থাকলে ডাকওয়ার্থ-লুইস ছাড়া যে কোনও গতি নেই। এ দিন সেই নিয়মে ৩৪.৫ ওভারে দু’উইকেটে ১৫৬ তুলে জিতল ভারত।
লাল বলের ক্রিকেটে শামিকে আগেও অনেকবার বিধ্বংসী ফর্মে বল করতে দেখেছি। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে ওর কাছ থেকে এ রকম স্পেল আগে দেখিনি। সিমটাকে সোজা রেখেছেন। দু’দিকে বল মুভ করিয়েছেন। দুরন্ত গতিতে বল করেছেন, বাউন্সার কাজে লাগিয়েছেন। এত ভাল ফাস্ট বোলিং আমি খুব কমই দেখেছি। ছয় ওভারে ১৯ রানে তিন উইকেট নিলেন শামি। আরও বেশি উইকেট পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না।
নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে কুলদীপ যাদবও চার উইকেট নিলেন। কিন্তু শামি শুরুতে যে ঝটকাটা দিয়ে গেলেন, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি নিউজ়িল্যান্ড। ওদের দুই ওপেনার, মার্টিন গাপ্টিল এবং কলিন মুনরো— এই দু’জনকেই স্বপ্নের ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দিলেন শামি। গাপ্টিল যে ওভারে আউট হলেন, সেটা শামির মেডেন উইকেট ওভার। ওই ওভারের যে কোনও বলে আউট হতে পারতেন গাপ্টিল। অবশেষে সিম সোজা রেখে, ছোট্ট একটা ইনসুইংয়ে গাপ্টিলের স্টাম্প ছিটকে দিলেন শামি। অন্য ওপেনার, মুনরোকে বোল্ড করেছিলেন আউটসুইংয়ে (বাঁ হাতি মুনরোর কাছে যা ছিল ইনসুইং)।
শামির বোলিং দেখতে দেখতে একটা কথা মনে হচ্ছিল। যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, শামি এবং হার্দির পাণ্ড্যকে নিয়ে ভারতের পেস আক্রমণ কিন্তু বিশ্বকাপে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। তার পরে কুলদীপ যাদব বা যুজবেন্দ্র চহালের মধ্যে কেউ আসতে পারেন। এ দিন যেমন কুলদীপের বোলিং দেখে বুঝলাম, নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এই চায়নাম্যানের ডেলিভারি কিছুই বুঝতে পারছেন না। কোনটা গুগলি হবে, কোনটা ভিতরে ঢুকে আসবে, তা সম্পর্কে ওঁদের কোনও ধারণাই নেই। কুলদীপের বল বুঝতে বুঝতে পাঁচ ওয়ান ডে-র সিরিজটা সম্ভবত শেষ হয়ে যাবে!
ওয়ান ডে সিরিজ শুরুর আগেই ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি আইসিরি-র একগুচ্ছ পুরস্কার পেয়েছেন। অধিনায়কের প্রাপ্তি সম্ভবত তাঁর দলকেও তাতিয়ে দিয়েছিল। নেপিয়ারের এই পিচে এত অল্প রানে যে কোনও দল আউট হয়ে যেতে পারে, তা ভাবা যায় না। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের তেজের সামনে দাঁড়াতে পারল না নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং। এর পরে সহজেই ম্যাচ বার করে দিলেন ভারতীয় ব্যাটস্যানরা। সঙ্গে ব্যাটিং প্র্যাক্টিসও পেয়ে গেলেন শিখর ধওয়ন, কোহালিরা। তবে এ সবের মধ্যেও দু’একটা খুঁত রয়ে গেল। গোটা দু’য়েক ক্যাচ ফেললেন ভারতীয় ফিল্ডাররা।
স্কোরকার্ড
নিউজ়িল্যান্ড ১৫৭ (৩৮)
ভারত ১৫৬-২ (৩৪.৫)
নিউজ়িল্যান্ড
মার্টিন গাপ্টিল বো শামি ৫• ৯
কলিন মানরো বো শামি ৮• ৯
উইলিয়ামসন ক বিজয় বো কুলদীপ ৬৪n৮১
রস টেলর ক ও বো চহাল ২৪• ৪১
টম লাথাম ক ও বো চহাল ১১n১০
নিকোলস ক কুলদীপ বো কেদার ১২n১৭
স্যান্টনার এলবিডব্লিউ বো শামি ১৪n২১
ডগ ব্রেসওয়েল বো কুলদীপ ৭n১৫
টিম সাউদি ন. আ. ৯n১২
লকি ফার্গুসন স্টা. ধোনি বো কুলদীপ ০n৩
ট্রেন্ট বোল্ট ক রোহিত বো কুলদীপ ১n১০
অতিরিক্ত ২
মোট ১৫৭ (৩৮)
পতন: ১-৫ (গাপ্টিল, ১.৫), ২-১৮ (মানরো, ৩.৩), ৩-৫২ (টেলর, ১৪.৩), ৪-৭৬ (লাথাম, ১৮.৫), ৫-১০৭ (নিকোলস, ২৩.৬), ৬-১৩৩ (স্যান্টনার, ২৯.৪), ৭-১৪৬ (উইলিয়ামসন, ৩৩.১), ৮-১৪৬ (ব্রেসওয়েল, ৩৩.৫), ৯-১৪৮ (ফার্গুসন, ৩৫.২), ১০-১৫৭ (বোল্ট, ৩৭.৫)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৫-০-২০-০, মহম্মদ শামি ৬-২-১৯-৩, বিজয় শঙ্কর ৪-০-১৯-০, যুজবেন্দ্র চহাল ১০-০-৪৩-২, কুলদীপ যাদব ১০-১-৩৯-৪, কেদার যাদব ৩-০-১৭-১।
ভারত
রোহিত ক গাপ্টিল বো ব্রেসওয়েল ১১n২৪
শিখর ধওয়ন ন. আ. ৭৫n১০৩
কোহালি ক লাদাম বো ফার্গুসন ৪৫n৫৯
অম্বাতি রায়ডু ন. আ. ১৩n২৩
অতিরিক্ত ১২
মোট ১৫৬-২ (৩৪.৫)
পতন: ১-৪১ (রোহিত, ৯.২), ২-১৩২ (কোহালি, ২৮.৪)।
বোলিং: ট্রেন্ট বোল্ট ৬-১-১৯-০, টিম সাউদি ৬.৫-০-৩৯-০, লকি ফার্গুসন ৮-০-৪১-১, ডগ ব্রেসওয়েল ৭-০-২৩-১, মিচেল স্যান্টনার ৭-০-৩২-০।
ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয় ভারতের
৮ উইকেটে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা মহম্মদ শামি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy