শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার পথে সুখী পরিবার। মাঝ আকাশে় টিম ইস্টবেঙ্গল। ছবি: উৎপল সরকার
স্বপ্নের কলকাতা লিগের পর যখন তাঁর চূড়ান্ত অফ ফর্ম চলছিল কত যে কান্না জমিয়ে রেখেছিলেন ডু ডং!
শনিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ডংয়েরই জোড়া গোলে ইস্টবেঙ্গলে এই মুহূর্তে আই লিগ আলো। খেতাবের সোনালি রেখা লাল-হলুদের সামনে। তাই পুনর্জন্ম পাওয়া কোরিয়ান মিডিও মাঠের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন কাল ম্যাচ শেষে। হোটেলে ফিরেই কলকাতায় বান্ধবী হারুকার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গিয়ে ফের কেঁদে ফেলেন ডার্বির মহানায়ক।
রবিবার সকালে টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে ডং বললেন, ‘‘কাল হোটেলে ফিরে হারুকাকে ফোন করেছিলাম। ও আনন্দে কাঁদছিল। আমার মতোই। যখন গোল পাচ্ছিলাম না, ভাল খেলতে পারছিলাম না তখন আমরা দু’জনে মিলে কত দুঃখ যে শেয়ার করেছি।’’
স্বীকার করছেন কলকাতা লিগ ডার্বির জোড়া গোলের চেয়ে শনিবারের আই লিগ ডার্বির জোড়া গোল তাঁকে অনেক বেশি আনন্দ দিয়েছে। ‘‘কারণ নিজে ফর্মে ফিরেছি। দল জিতেছে। ম্যাচটা না জিতলে আমরা চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড় থেকে ছিটকে যেতাম। নতুন ইনিংস শুরু হল আমার খেলোয়াড়জীবনে। এটা বজায় রাখাই আমার এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ। কলকাতা লিগের ডার্বিতে এ রকম চাপ ছিল না,’’ বললেন ডং। বলে আরও যোগ করলেন, ‘‘আমার রুমমেট র্যান্টি আর টিমের সিনিয়ররা দারুণ ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে আমাকে। ওদের জন্যই ফর্মে ফিরতে পেরেছি।’’
ডং নিয়ে আগের দিনই র্যান্টি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এ দিন লাল-হলুদের আর এক সিনিয়র ফুটবলার মেহতাব বললেন, ‘‘ডং ওর পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। আমরা যখন সবাই বেড়াতে গিয়েছি তখনও ও একা প্র্যাকটিস করে গিয়েছে। কোচ বিশ্রাম দিলেও নেয়নি।’’
তবে ডার্বি জিতলেও শনিবার রাতে ইস্টবেঙ্গল টিম হোটেলে কোনও উৎসব হয়নি। হইচই করতে বারণ করে দিয়েছিলেন কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। ‘‘ডার্বি জিতেছি তো কী হয়েছে। আই লিগ তো জিতিনি এখনও। এখনও আমাদের চারটে ম্যাচ বাকি। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সব ক’টা জিততে হবে। ম্যাচ-বাই-ম্যাচ ধরে এগোব। উৎসবের জন্য অনেক সময় পড়ে আছে। চ্যাম্পিয়ন হলে উৎসব তো এমনিই হবে।’’
নিজেদের বাকি সব ম্যাচ জিতলে ইস্টবেঙ্গলই চ্যাম্পিয়ন হবে। মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু কোনও বাধা হবে না। কারণ চার ম্যাচ জিতলে ৩৫ পয়েন্টে পৌঁছবেন র্যান্টিরা। যে পয়েন্টে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ জিতলেও পৌঁছনো সম্ভব নয় বাগান বা বেঙ্গালুরুর। যদিও লাল-হলুদ কোচ মনে করছেন, ৩২ পয়েন্টেই লিগের ফয়সালা হবে। ‘‘অনেক দলই পয়েন্ট নষ্ট করবে। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে কলকাতার দু’ক্লাবের খেলাই বাকি। তবে আমি চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে এখনই ভাবছি না। মঙ্গলবার মুম্বই ম্যাচটা জেতাই আমাদের পাখির চোখ এখন।’’ বিশ্বজিৎ মানতে রাজি নন, তাঁর দল খেতাবের প্রশ্নে অ্যাডভান্টেজ পজিশনে রয়েছে। ‘‘তিনটে টিমই লড়াইয়ে আছে। কে এগিয়ে কে পিছিয়ে বলা যাবে না।’’ কথা বললেই বোঝা যায় ডার্বিতে নাটকীয় জয় পাওয়া সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল কোচ শান্ত-সংযত রাখতে চাইছেন পুরো টিমকে।
লাল-হলুদ কোচের কথা ঘুরে-ফিরে আসছে তাঁর ফুটবলারদের মুখেও। র্যান্টি যেমন বলছিলেন, ‘‘আইজল ম্যাচ জেতাটাই আমাদের টার্নিং পয়েন্ট। তার পর ডার্বি জিতলাম। আমি বলছি আমাদের টিমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সব রসদ আছে। এখন একটাই কাজ। বাকি ম্যাচগুলোও জিততে হবে।’’ আর টিমের মাঝমাঠ জেনারেল মেহতাবের মন্তব্য, ‘‘এখনও তো কিছুই হয়নি। ডার্বি জিতেছি ঠিক। কিন্তু পেয়েছি তো তিন পয়েন্টই। একটা টিমের ফুটবলাররা তিন-চার মাস মাইনে পাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও তারা ভাল খেলছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার এখনও। আর আমরা ক্লাবের কাছ থেকে সব কিছু পাওয়া সত্ত্বেও আই লিগ জিততে পারছি না। এ বার জিততেই হবে।’’
টিম ইস্টবেঙ্গল এ দিন সুইমিং সেশনের পর কলকাতা ফিরে গিয়েছে। সোমবারই নিজেদের মাঠে অনুশীলনে নামবে। তার পরে টিম মিটিং। অন্তত সে রকমই আপাতত ঠিক করে রেখেছেন বিশ্বজিৎ। ছেলেদের কী বলবেন টিম মিটিংয়ে? ‘‘যা বলব সেটা ওদের সবার জানা। আই লিগ না পেলে ডার্বি জয়ের কোনও দাম থাকবে না,’’ বলে দিচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy