Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা ধনুকেই জঙ্গলমহলের সুশীলার লক্ষ্যভেদ

মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও হাতে মেলেনি তিরন্দাজির আধুনিক সরঞ্জাম। তাই বাধ্য হয়ে নিজের জোড়াতালি দিয়ে চালানো ভাঙা ধনুকেই অনুশীলন করে চলেছে সুশীলা হেমব্রম। সম্প্রতি পুরুলিয়ায় রাজ্য পুলিশের পাঁচ জেলা নিয়ে জঙ্গলমহল কাপের তিরন্দাজিতে রেঞ্জ ফাইনালে মহিলা বিভাগে প্রথম হয়েছে বেলিয়াবেড়া ব্লকের কুশমাড় তেঁতুলিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির এই ছাত্রী।

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অবিচল।—সুজিত মাহাতো।

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অবিচল।—সুজিত মাহাতো।

কিংশুক গুপ্ত ও প্রশান্ত পাল
ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও হাতে মেলেনি তিরন্দাজির আধুনিক সরঞ্জাম। তাই বাধ্য হয়ে নিজের জোড়াতালি দিয়ে চালানো ভাঙা ধনুকেই অনুশীলন করে চলেছে সুশীলা হেমব্রম। সম্প্রতি পুরুলিয়ায় রাজ্য পুলিশের পাঁচ জেলা নিয়ে জঙ্গলমহল কাপের তিরন্দাজিতে রেঞ্জ ফাইনালে মহিলা বিভাগে প্রথম হয়েছে বেলিয়াবেড়া ব্লকের কুশমাড় তেঁতুলিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির এই ছাত্রী। এ নিয়ে পরপর তিন বার। ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও প্রথম স্থান অধিকার করেছিল সে।

তবুও মুখে হাসি নেই সুশীলার। পুরুলিয়া মানভূম ক্রীড়া সংস্থার মাঠে বুধবার প্রতিযোগিতার শেষে এখনও ‘রিক্যাব’ ধনুক না থাকার হতাশার কথা শোনাচ্ছিল সুশীলা। তাঁর কথায়, ‘‘বাবার খুবই সামান্য চাষাবাস রয়েছে। জাতীয়স্তরের প্রতিযোগিতায় নামার যোগ্য ওই ধনুক কেনার আর্থিক সঙ্গতিও নেই।’’

পুরুলিয়া থেকে ফিরে শীতের দুপুরে বেলিয়াবেড়ার তপসিয়া গ্রামে এক কাকার বাড়ি লাগোয়া বাগানে নিজের ভেঙে যাওয়া ধনুক নিয়ে একমনে অনুশীলন করছিল বছর আঠারোর সুশীলা। ধনুক দেখিয়ে সে বলে, “নুন আনতে পান্তা ফুরনোর পরিবার আমাদের। বাবা ধারদেনা করে ৫০০০ টাকার ইন্ডিয়ান ধনুক কিনে দিয়েছিল। এই ধনুকেই স্কুল স্তরে, সাব জুনিয়র ও জাতীয় স্তরে খেলেছি। কিন্তু রিক্যাব ধনুক না থাকায় জাতীয় স্তরে ও আন্তর্জাতিক স্তরের ট্রায়াল-এ যোগ দিতে পারছি না।” ২০১৫ সালে জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার নেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমস্যার কথা জানিয়েছিল সুশীলা। মুখ্যমন্ত্রী সুশীলাকে রিক্যাব ধনুক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ধনুক পৌঁছয়নি তার হাতে।

সুশীলার বাড়ি নয়াগ্রাম ব্লকের পড়াশিয়ায়। বাবা সুনারাম হেমব্রম প্রান্তিক চাষি। নয়াগ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক শিক্ষকের কাছে তিরন্দাজিতে হাতেখড়ি। পরে স্কুল স্তরের রাজ্য তিরন্দাজিতে যোগ দিয়ে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই) কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে যায় সুশীলা। ২০১১ সাল থেকে প্রায় আড়াই বছর সাই-এর পূর্বাঞ্চল কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেয় সে। ওই সময়ে সাইয়ের আন্তঃআঞ্চলিক তিরন্দাজি দলগত ভাবে তৃতীয় হয় সে।

কিন্তু ২০১৩ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে প্রায় এক বছরের বেশি শয্যাশায়ী থাকে সে। ফলে সাই-এর প্রশিক্ষণ থেকে ছিটকে যায়। সুস্থ হওয়ার পরে ২০১৪ সালে নতুন করে লড়াই শুরু হয়। জামশেদপুরের একটি সংস্থায় প্রশিক্ষণ শুরু করে সুশীলা। সেখানে ঝাড়খণ্ডের তিরন্দাজি প্রখ্যাত কোচ বিএস রাওয়ের নজরে পড়ে সে। গত বছর থেকে তাঁর তত্ত্বাবধানে ঝাড়খণ্ডে গিয়ে সরাইকেলা-খরসোঁয়া আর্চারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয় সুশীলা। এ বছর ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস্ অ্যান্ড স্পোর্টস-এ অনুর্ধ্ব-১৯ তিরন্দাজি বিভাগে প্রথম হয়ে সোনা জেতে সে।

জামশেদপুর থেকে ফোনে সুশীলার কোচ বি এস রাও বলেন, “সুশীলা প্রতিভাময়ী। রিক্যাব ধনুক না থাকায় জাতীয় স্তরে ও আন্তর্জাতিক স্তরের নানা প্রতিযোগিতায় সে যোগ দিতে পারছে না। সুযোগ পেলে সুশীলা উল্লেখযোগ্য ফল করবে। তবে ওই ধনুকের দাম প্রায় ২ লক্ষ টাকা।”

সামনেই মাধ্যমিক। কিন্তু সুশীলার মন পড়ে ধনুকে। তাই সে বলে চলে, ‘‘গত এক বছর ধরে প্রশাসনিক মহলে ঘুরেছি। কলকাতায় ক্রীড়া দফতরেও গিয়েছি। কিন্তু রিক্যাব ধনুক হাতে পাইনি। তাই মনে জেদ ছিল, এ বারও জঙ্গলমহল কাপে প্রথম হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেব। এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চাই, তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও ধনুক পাইনি। ধনুক পেলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দেখাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Archery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE