নিজের ৩০তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহালি। রবিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কলম্বোয়। ছবি: রয়টার্স
একটা সময় সচিন তেন্ডুলকরকে নিয়ে এমনই ভাবা হত। নিজেকে সচিন কোন শিখরে তুলে নিয়ে যাবে, ব্যাটিংয়ের মান ক্রমশ কতটা উঁচু হচ্ছে ওর জন্য, সচিনের ব্যাটিং দেখতে দেখতে আমরা এটাই ভাবতাম আর অবাক হতাম।
এখন বিরাট কোহালির ব্যাটিং দেখি আর সেই ভাবনাটাই মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসে। কত দূর যে যাবে ছেলেটা, তা ভেবে কুলকিনারা পাই না। রবিবারও প্রেমাদাসায় ওর সেঞ্চুরি দেখে মনে সেই ভাবনাটাই ফের ভেসে উঠল। রবিবার কলম্বোয় ৩০টা ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করে রিকি পন্টিংকে ধরে ফেলাটা বিরাট কোহালির কাছে বিরাট কোনও ব্যাপার নয়। এটা হওয়ারই ছিল। কিন্তু যে ভাবে পন্টিংকে ধরে ফেলল ও, সেটাই অসাধারণ। পন্টিংয়ের চেয়ে ১৮১টা ম্যাচ কম খেলে! ২৮ বছর বয়সের একটা ছেলের ৩০টা ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করে ফেলাটা যতটা অবাক করার মতো, তার চেয়ে বেশি অবাক করার মতো এই তথ্যটা।
রিকি পন্টিংও যে গ্রেট ব্যাটসম্যান, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বিরাট যে ভাবে এগিয়ে চলেছে, যে ভাবে ব্যাটিংকে ও জল-ভাতের পর্যায়ে নিয়ে চলে গিয়েছে, তার পরে এখন মনে হচ্ছে ওর সঙ্গে এখন আর কারও তুলনাই হতে পারে না। বিরাট ক্রমশ এই ক্রিকেট বিশ্বে এক এবং অনন্য হয়ে উঠছে যেন।
আরও পড়ুন: মুগ্ধ সানি: ৩০টা সেঞ্চুরিই দারুণ
ওয়ান ডে সেঞ্চুরির সংখ্যার দিক থেকে বিরাটের ওপরে এখন শুধু সচিন। এটা পরিসংখ্যানবিদরা বলবেন। আমার তো মনে হচ্ছে সচিনের ধারে কাছে যেতে পারে, এমন দশজন ব্যাটসম্যানের তালিকা তৈরি করতে বসলে এক থেকে দশ অবধি শুধু বিরাট কোহালির নামই লিখতে হবে। এ ছাড়া আর অন্য কোনও নাম কারও মনে আসছে কি? আমার তো আসছে না।
ফর্মে থাকা সচিন যখন ব্যাট করত, তখনও যেমন তার উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানের দিকে কেউ তাকাতই না, এখন বিরাট ব্যাট হাতে নামলেও তাই হয়। প্রতিটা শটকে ও এমন শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে, বোলারদের কাছে ওকে ঠান্ডা করার কোনও উপায়ই আর নেই। একমাত্র বিরাটের ভুলই ওর আউটের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ওর ভুলের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া বোলারের আর কোনও উপায় নেই। মানছি, শ্রীলঙ্কার এই দলটায় সে রকম ভাল কোনও বোলার নেই। কিন্তু তার জন্য বিরাটের কৃতিত্ব এতটুকুও কমছে না। ওর প্রতিটা শট ও ফুটওয়ার্ক যে রকম নিখুঁত হচ্ছে, তাতে বিশ্বের যে কোনও দলের বিরুদ্ধেই ও এই ব্যাটিংটা করতে পারে। সে অস্ট্রেলিয়াই হোক বা নিউজিল্যান্ড। এ ক্ষেত্রে বোলার বা বিপক্ষ কেমন, এটা কোনও বিষয়ই নয়।
বিরাটকে নিয়ে লিখতে বসলে এখানেই শেষ করা যাবে না। আরও আছে। রান তাড়া করতে গিয়ে ওর পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখলে বুঝবেন, এটাও বিরাটের একটা বড় প্লাস পয়েন্ট। এই ব্যাপারেও ও এক নম্বর। এতেই প্রমাণ হয়, চাপ সামলানোতেও ও অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এই চাপ সামলানোর ক্ষমতা ও অদম্য মানসিকতাটাই ওকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেও সাহায্য করে। যার জন্য ক্যাপ্টেন হিসেবেও ও সফল। দেখা যাচ্ছে বিরাট ওর এই ‘নেভার সে ডাই’ মানসিকতাটা দলের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই ছবিটাই দেখা গেল।
এটাই বা কম কী? যে অধিনায়কের দলে এই প্রভাব, সে তো বেনজির সাফল্যের দিকে যাবেই। বিরাট ক্রমশ সেই সাফল্যের দিকেই এগোচ্ছে মনে হচ্ছে। এখনও ও নিশ্চয়ই অন্তত সাত-আট বছর খেলবে। বাকি এই সময়ে যে আরও কী কী আসছে, কে জানে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy