Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিরাট-মন্ত্রে বৃষ্টিতেও দু’বেলা অনুশীলন

ক্রিকেটভক্ত মিক জ্যাগারের পড়া স্কুলে হয়তো যাওয়া হল না কোহালিদের। কিন্তু তার জন্য ক্রিকেটীয় রুটিন থেকে তাঁদের বেরনোর উপায় নেই।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০৫:১৪
Share: Save:

রোলিং স্টোন্‌স-খ্যাত মিক জ্যাগারের স্কুলে যেতে গিয়েও যাওয়া হল না বিরাট কোহালিদের। মঙ্গলবার ভারতীয় দলের প্র্যাকটিস সেশন রাখা হয়েছিল লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের ক্রিকেট সেন্টারে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে প্র্যাকটিসই বাতিল করে দিতে হল ভারতীয় দলকে।

এই স্কুলে পড়ার সময়েই রোলিং স্টোন্‌স-এর কাজ শুরু করেছিলেন স্যার মাইকেল ফিলিপ জ্যাগার (বেশি পরিচিত মিক জ্যাগার নামে)। সপ্তাহের শুরুর দিকে ক্লাস করতেন, উইকএন্ডে সঙ্গী হতো মিউজিক। সঙ্গীতকে কেরিয়ার করবেন বলে পরে ক্লাস করা ছেড়ে দিলেন।

ক্রিকেটভক্ত মিক জ্যাগারের পড়া স্কুলে হয়তো যাওয়া হল না কোহালিদের। কিন্তু তার জন্য ক্রিকেটীয় রুটিন থেকে তাঁদের বেরনোর উপায় নেই। আগের সেই ভারতীয় ক্রিকেটের আলসেমির সংস্কৃতি নেই যে, বৃষ্টিতে আউটডোর প্র্যাকটিস করা যাবে না বলে স্কুলের মতো ‘রেনি ডে’ পেয়ে গেলাম। বিরাট কোহালি অধিনায়ক হওয়ার পরে ফিটনেস নিয়ে আপসহীন সব ফর্মুলা এনে ফেলা হয়েছে।

যেমন প্র্যাকটিসের জন্য নির্ধারিত দিনে বৃষ্টিতে বেরনো না গেলে হোটেলে দু’বেলা ট্রেনিং করতে হবে। যাতে ঘরে শুয়ে-বসে কাটিয়ে কোনও ক্রিকেটারের ওজন না বাড়ে। অধিনায়ক কোহালি স্বয়ং যে হেতু ফিটনেস-পাগল এক ক্রিকেটার, দলের বাকিদের বাধ্য হয়ে কঠোর ফর্মুলা অনুসরণ করতেই হচ্ছে।

মঙ্গলবার তাই মিক জ্যাগারের স্কুলে যাওয়া হল না ঠিকই। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মোহময়ী ‘রোলিং স্টোন্‌স’ গ্রুপ যাঁদের বলা হচ্ছে, সেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছুটি মেলেনি। হোটেলেই ট্রেনারের অধীনে দু’বেলা ফিটনেস চর্চা করতে হল।

লন্ডনে ভারতীয় দলের এমন ফিটনেস কড়াকড়ির কথা শুনে এজবাস্টনে ভারত-পাক ম্যাচে উপস্থিত এক প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের মুখ মনে পড়ছিল। মহম্মদ আজহারউদ্দিন সে দিন মহারণ দেখতে দেখতে ভিআইপি বক্সে বসে বিস্মিত হচ্ছিলেন। বিস্ময়ের কারণ পাক ফিল্ডারদের সহজ থেকে সহজতর ক্যাচ ফেলার প্রদর্শনী। ‘‘এখনও এ রকম ক্যাচিং! আমাদের সময় ফিল্ডিং কোচও ছিল না! নিজেরাই ক্যাচিং উন্নতি করার চেষ্টায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতাম,’’ বলছিলেন আজহার।

আরও পড়ুন: অশ্বিনের ফেরা কঠিন, বিষাদ শামিকে নিয়ে

ভারতীয় ক্রিকেটে আজহারই প্রথম অধিনায়ক, যিনি দলের সার্বিক ফিটনেসকে প্রাধান্যের তালিকায় এক নম্বরে তুলে এনেছিলেন। তাঁর আমলেই ব্যাটিং-বোলিংয়ের সঙ্গে একই রকম গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয় ফিল্ডিংকে। যদি ফিল্ডিংয়ে ২৫ রান বাঁচাও, ব্যাটিংয়ে ২৫ কম করলেও জিতব— ভারতীয় ক্রিকেটে এই ভাবনার জনক ছিলেন আজহারই।

তবু তাঁর সময়ে তৈরি করা সেই ফিটনেস সংস্কৃতি সকলে যে মানতেন না, আজহার নিজেও জানেন। আর জেনেবুঝেও তিনি কিছু করতে পারেননি। তাই তাঁর সুপারফিট ভারতীয় একাদশ গড়ে তোলার স্বপ্ন অর্ধেক সফল হয়েছিল, অর্ধেক অধরাই থেকে গিয়েছিল। আজহারের পরে যাঁরা ভারত অধিনায়ক হয়েছে, তাঁরা অসামান্য ফিল্ডার কেউ ছিলেন না। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড় বা অনিল কুম্বলে। কেউ ‘গ্রেট’ ফিল্ডার নন।

আজহারের গড়ে দেওয়া ভিত্তিপ্রস্তর তাই ক্রীড়ামন্ত্রীর উদ্বোধন করে যাওয়া শিলান্যাসের মতোই একটা পাথর খণ্ড হয়ে পড়ে ছিল। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিজে অসম্ভব ফিট। তিনি অধিনায়ক থাকাকালীন ফিটনেসের ওপর জোর দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। কিন্তু ধোনি নিজেই কখনও জিমে পড়ে থাকেননি। তাই বৃষ্টিতে ঘরে শুয়ে না থেকে জিমে ওয়েট ট্রেনিংয়ের ডাক তিনি কখনও দিতে পারেননি। সচিন তেন্ডুলকরও খুব বেশিক্ষণ জিমে কাটাতেন না। কেরিয়ারের শেষের দিকটায় শুধুই এক ঘণ্টা সাইক্লিং করতেন। এটাই ছিল তাঁর ফিটনেস মন্ত্র।

ক্রিকেটের কোহালি-যুগে ধোনির হাল্কা জিম বা তেন্ডুলকরের এক ঘণ্টা সাইক্লিং-কে প্রথম মোবাইল আসার সময়কার বড় মোটোরোলা ফোন মনে হবে। এতটাই পাল্টে গিয়েছে ক্রিকেটে ফিটনেসের ভূমিকা। কোহালি কব্জির মোচড়ে হাল্কা চিপ করেও কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে দিচ্ছেন। ব্যাকফুট জ্যাব করে লং-অন দিয়ে ছক্কা মেরে দিচ্ছেন। যা দেখে মাইকেল ক্লার্ক, আজহারউদ্দিনের মতো প্রাক্তনদের চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠছে। এই শটগুলো কোহালি খেলতে পারছেন তাঁর কঠোর ফিটনেস রুটিনের জন্য। সচিনদের ক্রিকেটে শিল্পের সঙ্গে মিশত শক্তি। কোহালিদের ক্রিকেটে উল্টোটা ঘটছে। শক্তি আগে়। তার সঙ্গে মিশবে শিল্প।

পাল্টে যাওয়া এই মন্ত্র আওড়ানোর জন্য যুবরাজ সিংহের মতো প্রবীণও ছুটছেন। পঁয়ত্রিশ বছরের যুবি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে এসেছেন এত পাতলা হয়ে যে, শুরুর দিনেও এত ফিট দেখাত কি না সন্দেহ। মেদ না ঝরিয়ে উপায়ই বা কী! হার্দিক পাণ্ড্য হও কি যুবরাজ সিংহ— নির্মম ফিটনেস মডেল তোমাকে মানতেই হবে। বৃষ্টি পড়ল মানে ঘণ্টা বাজিয়ে ‘রেনি ডে’ করে দিয়ে কেএফসি অর্ডার করার জমানা আর নেই। বরং জিমে দু’বেলা ট্রেনিংয়ের ধকল নিতে তৈরি থাকো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE