Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

দেশের নিহতদের কীর্তি উৎসর্গ রশিদ খানের

ব্যাট হাতেও ধ্বংস করেছিলেন নাইটদের। চারটি ছয় ও দু’টো চার হাঁকান একাই। তার পরে বল হাতেও ক্রিস লিন, রবিন উথাপ্পা ও আন্দ্রে রাসেলেকে ফেরান।

রশিদকে ঘিরেই এ বার ট্রফির স্বপ্ন পঠানদের।

রশিদকে ঘিরেই এ বার ট্রফির স্বপ্ন পঠানদের।

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৪:৫৬
Share: Save:

তিনিই যেন এ যুগের হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। ইডেনের ৬৫ হাজার দর্শককে নিজের দিকে নিয়ে চলে এলেন একাই। রশিদ খান।

একটু আগেও ‘কে..কে..আর.... কে..কে..আর’ ধ্বনিতে বারবার কেঁপে উঠছিল যে ইডেন, সেই ইডেনেই একটি করে উইকেট নিচ্ছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের রশিদ, আর গ্যালারি ফেটে পড়ছিল তাঁর জয়ধ্বনিতে। গমগমে সাউন্ড সিস্টেমে বেজে উঠছিল ‘আফগান জলেবি, মাশুক ফরেবি, ঘায়েল হ্যায় তেরা দিওয়ানা, ভাই ওয়াহ, ভাই ওয়াহ’।

ঘায়েলই করলেন। তবে শুধু কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নয়, কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীদেরও।

ব্যাট হাতেও ধ্বংস করেছিলেন নাইটদের। চারটি ছয় ও দু’টো চার হাঁকান একাই। তার পরে বল হাতেও ক্রিস লিন, রবিন উথাপ্পা ও আন্দ্রে রাসেলেকে ফেরান। ইস্পাতকঠিন স্নায়ু নিয়ে একাই বুক চিতিয়ে দাঁড়ান নাইটদের সামনে। এক রাতেই সবার হৃদয় জিতে নিলেন ১৯ বছরের তরুণ স্পিনার। শুধু ইডেন কেন, প্রায় সওয়া দু’হাজার কিলোমিটার দূরে তাঁর দেশের মানুষের হৃদয়ও তো ছুঁয়ে ফেললেন এই ইডেনে দাঁড়িয়েই।

খেলার পরে যে তিনি আরও একটা কাণ্ড ঘটাবেন, তা কি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর দেশের মানুষ? এমন একটা স্মরণীয় পারফরম্যান্সের পুরস্কার উৎসর্গ করলেন দেশে সম্প্রতি বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি।

ক্রিকেট যে দেশে বিলাসিতা, সে রকম একটা দেশ থেকে উঠে এসেছেন। নিজের প্রতিভার ছটায় ভরিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট দুনিয়া। এই বয়সেই যশ, খ্যাতিও অর্জন করেছেন প্রচুর। তবু শিকড়কে যে ভোলেননি, এ তারই প্রমাণ। বললেন, ‘‘এই জয়টা খুব দরকার ছিল। ভাল ব্যাট করেও দারুণ লাগছে। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোচেরা বলে দিয়েছিলেন, সোজা ব্যাটে খেলবে। সেই চেষ্টাই করেছি। নিজের ক্রিকেট জীবন তো ব্যাটসম্যান হিসেবেই শুরু করেছিলাম। সেই দক্ষতাটাই কাজে লাগল এ বার। বোলিংয়ে তো বরাবরই উন্নতির চেষ্টা করি।’’

বোলিংয়ে তো মাতিয়ে দিচ্ছেনই। তবে রশিদের এই ব্যাটিং দেখে অবাক তাঁর সতীর্থরাও। ইউসুফ পাঠান বলেন, ‘‘রশিদ ব্যাটিং, বোলিং দুটোই ভাল করে। তখন ওর এই ব্যাটিং দলের প্রয়োজনও ছিল। পুরো মরসুমে ওকে ভাল বোলিং করতে দেখেছি। এ বার ভাল ব্যাটিংও করল। ও আসলে দারুণ ক্রিকেটার। বিগ ব্যাশ ও অন্যান্য লিগেও অবশ্য ও ভাল ব্যাট করেছে। সে জন্যই ওকে এক ধাপ আগে নামানোও হয়।’’

দীনেশ কার্তিক তো স্বীকার করেই নিলেন যে রশিদের কাছেই হেরে গিয়েছেন তাঁরা, বলেন, ‘‘বোলিং ছাড়াও দুর্দান্ত ব্যাটিং ও ফিল্ডিংও করেছে রশিদ। ওকেই কৃতিত্ব দেব ওদের এই জয়ের। আমরা রশিদের বোলিং ভালই সামলেছিলাম হায়দরাবাদে। ও কী রকম বোলিং করে, তা আমাদের জানা। কিন্তু যে দিন সেরা বোলিং করে, সে দিন ওকে রোখা কঠিন। তবে রবিন উথাপ্পা বাজে শট নিতে গিয়ে আউট হল। কিছু করার নেই।’’

এই কথাগুলো যখন বলছিলেন ইউসুফ, তখন ড্রেসিংরুমে নমাজ পড়ছিলেন রশিদ। ইউসুফ জানালেন, অন্যান্য ম্যাচের দিন তিনি ও রশিদ রোজা রাখলেও এ দিন রাখেননি। তাই বোধহয় ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন ড্রেসিংরুমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE