Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভারত গৌরব হয়ে কাঁদলেন হাবিব

ইস্টবেঙ্গলই ফুটবলের পীঠস্থান, বললেন চুনী

ইস্টবেঙ্গল দিবসের ক্যাচলাইন শেষ পর্যন্ত দিয়ে গেলেন মোহনবাগানের চিরকালীন ঘরের ছেলে! ‘‘আমি কোনও দিন ইস্টবেঙ্গলে খেলিনি ঠিক। কিন্তু এটা বলছি, মোহনবাগান যা-ই জিতে থাকুক বাংলার ফুটবলের পীঠস্থান ইস্টবেঙ্গল,’’ স্টেজে দাঁড়িয়ে চুনী গোস্বামী যখন লাল-হলুদকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন তখন নজরুল মঞ্চের হাজারখানেক দর্শকের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ঢেউ।

লাল-হলুদ উত্তরীয়তে চুনী গোস্বামীও।

লাল-হলুদ উত্তরীয়তে চুনী গোস্বামীও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল দিবসের ক্যাচলাইন শেষ পর্যন্ত দিয়ে গেলেন মোহনবাগানের চিরকালীন ঘরের ছেলে!
‘‘আমি কোনও দিন ইস্টবেঙ্গলে খেলিনি ঠিক। কিন্তু এটা বলছি, মোহনবাগান যা-ই জিতে থাকুক বাংলার ফুটবলের পীঠস্থান ইস্টবেঙ্গল,’’ স্টেজে দাঁড়িয়ে চুনী গোস্বামী যখন লাল-হলুদকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন তখন নজরুল মঞ্চের হাজারখানেক দর্শকের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ঢেউ।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের ‘মুখ’ দরাজ গলায় প্রশংসা করছেন, কার না ভালো লাগে!
অথচ প্রধান অতিথি হিসেবে আসা প্রাক্তন বিচারপতি, প্রাক্তন মন্ত্রী, পুরস্কার প্রাপকেরা মঞ্চে উঠলেও বিশেষ দর্শক আসনে বসেই অনুষ্ঠান দেখছিলেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান চলার মাঝেই হল ছেড়ে গটগট করে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন চুনী। গেটের বাইরেও প্রায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে যেতে দেননি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। এর পরে সরাসরি মঞ্চে তুলে এনে মোহনবাগানরত্নকে পরিয়ে দেওয়া হয় লাল-হলুদ উত্তরীয়। তুলে দেওয়া হয় পুস্পস্তবক।
বাড়ি ফিরে চুনী রাতে বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী অসুস্থ তাই চলে যাচ্ছিলাম। ওরা বলল, আমি কিছু না বলে গেলে খারাপ দেখাবে। তাই মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিলাম।’’ মঞ্চের চেয়ারে অবশ্য বসেননি চুনী। বক্তব্য শেষ করেই সটান উঠে পড়েন গাড়িতে।
ভারত গৌরব, জীবনকৃতি থেকে বর্ষসেরা ফুটবলার, রেফারি, সাংবাদিক— অনেকেই ছিলেন মঞ্চে। কিন্তু চুনী মঞ্চে ওঠার পরেই যেন গোটা আবহে বাড়তি জৌলুস! দিনের মুখ্য আকর্ষণ বড়েমিঞা হাবিব নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে আসেন। জড়িয়ে ধরেন চুনীকে। চুনী তাঁর বক্তৃতায় বলেও ফেলেন, ‘‘হাবিবকে আমি টিএফএ-তে কোচ করে এনেছিলাম ওর শৃঙ্খলা আর হার না মানা মনোভাবের জন্য। খুব বড় ফুটবলার ছিল ও।’’

আর ভারত গৌরব হাবিব? দু’লাখ টাকার চেক ও স্মারক নেওয়ার পর বক্তৃতা দিতে উঠে ‘‘ইস্টবেঙ্গলে খেলে এত ট্রফি জিতেছি। ভেবেছিলাম সবাই ভুলে গিয়েছে। এই সম্মানটা সারা জীবন মনে রাখব,’’ বলেই বুকে হাত দিলেন। পুরস্কার নেওয়ার পরের মুহূর্তে তাঁর নিজস্ব কায়দায় স্যালুট জানিয়েছিলেন হাত কপালে রেখে। এ বার প্রায় কেঁদে ফেললেন, ‘‘আমি আর কিছু বলতে পারছি না। আমার বুকের ভেতরটা আবেগে কাঁদছে।’’

সকালে ক্লাবে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল-জন্মদিনের কেক কেটে এবং পতাকা তুলে বলেছিলেন, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে কখনও পতাকা তোলার সুযোগ পাইনি। আজ পেলাম।’’ কর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন, ‘‘পরপর ছ’বার লিগ পাওয়ার বছরই ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মহমেডানে চলে গিয়েছিলাম। শুনলাম এ বার যদি ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগ পায় তা হলে আবার পরপর ছয় বছর পাবে। কর্তারা ডাকলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিন চলে আসব। এই টিমের ছেলেদের সঙ্গে সেলিব্রেট করে আমার সেই পুরনো আক্ষেপ মেটাব।’’

সেলাম ইস্টবেঙ্গল! শনিবার নজরুল মঞ্চে ভারত গৌরব হাবিব।

সকাল থেকে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি শহরের অনেক কিছুই ওলটপালট করে দিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানও যেন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামান্য হলেও অগোছাল। কোনও ঘোষণা ছাড়াই হাবিব চলে এলেন মঞ্চে। জীবনকৃতি পুরস্কার পাওয়া চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কয়েকজন পুরস্কার প্রাপকের দীর্ঘ বক্তৃতা দর্শকদের বিরক্তি বাড়িয়েছে। আরও যা দৃষ্টিকটু ঠেকেছে তা হল, হাবিবকে নিয়ে আরও একবার গৌরবান্বিত হওয়ার দিনে তাঁর প্রাক্তন মহাসতীর্থ সুধীর-গৌতম-সুভাষ-সুরজিৎ-সমরেশদের উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি।

যদিও অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বেশ আধুনিক ঢঙে। মঞ্চের দু’দিকে দুটো জায়ান্ট স্ক্রিনে এ মরসুমের প্রত্যেক ফুটবলারের ব্লো-আপ ফুটিয়ে তাঁদের একে-একে মঞ্চে এনে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সরকারি আত্মপ্রকাশ ঘটল ২০১৫-১৬ ইস্টবেঙ্গল টিমের।

চন্দনবাবু ছাড়াও এ দিন জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেরা রেফারির পুরস্কার পান উদয়ন হালদার ও সুব্রত সরকার। সেরা ক্রীড়াসাংবাদিক হিসেবে ধীমান সরকার ও চিত্রসাংবাদিক হিসেবে সুমন চট্টোপাধ্যায়কে সম্মান জানানো হয়। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান ডিফেন্ডার রবার্ট। প্রাক্তন অধিনায়ক চন্দনবাবু তাঁর পাওয়া অর্থের অর্ধেক দান করেন ইস্টবেঙ্গল-সহ ময়দানের চারটি ক্লাবের মালিদের। ইস্টবেঙ্গলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ টেস্টের ছবির উপর সচিন তেন্ডুলকরের লেখা একটি শুভেচ্ছাবার্তা সুমনবাবু তুলে দেন লাল-হলুদ কর্তাদের হাতে।

ইস্টবেঙ্গল ফ্যানস্ ক্লাব রেড অ্যান্ড গোল্ড লাভার্স ফ্যানস্ পঞ্চাশ জন অনাথ আশ্রমের শিশুকে নিয়ে এসেছিল অনুষ্ঠান দেখাতে। লাল-হলুদ পতাকা উড়িয়ে তাদের উচ্ছ্বাস আর বড়েমিঞার আনন্দাশ্রু কোথায় যেন মিলে যায়!

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chuni Goswami East Bengal reporter mohunbagan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE