দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উচ্ছ্বাস অয়ন-দানিশদের।
প্রত্যাশা মতই প্রথমবারের জন্য আই লিগ খেলার ছাড়পত্র পেয়ে গেল রিয়েল কাশ্মীর এফসি। আজ, বুধবার হিন্দুস্তান এফসি-কে ৩-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় ডিভিশন (২০১৭-১৮) আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০১৮-১৯ আই লিগের মূল পর্বে পৌঁছে গেল রিয়েল কাশ্মীর এফসি। এই প্রথম কাশ্মীরের কোনও ক্লাব আই লিগের মূল পর্বে খেলবে।
বেঙ্গালুরুর এফএসভি এরিনায় ডেভিড রবার্টসন-এর ছেলেদের আজ দরকার ছিল শুধু একটা ড্র। এক পয়েন্ট পেলেই তাঁদের লক্ষ্যপূরণ হত। কিন্তু ড্র নয়, জয় দিয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করলেন তারিক মির, দানিশ ফারুক, অয়ন দাশশর্মারা।
আজ রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র হয়ে তিনটি গোল করলেন ইফহাম তারিক মির (২২’), দানিশ ফারুক (৪২’) এবং নাডোং ভুটিয়া (৮০’)। হিন্দুস্তান এফসি-র হয়ে গোল করেন কুশন্ত চৌহান (৩৪’, ৮০’)।
আজ হিন্দুস্তান এফসি প্রথম মিনিট থেকেই ম্যাচের রাশ ধরে রেখেছিল। মুহুর্মুহু আক্রমণ উঠে আসছিল রিয়েল কাশ্মীরের বক্সে। ১৭ মিনিটের মাথায় হিন্দুস্তান এফসি-র নিখিল গেহলোত-এর মাপা ফ্রি-কিকে পবন প্রতাপ সিংহের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই প্রতিআক্রমণে উঠে এসে দানিশের পাস থেকে ইফহামের করা গোলে এগিয়ে যায় কাশ্মীরের দলটি। ২৭ মিনিটের মাথায় কুশন্ত চৌহানের জোরালো শট গোলপোস্টের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে গোলের ঠিকানা খুঁজতে বেশি দেরি করেননি কুশন্ত। ৩৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে লুজ় বল পেয়ে জালে জড়িয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান তিনি। তবে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে ফের রিয়েল কাশ্মীর এফসি-কে এগিয়ে দেন দানিশ ফারুক। ম্যাচের বয়স তখন ৪২ মিনিট। প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-১ ব্যবধানে।
দেখুন ম্যাচ জয়ের পর রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র জয়োল্লাসের ভিডিয়ো
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই যেন খোলস থেকে বেরিয়ে আসে ডেভিড রবার্টসন-এর ছেলেরা। প্রথমার্ধের ভুল-ত্রুটি শুধরে অ্যাটাকিং ফুটবল খেলা শুরু করে কাশ্মীরের দলটি। ৫৭ মিনিটে ইয়াও কৌয়াসি বার্নাড-এর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও বারবার হিন্দুস্তান এফসি বক্সে আক্রমণ চালাতে থাকেন দানিশ, বার্নাডরা। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে খেলার উত্তেজনা যখন চরমে, ঠিক সেই সময় ৬৭ মিনিটে ইফহামের ঠিকানা লেখা পাস থেকে গোল করে কাশ্মীরের দলটিকে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নামা নাডোং ভুটিয়া। যদিও শেষ কয়েক মিনিটে হিন্দুস্তান এফসি-র অল-আউট আক্রমণ থেকে ৮০ মিনিটের মাথায় ফের গোল করে যান সেই কুশন্তই। কিন্তু ততক্ষণে অভিষ্ট লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল রিয়েল কাশ্মীর এফসি। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ হয় ৩-২ ব্যবধানে। সেই সঙ্গে ফাইনাল রাউন্ডে ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে আই লিগের মূল পর্বে পৌঁছে গেল ভূস্বর্গের ক্লাবটি।
আরও পড়ুন: রক্তাক্ত কাশ্মীর ঘুরে দাঁড়াতে চায় ফুটবলকে অস্ত্র করে
আরও পড়ুন: আপনি কি ফুটবল পাগল? এই বিশ্বকাপ কুইজে নিজেকে প্রমাণ করুন
আই লিগে খেলার ছাড়পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীরের দলটির জন্য শুভেচ্ছা আসতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন(এআইএফএফ) প্রথমেই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে দেয়। এর পর এআইএফএফ সভাপতি প্রফুল্ল পটেল কাশ্মীরের দলটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, ‘‘আমি নিশ্চিত এই সাফল্য দেশের তরুণ প্রতিভাদের অনুপ্রণিত করবে এবং আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিক স্তরেও সাফল্য এনে দেবে।’’ এআইএফএফ সাধারণ সম্পাদক কুশল দাস পরবর্তী মরসুমের জন্য দলটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘‘আই লিগ আরও একটি নতুন ফুটবল কেন্দ্র পেল। এআইএফএফ-এর ফুটবল অগ্রগতির লক্ষ্য ক্রমশ উন্নীত হচ্ছে।’’
কাশ্মীর বলতেই চোখে ভেসে ওঠে অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তমাখা রাস্তা। আজ ফুটবল জগতে কাশ্মীরের এই উত্থান নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের। হিংসা ছেড়ে কাশ্মীরে এ বার শুধু ফুটবলেরই জয়গান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy