Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘রিয়ালকে মহার্ঘ্য জয় উপহার বায়ার্ন গোলরক্ষকের’

শুরু থেকেই রিয়ালের খেলার মধ্যে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। অসংখ্য মিস পাস করেছেন লুকা মদ্রিচ, টোনি ক্রোসরা। আর রক্ষণের অবস্থা তো রীতিমতো ভয়াবহ।

উল্লাস: বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার হ্যাটট্রিক রিয়াল মাদ্রিদের। ম্যাচের পরে উচ্ছ্বাস রোনাল্ডোদের। মঙ্গলবার রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে। ছবি: গেটি ইমেজেস

উল্লাস: বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার হ্যাটট্রিক রিয়াল মাদ্রিদের। ম্যাচের পরে উচ্ছ্বাস রোনাল্ডোদের। মঙ্গলবার রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে। ছবি: গেটি ইমেজেস

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ০৪:১৫
Share: Save:

লিয়োনেল মেসি না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো— কে সেরা, তা নিয়ে তর্ক কখনও শেষ হবে না। মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচ দেখার পরে লিখতে বাধ্য হচ্ছি, মানসিকতায় মেসি অনেক এগিয়ে রোনাল্ডোর চেয়ে।

মেসিকে কখনও আত্মতুষ্ট হতে দেখা যায় না। সব সময়ই ওঁর মধ্যে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা থাকে। এ এস রোমার বিরুদ্ধে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বার্সেলোনার ছিটকে যাওয়ার ম্যাচেও আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন উনি। অথচ বায়ার্নের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। মাঠে নামার আগেই যেন ধরে নিয়েছিলেন, ফাইনালে যাচ্ছে রিয়াল। পুরো ম্যাচে এক বারের জন্যও জ্বলে উঠতে দেখলাম না ওঁকে। শুধু তাই নয়। যে ভাবে ফাঁকা গোলের সামনে থেকে ক্রসবারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিলেন, তা অবিশ্বাস্য। প্রথম পর্বের ম্যাচে রোনাল্ডোকে একটু অন্য রকম ভাবে ব্যবহার করেছিলেন জিনেদিন জিদান। নিজে গোল না পেলেও দলের জয়ের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন সি আর সেভেন। এই ম্যাচে তার কোনওটাই দেখা যায়নি।

তবে একা রোনাল্ডো নন, রিয়ালের অধিকাংশ ফুটবলারদের মধ্যেই আত্মতুষ্টি প্রভাব ফেলেছিল। রাফায়েল ভারান, মার্সেলো ভিয়েরা, সের্খিয়ো রামোসদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপদ ডেকে এনেছিল। এর জন্য জিদানও দায় এড়াতে পারেন না। ম্যানেজার হিসেবে ওঁর দায়িত্ব ছিল ফুটবলাররা যাতে আত্মতুষ্ট হয়ে না পড়েন, তা দেখা। ফুটবলারদের মধ্যে জয়ের তাগিদ সঞ্চারিত করা। সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে মঙ্গলবার রাতের রিয়ালকে দেখে শুধু হতাশ নই, বিস্মিতও হয়েছি।

শুরু থেকেই রিয়ালের খেলার মধ্যে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। অসংখ্য মিস পাস করেছেন লুকা মদ্রিচ, টোনি ক্রোসরা। আর রক্ষণের অবস্থা তো রীতিমতো ভয়াবহ। রামোস, মার্সেলোর মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডাররা যেন সময় মতো ট্যাকল করতেই ভুলে গিয়েছিলেন। এই কারণেই তিন মিনিটের মধ্যে জোসুয়া খিমিচ গোল করে বায়ার্নকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। জিদানের কোচিংয়ে রিয়ালের এত খারাপ খেলা কখনও দেখেনি। তা সত্ত্বেও রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠল তিন জনের জন্য। প্রথম জন বায়ার্ন গোলরক্ষক সেন উয়েরাইস। বাকি দু’জন রিয়ালের। স্ট্রাইকার করিম বেঞ্জেমা ও গোলরক্ষক কেইলোর নাভাস! বেঞ্জেমার দু’টো গোলের জন্যই দায়ী সেনের ব্যর্থতা। ফরাসি স্ট্রাইকার প্রথম গোল করেন ১১ মিনিটে মার্সেলোর সেন্টার থেকে। বায়ার্ন গোলরক্ষক সঠিক জায়গাতেই ছিলেন না। ফলে ফাঁকা গোলে হেড করতে কোনও সমস্যাই হয়নি বেঞ্জেমার। দ্বিতীয় গোল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। কোঁহতা তুলিসোর ব্যাকপাস ধরতে গিয়ে পড়ে যান সেন। এ বারও বিনা বাধায় ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেন বেঞ্জেমা। ফরাসি স্ট্রাইকারের সব চেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলকে অনুসরণ করেন।

বেঞ্জেমার দ্বিতীয় গোলটা দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল ১৯৭৯ সালে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ডার্বি। মোহনবাগান মাঠে সেই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এ রকমই ব্যাকপাস করছিলেন গোলরক্ষক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে। যা থেকে গোল করেছিলেন মানস ভট্টাচার্য। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা এখনও সেই প্রসঙ্গ উঠলে হতাশ হয়ে পড়েন। আমার মনে হয় না বায়ার্ন সমর্থকরাও এই যন্ত্রণা সহজে ভুলতে পারবেন।

৬৩ মিনিটে হামেস রদ্রিগেস ২-২ করার পরে মনে হচ্ছিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন হয়তো অধরাই থেকে যাবে জিদানদের। তা হল না নাভাসের অসাধারণ খেলার জন্য। রিয়াল গোলরক্ষক গোটা চারেক নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন।

এক গোলরক্ষক যখন দলকে ডোবাচ্ছেন, আর এক গোলরক্ষক প্রাচীর হয়ে উঠছেন। তাই তো ফুটবল এত রোমাঞ্চকর।

রিয়াল মাদ্রিদ: কেইলোর নাভাস, লুকাস ভাসকোয়েস, রাফায়েল ভারান, সের্খিয়ো রামোস, মার্সেলো ভিয়েরা, টোনি ক্রোস, লুকা মদ্রিচ, মাতেয়ো কোভাচিচ (কাসেমিরো), মার্কো আসেন্সিয়ো (নাচো), করিম বেঞ্জেমা (গ্যারেথ বেল) ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

বায়ার্ন মিউনিখ: সেন উয়েরাইস, জোসুয়া খিমিচ, নিকলাস জুলে, ম্যাটস হুমেলস, দাভিদ আলাবা, কোঁহতা তুলিসো (জান্দ্রো ওয়াগনার), থিয়াগো আলকান্তারা, ফ্রাঙ্ক রিবেরি, থোমাস মুলার, হামেস রদ্রিগেস (জাভি মার্তিনেস) ও রবার্ট লেয়নডস্কি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE