Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘রিয়ালের খেলা হতাশ করলেও পেনাল্টিটা ঠিক’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম জুভেন্তাস ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রেফারির পেনাল্টির সিদ্ধান্ত।

হুঙ্কার: শেষ মুহূর্তে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে তুলে রোনাল্ডো। ছবি: এএফপি

হুঙ্কার: শেষ মুহূর্তে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে তুলে রোনাল্ডো। ছবি: এএফপি

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩৭
Share: Save:

নাটকীয় ম্যাচ। নাটকীয় পরিসমাপ্তি। কিন্তু এ এস রোমা হয়ে উঠতে পারল না জুভেন্তাস। শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে ধ্বংস হয়ে গেল আরও একটা ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম জুভেন্তাস ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রেফারির পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। ইতালির ফুটবলপ্রেমীরা স্বাভাবিক ভাবেই জুভেন্তাসের হারের জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে ইংল্যান্ডের রেফারি মাইকেল অলিভারকে। কিন্তু আমার মতে পেনাল্টির সিদ্ধান্তটা একেবারেই সঠিক ছিল। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে পিছন থেকে ট্যাকল করলেই ফাউল (ট্যাকল ফ্রম বিহাইন্ড)। সংযুক্ত সময়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ব্যাক হেডে বল নামিয়ে দিয়েছিল ফাঁকায় দাঁড়ানো লুকাস ভাসকোয়েসকে। কিন্তু বল ধরার আগেই পিছন থেকে এসে মেহেদি বেনাতাইয়া ট্যাকল করতে গিয়ে পা তুলে দেয় ওর বুকে। ইংল্যান্ডের রেফারির পেনাল্টি দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। টেলিভিশনে বার বার রিপ্লে দেখে স্পষ্ট, পেনাল্টির সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। এমনকী, জানলুইজি বুফনকে লাল কার্ড দেখানোও সঠিক সিদ্ধান্ত।

বুফন শুধু জুভেন্তাসের অধিনায়ক নয়, সব চেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলারও। দীর্ঘদিন ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলছে। ও কি জানে না যে, কোনও অবস্থাতেই রেফারির শরীর স্পর্শ করা যায় না? অনেকে হয়তো বলবে, ও রকম পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমি এই যুক্তি মানতে রাজি নই। বুফন থাকলে চাপ বাড়ত রোনাল্ডোরও। আর কে বলতে পারে, বুফন পেনাল্টি বাঁচাত না? রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে মাথা গরম করে আমিও বেশ কয়েকবার লাল কার্ড দেখেছি। তাতে কিন্তু ক্ষতিটা দলেরই হয়েছে। পরে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেছি, ভুল করেছিলাম মাথা গরম করে। আশা করি, বুফনেরও এই উপলব্ধি হবে।

বুফনের লাল কার্ড দেখার মতোই আমাকে অবাক করেছে রিয়ালের খেলা। জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে ওরা যে ছন্দে খেলেছিল, বুধবার রাতে ঘরের মাঠে তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি। তুরিনে সেই ম্যাচে শুরু থেকেই জুভেন্তাসের রক্ষণে হানা দিয়েছিল রোনাল্ডোরা। জর্জো কিয়েল্লিনিদের পা থেকে বড় কেড়ে নিচ্ছিল। রিয়ালের চাপেই ভেঙে পড়েছিল জুভেন্তাসের রক্ষণ। ঘরের মাঠে জিনেদিন জিদানের ছেলেরা তার কিছুই করতে পারল না। খেলাটা শুরু হওয়ার পরে মনে হচ্ছিল, জুভেন্তাসই যেন ঘরের মাঠে খেলছে। প্রথম পর্বে রিয়াল যে রণনীতি নিয়ে খেলেছিল, বুধবার রাতে সেটাই করল গঞ্জালো হিগুয়াইন, মারিও মানজুকিচরা। ফলশ্রুতি ৩৭ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় জুভেন্তাস। দু’টো গোলই করে মানজুকিচ।

রিয়ালের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা যেন ধরেই নিয়েছিল জুভেন্তাস কিছু করতে পারবে না। অকারণে দানিয়েল কার্ভাহাল, রাফায়েল ভারানরা নিজেদের মধ্যে পাস খেলছিল। এর ফলে জুভেন্তাসের ফুটবলাররা উঠে এসে রিয়ালের রক্ষণে চাপ বাড়াচ্ছিল। ৬১ মিনিটে ব্লেস মাতুইদির গোলটার কথা মনে করুন। চাপ সামলাতে না পেরে কেইলোর নাভাসের মতো গোলরক্ষকও বল হাত থেকে ফেলে দিল। হতাশ করল রোনাল্ডোও। প্রথম পর্বে বাইসাইকেল কিকে অবিশ্বাস্য গোল করেছিল সি আর সেভেন। কিন্তু এই ম্যাচে ওকে ভীষণই নিষ্প্রভ দেখিয়েছি। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই মাঝেমধ্যে ওর মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গিয়েছে। তিন-চারটে ম্যাচ হয়তো দুর্দান্ত খেলল। কিন্তু তার পরে ছন্দ হারিয়ে ফেলল। তবে কাজের কাজটা রোনাল্ডোই করল। এক) ভাসকোয়েসকে দুর্দান্ত ব্যাক হেডে বল নামিয়ে দিল। যা থেকে পেনাল্টি পেল রিয়াল। দুই) পেনাল্টি থেকে দুর্দান্ত গোল করে টানা আটবার রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে তুলল।

রিয়াল মাদ্রিদ: কেইলোর নাভাস, দানিয়েল কার্ভাহাল, রাফায়েল ভারান, সেসুস বাইয়েখো, মার্সেলো, লুকা মদ্রিচ (মাতেও কোভাচিচ), কার্লোস হেনরিক ক্যাসিমিরো (লুকাস ভাসকোয়েস), টোনি ক্রোস, ইস্কো, গ্যারেথ বেল (মার্কো অ্যাসেন্সিও) ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

জুভেন্তাস: জানলুইজি বুফন, মাত্তিয়া দে শিলিয়ো (স্টেফান লিচস্টাইনার), মেহেদি বেনাতাইয়া, জর্জো কিয়েল্লিনি, আলেক্স সান্দ্রো, স্যামি খেদিয়েরা, মিরালেম পিয়ানিচ, ব্লেস মাতুইদি, ডগলাস কোস্তা, মারিয়ো মাঞ্জুকিচ ও গঞ্জালো হিগুয়াইন
(ভোইচেক স্ট্যান্সনে)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE