নিয়মরক্ষার ম্যাচ বাকি বিশ্বের কাছে স্রেফ নিয়মরক্ষার হতে পারে। কিন্তু বিরাট কোহালির ড্রেসিংরুমে কোনও টেস্ট সিরিজেরই শেষ, নিষ্ফলা ম্যাচ অনাগ্রহের চোখে দেখা হয় না। ইনদওরের শেষ টেস্ট যেমন। ইডেনে সিরিজ ২-০ জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। উঠে এসেছে টেস্ট বিশ্বে এক নম্বরে। কিন্তু তার পরেও টিমটা ইনদওর টেস্ট নিয়ে চার্জড। কারণ বিরাট কোহালির নেতৃত্বে এই টিমটা সব ম্যাচ জিততে চায়। সব সময় নিজেদের নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে ছুড়ে ফেলতে চায়।
উদাহরণ, অধিনায়কের ডাবল সেঞ্চুরি। উদাহরণ, অজিঙ্ক রাহানের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর। উদাহরণ, টেস্টে কুড়ি নম্বর পাঁচ উইকেট হিসেব রবিচন্দ্রন অশ্বিনের।
মাত্র ৩৯টা টেস্ট খেলে কুড়ি বার পাঁচ বা তার বেশি উইকেটের মালিক হয়ে গিয়েছেন অশ্বিন। কৃতিত্বের মাপ বোঝাতে একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান যথেষ্ট। কপিল দেব ৯৮ টেস্ট খেলে কুড়ি নম্বর ৫ উইকেট শিকারের মালিক হয়েছিলেন। অনিল কুম্বলের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৭৫। আর হরভজন সিংহের লেগেছিল ৫৯টা টেস্ট।
নবরাত্রির মধ্যে ভারতের চলতি ক্রিকেট-উৎসবের নবতম নায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিন যে আধুনিক ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়। সেটা তাঁর পরিসংখ্যানের বিচারে তো বটেই। বল করার সময় সর্বদা নিজেকে আরও উন্নত করার দৃশ্যত চেষ্টার বিচারেও।
‘‘ভাল ছন্দ খুঁজে পাওয়াটা আমার কাছে খুব জরুরি। এই গোটা সিরিজে আমি ভাল ছন্দে শুরু করতে পারিনি। লাইন আর ছন্দ ঠিক করতে কয়েকটা ওভার লেগে যাচ্ছে। এটা যত করব, যত পুরো শরীর দিয়ে বল করব, শুরু তত ভাল হবে। এটা করতে পারলে স্পেলগুলো ভাল হয়। আজ লাঞ্চের পর যেটা হল,’’ এ দিন ম্যাচের শেষে বলছিলেন অশ্বিন।
যিনি খোলাখুলি মেনে নিচ্ছেন, অনিল কুম্বলেকে কোচ হিসেবে পেয়ে তিনি কতটা উপকৃত। ‘‘আলাদা আলাদা ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে কী ভাবে কী করা যায়, সেগুলো নিয়ে ভাল আলোচনা হয় আমাদের। লাঞ্চ বা চা বিরতিতে অনিল ভাই বিভিন্ন প্ল্যান দেন। কেউ যদি ভাল ব্যাট করে, তা হলে উনি বলেন ফিল্ডটা কী ভাবে আলাদা করে সাজানো যায়। ইডেনে যেমন টম ল্যাথামের শরীরের বাইরে বল করছিলাম, চা বিরতিতে উনিই সেটা করতে বলেছিলেন। আর সেটা কাজেও দিয়েছে,’’ বলে অশ্বিন যোগ করেছেন, ‘‘তা ছাড়া উনি এমন এক জন মানুষ যার কাছে গিয়ে আমি কথা বলতে পারি, মতামত নিতে পারি। অনিল ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনাগুলো দারুণ উপভোগ করি।’’
চোদ্দো বলের ব্যবধানে তিনটে উইকেট এবং একটা রান আউট— একা অশ্বিনই নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছেন। রস টেলর এবং ল্যাথামকে হাওয়ায় বিট করানো রয়েছে যার মধ্যে। তবে তার চেয়েও স্পেশ্যাল সম্ভবত বিপক্ষ ক্যাপ্টেনের উইকেট। কানপুরে যে ভাবে আউট হয়েছিলেন, অনেকটা সে ভাবেই কেন উইলিয়ামসনকে এ বারও ফেরালেন অশ্বিন। অফের বাইরে পিচ করে বল ভেতরে ঢুকে আসছিল। প্রথম টেস্টে যেটা করেননি, এ বার সেটা করতে দেখা গিয়েছে উইলিয়ামসনকে। তিনি লাইন কভার করেছিলেন, কিন্তু বাড়তি বাউন্স বুঝতে না পেরে প্লেড অন হয়ে যান। তিন ইনিংসে এই নিয়ে তৃতীয় বার বিপক্ষের সেরা ব্যাটকে ফেরালেন অশ্বিন।
‘‘যে কোনও সিরিজে নামি নির্দিষ্ট একটা প্ল্যান নিয়ে। ২০১২-’১৩-এ যখন নিউজিল্যান্ড এখানে এসেছিল, তখন বেঙ্গালুরুতে উইলিয়ামসন কী ভাবে আউট হয়েছিল, সেটা খুব ভাল করে খেয়াল করেছি। সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে ও স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিল। ও মাঝেমধ্যে অফস্টাম্পের বাইরে খেলে দেখেছি। মনে হয়েছিল এই সিরিজেও সেটা করবে,’’ বলেছেন অশ্বিন।
অতিথিদের আরও জমজমাট ‘আপ্যায়ণের’ জন্য ফলো-অন করাল না কেন টিম ইন্ডিয়া? ‘‘মুরলী বিজয় আর রোহিত শর্মা বল করার জন্য তৈরি ছিল না, তাই আমরা ব্যাট করতে নামলাম,’’ প্রথমে রসিকতা করে পরে অশ্বিনের ব্যাখ্যা, ‘‘জাডেজা আর আমি প্রায় তিরিশটা করে ওভার বল করে ফেলেছিলাম, তাই ওখান থেকে ফলো-অন করানো খুব কঠিন ছিল। ম্যাচে এখনও অনেক সময় বাকি। তাই আবার ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা বুদ্ধিমানের। হয়তো মঙ্গলবার দ্বিতীয় সেশনের অনেকটা পর্যন্ত ব্যাট করে দেখব, কতটা রান তোলা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy