Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সচিন বলেছিলেন, আগ্রাসী ধরনটাই অস্ত্র, পাল্টিও না

সব কিছু ঠিকঠাক চললে ইডেনে দেখা যাবে এই পাণ্ড্যকে। তবে ইনি হার্দিক পাণ্ড্য নন, তাঁর দাদা। বডোদরার দরিদ্র পরিবার থেকে তাঁদের উত্থান পাঠান ভাইদের পরে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন রূপকথা।

ভাই-ভাই: চোটের জন্য ভাই হার্দিক নেই, মন খারাপ ক্রুণালের। ফাইল চিত্র

ভাই-ভাই: চোটের জন্য ভাই হার্দিক নেই, মন খারাপ ক্রুণালের। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৩
Share: Save:

সব কিছু ঠিকঠাক চললে ইডেনে দেখা যাবে এই পাণ্ড্যকে। তবে ইনি হার্দিক পাণ্ড্য নন, তাঁর দাদা। বডোদরার দরিদ্র পরিবার থেকে তাঁদের উত্থান পাঠান ভাইদের পরে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন রূপকথা। হার্দিককে ক্রিকেটবিশ্ব চেনে। কিন্তু কে তাঁর দাদা? যাঁকে বিরাট কোহালিদের সংসারে টি-টোয়েন্টি দলের নতুন অস্ত্র ভাবা হচ্ছে। ভারতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার দু’দিন আগে, গত বুধবার অবশেষে তাঁকে ফোনে পাওয়া গেল। ট্রেনিং করে ফিরে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্রুণাল পাণ্ড্য বললেন তাঁর ক্রিকেট দর্শন, মাস্টারক্লাস, ধোনি-প্রেম এবং ভাইকে নিয়ে।

টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ

আমি খুবই উত্তেজিত এই সুযোগটা পেয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দলে আছি, তার পরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজেও আছি। ভারতীয় ‘এ’ দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সফরে সুযোগ পেয়েছি। তাই বড় একটা সুযোগ। আমি প্রস্তুতি নিতে শুরুও করে দিয়েছি। হালফিলে খুব বেশি টি-টোয়েন্টি খেলিনি। ওয়ান ডে খেলছিলাম। তাই কলকাতা যাওয়ার আগে অন্তত চার-পাঁচ দিনের প্রস্তুতি সেরে নিলাম। তাকিয়ে আছি এই সিরিজগুলোর দিকে।

ফর্ম্যাট অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়া

পুরো ব্যাপারটাই মানসিক। রঞ্জি ট্রফি বা চার দিনের ম্যাচে এক ধরনের মানসিকতা চাই। ওয়ান ডে-তে আর এক রকম। টি-টোয়েন্টিতে সব কিছুই খুব দ্রুতগতিতে ঘটে। তাই সেখানে অন্য রকম। আমি মনে করি না, টেকনিকে খুব বেশি বদল দরকার আছে বলে। বেশিটাই মানসিক।

দু’টো সিরিজে সুযোগ পাওয়া

অবশ্যই আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে তুলবে। নিজেকে বলতে পারছি যে, আগামী কুড়ি দিন বা এক মাস মতো সময় আমি জাতীয় দলের সঙ্গে থাকব। টি-টোয়েন্টিই শুধু খেলব এই সময়টাতে। কিন্তু আমাকে ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। বেশি দূরের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে লাভ নেই। এখন যেমন শুধুই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজটা নিয়ে ভাবছি। বিশেষ করে ইডেনে প্রথম ম্যাচ নিয়ে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্ন

আমি অত দূরের ভবিষ্যতের দিকে এখনই তাকাতে চাই না। এখনকার পৃথিবীতে থাকাটা আমার বেশি পছন্দের। তার পর দেখা যাবে।

আরও পড়ুন: নিজেই সরে যাক ধোনি, ঋষভের পক্ষে আজহার

মানসিক শক্তির অনুশীলন

ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে আমি খুব ভাল একটা জিনিস শিখেছিলাম। রাহুল স্যর বলেছিলেন, ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলতে গেলে মনের মধ্যে পরিস্থিতি ধরে ধরে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেকটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মতো। ম্যাচে যে রকম ঘটতে পারে, সেটাকে মনের মধ্যে তৈরি করে নিয়ে আমি কী ভাবে তার মোকাবিলা করতে পারি, সেটা ভেবে রাখা। আমি ব্যাট করতে গেলে কী রকম পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। বা বল করতে গিয়ে দেখলাম হয়তো কোনও উইকেটই পড়ছে না। খুব কঠিন একটা পরিস্থিতি, আমি কী করব? দু’বছর আগে এই উপদেশ পাওয়ার পর থেকে এটাই আমার মানসিক অনুশীলন।

আইপিএলের অভিজ্ঞতা

আমার ক্রিকেটজীবনে আইপিএল এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্স খুব বড় ভূমিকা পালন করেছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আমাকে এত লোকের সামনে নিজেকে মেলে ধরার মঞ্চটা দিয়েছে। এত বড় একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে সব দেশের সেরা আন্তর্জাতিক তারকারা খেলছে, সেখানে খেলার সুযোগ পাওয়াটাই একটা বড় উপহার। আইপিএলে ভাল করলে যেমন সকলের চোখে পড়া যায়, তেমনই ক্রিকেটার হিসেবে নিজের বিশ্বাসও অনেক বেড়ে যায়।

সচিনের মাস্টারক্লাস

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তো কিংবদন্তিতে ভর্তি। সচিন স্যর থেকে মাহেলা জয়বর্ধনে, যিনি এখন কোচ। লাসিথ মালিঙ্গার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এবং অবশ্যই রোহিত শর্মা, যিনি মুম্বইয়ে আমাদের ক্যাপ্টেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও নেতৃত্ব দেবেন রোহিত। প্রত্যেকটা মুহূর্তে শেখার জিনিস রয়েছে। সচিন স্যরের সঙ্গে অনেক বার কথা বলেছি। সব চেয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছি, কী ভাবে চাপের মধ্যে পড়ে উনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারতেন। সেই সব অভিজ্ঞতার কথা উনি আমাকে শুনিয়েছেন। সব চেয়ে বেশি করে বলেছেন, তোমার শরীরীভাষাটা খুব ভাল। খুব ইতিবাচক, খুব আগ্রাসী। আত্মবিশ্বাস না থাকলে এটা হয় না। এটাই তোমার সব চেয়ে বড় অস্ত্র, সব সময় এ রকম থাকার চেষ্টা করো।

দুই ভাইয়ের রসায়ন

আমাদের দু’জনের জন্যই একটা অবিশ্বাস্য ক্রিকেট অভিযান চলছে। সারা জীবন ধরেই আমরা একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট থেকে শুরু করে ক্লাব ক্রিকেট থেকে আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে— সব জায়গায় আমরা একই ড্রেসিংরুমে থেকেছি। সেই কারণে খারাপ লাগছে যে, চোটের জন্য ভাই এই সিরিজে নেই। থাকলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো ভারতের জার্সি গায়েও হয়তো আমরা একসঙ্গে খেলতে পারতাম। সেটা একটা বড় স্বপ্ন। তবে আগে আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজে একসঙ্গে টিমে থেকেছি। আমি হার্দিককে নিয়ে খুব গর্বিত। মনে করি, আমার ভাই খুব লড়াই করে দারুণ ভাবে জায়গা তৈরি করেছে।

দুই ভাইয়ের আলোচনা

খেলা থাকলে আমরা ক্রিকেট নিয়ে কথা বলি। না হলে খুব বেশি নয়। এখন যেমন আমি ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি, তাই ক্রিকেট নিয়েই কথা হচ্ছে। হার্দিক অস্ট্রেলিয়া সফর করেছে ‘এ’ দলের সঙ্গে। আমি তাই ওর থেকে শুনছি, অস্ট্রেলিয়ায় ভাল খেলতে গেলে কী কী জিনিস মাথায় রাখা দরকার। টি-টোয়েন্টিতে ওর অভিষেক হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতেই।

চাপ সামলানো

আমার সঙ্গে হার্দিকের এটা নিয়ে প্রচুর কথা হয়। কী ভাবে চাপের মুহূর্তগুলোতে ভাল করা যায়। আমরা দু’জনেই একটা ব্যাপারে একমত যে, ভাল কিছু করতে গেলে চাপের মুখে ভাল খেলে দেখাতে হবে। তবেই না লোকে তোমাকে নায়ক মানবে!

অলরাউন্ডার হওয়ার নেপথ্যে

কাকতালীয়ই বলব যে, আমরা দুই ভাই-ই অলরাউন্ডার। হার্দিক পেস বোলিং অলরাউন্ডার। আমি স্পিন বল করি। তবে দু’জনের মধ্যে একটা মিল হচ্ছে, ক্রিকেট জীবনের শুরুতে কেউ অলরাউন্ডার ছিলাম না। দু’জনেই ব্যাট করতাম। হার্দিক যেমন হঠাৎই পেস বোলিং করা শুরু করেছিল, আমিও তেমন অনেক পরে বোলিং করা শুরু করি। ব্যাটসম্যানই ছিলাম।

আদর্শ কাকে মনে করেন

টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের হয়ে খেলতে গিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে অনেকটা সময় আমি কাটিয়েছি। খুব কাছ থেকে ওঁকে দেখে মনে-মনে ভেবেছি, আমি ধোনির মতো হতে চাই। এত চাপের মুখেও কী ভাবে নিজেকে সামলে চলেছেন!

ধোনির বিশ্বকাপ জয়ের ছক্কা

আমি তখন বডোদরাতেই ম্যাচ দেখছিলাম। ২০ রান মতো বাকি থাকতেই উৎসব হয়ে গিয়েছিল। ধোনি ওই ছক্কাটা মারার পরে উচ্ছ্বাস আর কোনও বাঁধন মানেনি। সব জায়গা একদম ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ মানুষের ভিড়ে আমিও ছিলাম এক জন। আমার উপরে ওই জয়ের প্রভাব পড়েছিল খুবই। কারণ, তার আগের বিশ্বকাপে ২০০৭-এ আমরা গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিলাম। এটাও আর একটা শিক্ষা ছিল যে, ক্রিকেট মানেই উত্থান-পতন থাকবে। চার বছর আগে যারা নক-আউটে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, তারাই পরের বার চ্যাম্পিয়ন। এ জন্যই তো ক্রিকেট তুমি এত সুন্দর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE