আরফা হুসেন পারেননি। সাক্ষী মালিক পেরেছেন।
‘সুলতান’-এর আরফার স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক্সে পদক জেতা। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। রক্তের অভাবে সদ্যোজাত সন্তান মারা যাওয়ায় কুস্তিই ছেড়ে দেন আরফা।
দেশকে পদক এনে দেওয়ার আনন্দের সঙ্গে এখন তাই এই তৃপ্তিও তাঁর মন জুড়ে। আরফার স্বপ্ন পূরণের তৃপ্তি। যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন সলমন খানকে।
বৃহস্পতিবার ববিতা কুমারীর লড়াইয়ের প্রস্তুতির আগে রিওর অলিম্পিক্স ভিলেজ থেকে ফোনে এ কথা শুনিয়ে সাক্ষীর কোচ কুলদীপ মালিক বলেন, ‘‘আরফাকে নিয়ে সাক্ষীর বড় আফসোস ছিল। কতবার যে ‘সুলতান’ দেখেছে ও, তার ঠিক নেই। বারবার ওকে বলতে শুনেছি, সুলতানের জন্য আরফাকে কেন খেলা ছাড়তে হল?’’
সলমন ‘সুলতান’ খান-এর কাছে সেই অভিযোগ জানানোর সুযোগও সাক্ষী পেয়ে যান। রিও রওনা হওয়ার আগে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে। কুলদীপ বলেন, ‘‘সে দিন সাক্ষী সলমনকে বলে, ‘এটা কেন করলেন স্যর? আরফাকে কেন কুস্তি ছাড়তে হল? এটা তো আমাদের অসম্মান। আমি কিন্তু এর জবাব দেব।’ শুনে সলমন হেসে বলেছিলেন, ‘তুমি একটা মেডেল নিয়ে এসো। তার পর তোমাকে নিয়ে একটা ছবি বানাব।’’
কথা রেখেছেন সাক্ষী।
সলমন কি এ বার কথা রাখবেন?
তবে আরফার স্বপ্ন পূরণ হতে দেখে যে কতটা খুশি অনুষ্কা শর্মা, তা তাঁর হরিয়ানভি টুইটেই বোঝা গেল। লিখেছেন, ‘‘ইও সে হরিয়ানা কি শেরনি অউর ইন্ডিয়া কী জান সাক্ষী মালিক। তুমি দেখিয়ে দিলে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কম যায় না।’’
আর এক প্রতিশ্রুতি সাক্ষী দিয়েছিলেন তাঁর ছোটবেলার কোচ ঈশ্বর সিংহ দাহিয়াকে। ১৩ বছর আগে তাঁর জন্য সারা সমাজের বিরুদ্ধে লড়ে যে কোচ ভুল করেননি, তা প্রমাণ করার প্রতিশ্রুতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রোহতক থেকে মোবাইলে দাহিয়া যখন বলছিলেন, ‘‘সে দিন আখড়ার সব ছেলেরা আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল সাক্ষ্মীকে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমি ওদের বলি, তোদের অসুবিধা হলে চলে যা। মেয়েটা থাকবে’’, তখন তাঁর গলায় উত্তেজনা ঠাসা।
সুলতান ও আরফা।
সে দিনের সেই লড়াই এত দিনে জেতার পর তৃপ্ত কোচ এখন বলছেন, ‘‘সে দিন সাক্ষীকে বলেছিলাম, এই যে তোর জন্য লড়ছি, এর প্রতিদান দিতে হবে। ও দিয়েছে। এশিয়ান সাব জুনিয়র থেকে শুরু করে কমনওয়েলথ, এশিয়াডের পর এ বার অলিম্পিক্স মেডেল। এর চেয়ে ভাল জবাব আর কী হতে পারে? আর সে দিন যারা মেয়েদের আখড়ায় ঢুকতে দেবে না বলেছিল, তাদের আজ বলতে চাই, রিওয় যে মেয়েগুলো কুস্তি লড়তে গিয়েছে, তারা সবাই হরিয়ানার। সে দিন সবার কথা শুনে সাক্ষীকে আখড়া থেকে বার করে দিলে কী বড় ভুল হয়ে যেত ভাবতে পারছেন?’’
কিন্তু কেন সে দিন লড়েছিলেন সাক্ষীর হয়ে? দাহিয়া বললেন, ‘‘সে দিন বুঝেছিলাম ওর মধ্যে একটা আগুন আছে। সে জন্যই। ওকে ছেলেদের সঙ্গেই প্র্যাকটিস করাতাম। ও তাতে একটুও আপত্তি করত না। কতবার আমার আখড়ার ছেলেদের হারিয়েছে সাক্ষী, তার হিসেব নেই।’’
তবে এই আনন্দের মধ্যেও কোচের একটাই আফসোস, ‘‘ওর লড়াইয়ে যেটা দেখলে অবাক হয়ে যেত সারা বিশ্ব, সেই ‘ধোবি-পাছাড়’-টাই দেখানোর সুযোগ পেল না ও।’’ ‘ধোবি পাছাড়’ মানে ধোপার কাপড় আছাড় দেওয়ার মতো করে বিপক্ষকে উল্টে ফেলে দেওয়া। ঈশ্বর বললেন, ‘‘ওটা দেখাতে পারলে বুঝতেন সাক্ষী কতটা শক্তি রাখে ওর শরীরে।’’
কিন্তু হরিয়ানভি তরুণীর যেটুকু শক্তির সাক্ষী হল বিশ্ব, তা-ই বা কম কীসে? এতেই তো এল রিওয় ভারতের প্রথম অলিম্পিক্স পদক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy