Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কেন দেননি মোবাইল? গড়াপেটা তদন্তে গুরুতর প্রশ্নের মুখে জয়সূর্য

ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সোমবার শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার সনৎ জয়সূর্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন শাখার নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগ দায়ের করেছে।

কাঠগড়ায়: আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার নজরে জয়সূর্য। ফাইল চিত্র

কাঠগড়ায়: আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার নজরে জয়সূর্য। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৭
Share: Save:

নতুন গড়াপেটা বিতর্কে কি ফের বিদ্ধ হতে চলেছে বিশ্ব ক্রিকেট? আইসিসি-র একটি ঘোষণায় সে রকম আশঙ্কাই তৈরি হয়েছে।

ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সোমবার শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার সনৎ জয়সূর্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন শাখার নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগ দায়ের করেছে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে ম্যাচ গড়াপেটার দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছিল আইসিসি গোয়েন্দাদের একটি বিশেষ দল। সেই দলের সঙ্গে জয়সূর্য তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

আইসিসি-র পক্ষ থেকে এ দিন শুধু এটুকুই জানানো হয়েছে যে, দু’টি ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন শাখার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন জয়সূর্য। আইসিসি গোয়েন্দারা তাঁর মোবাইল চেয়েছিলেন পরীক্ষা করার জন্য। জয়সূর্য তা দিতে রাজি হননি। তদন্তে অসহযোগিতা করার মধ্যে সঠিক সাক্ষ্য না দিতে চাওয়া, তথ্যপ্রমাণ দিতে অস্বীকার করা বা এমনকি, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার চেষ্টাও থাকতে পারে বলে অভিযোগ।

আইসিসি এখনও অতটা ভেঙে বলতে না চাইলেও শ্রীলঙ্কায় ফোন করে জানা গেল, জয়সূর্যকে নিয়ে তৈরি হওয়া জট খুব সহজ-সরলও নয়। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক জন ফোনে বললেন, ‘‘মোবাইল চাওয়ার পরেও দিতে অস্বীকার করাটা মোটেও হাল্কা ভাবে নেওয়ার মতো ব্যাপার নয়। তবে কি সেই ব্যক্তি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছেন? এই প্রশ্ন ওঠাটাই তো স্বাভাবিক।’’ এখানেই না থেমে সেই কর্তা যোগ করছেন, ‘‘আমরা শুনেছি, আইসিসি ওঁর ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করতে চেয়েছে। সেটাও দিতে রাজি হননি।’’

সোমবার রাত পর্যন্ত জয়সূর্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে পাল্টা কোনও বিবৃতি দেননি। আইসিসি-র নিয়ম অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন শাখার নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য ১৫ অক্টোবর থেকে ১৪ দিন সময় পাবেন ৪৯ বছরের প্রাক্তন ক্রিকেটার। প্রথা অনুযায়ী, তাঁর জবাবদিহি পাওয়ার পরেই আইসিসি পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। তবে যদি তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করতে থাকেন এবং মোবাইল বা ল্যাপটপ তুলে দিতে অস্বীকার করেন, তা হলে নিয়ামক সংস্থা তাঁকে সাসপেন্ড করতে পারে।

তবে জয়সূর্যের ভাগ্যে শুধু হাল্কা নির্বাসনই আছে নাকি আরও বড় কোনও চাঞ্চল্য অপেক্ষা করে আছে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে দুর্নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা বিস্ফোরক সব ঘটনা ঘটে গিয়েছে। গলের প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক সাসপেন্ড হয়েছেন। একটি বিদেশি টিভি-র গোপন ক্যামেরা অভিযানে দেখা গিয়েছিল, সেই পিচ প্রস্তুতকারক গড়াপেটা করার জন্য পিচ-বিকৃতি ঘটাতে রাজি হচ্ছেন। দু’টি টেস্ট ম্যাচ নিয়ে কথা উঠেছিল। একটি শ্রীলঙ্কা বনাম অস্ট্রেলিয়া, অন্যটি শ্রীলঙ্কা বনাম ভারত। দু’টি ম্যাচই গলে হয়েছিল এবং পিচ প্রস্তুতকারকের দিকে আঙুল উঠেছিল। সেই সময় অর্জুন রণতুঙ্গা পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, গড়াপেটার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট।

চ্যানেলের গোপন ক্যামেরা অভিযানের ভিত্তিতে এর পর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে গড়াপেটার ছায়া নিয়ে তদন্তে নামে আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার বিশেষ দল। পিচ নিয়ে বিতর্কে যবনিকা পড়লেও সেই দল তাদের মতো করে তদন্ত চালিয়ে গিয়েছে। কয়েক দিন আগেই আইসিসি একটি বিবৃতি দিয়েছিল যে, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে দুর্নীতির ছায়া নিয়ে তারা মহা গুরুত্বপূর্ণ একটি তদন্ত চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রীকে পর্যন্ত সব কিছু জানানো হয়েছে।

সব চেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই যে, এই তদন্তের অংশ হিসেবেই জয়সূর্যের কাছে তাঁর মোবাইল চাওয়া হয়েছিল কি না? এবং, চাইলে কেন চাওয়া হল? আইসিসি সরকারি ভাবে বিবৃতির বেশি কিছু বলতে চাইছে না এখনই। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় তাদের দুর্নীতি দমন শাখার যে দল গিয়েছে, তাদের সঙ্গেই জয়সূর্য সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ করতে না-চাওয়া এক আইসিসি কর্তা ফোনে বললেন, ‘‘গলের পিচ বিতর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে আইসিসি দুর্নীতি দমন শাখা ঠিক করে, আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করে দেখবে। সেটা করতে গিয়েই অফিসারদের সামনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।’’

ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে দু’বার জয়সূর্য জাতীয় নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথম পর্বে ২০১৩ থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্তও তিনি প্রধান নির্বাচক ছিলেন। দ্বিতীয় পর্বে ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করার আগে পর্যন্ত নির্বাচক কমিটির প্রধান ছিলেন। জানা গিয়েছে, আইসিসি গোয়েন্দা দল যে সময়কার কয়েকটি ম্যাচ নিয়ে তদন্ত করছে, সেই সময়ে দ্বিতীয় বার জয়সূর্য নির্বাচকদের প্রধান ছিলেন।

এই সময়কার সব চেয়ে আলোচিত একটি ম্যাচ হচ্ছে হাম্বানতোতায় জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ। দুর্বল জিম্বাবোয়ের কাছে এই ম্যাচটি হেরে যায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের দল। প্রথমে ব্যাট করে বেশ মন্থর গতিতে শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে তুলেছিল ২০৩-৮। জিম্বাবোয়ে মাত্র ৩৮.১ ওভারে সেই রান টপকে যায়। এই হারের ফলে ওয়ান ডে সিরিজও অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরে যায় তারা। শ্রীলঙ্কার তথ্যাভিজ্ঞমহলে কেউ কেউ সন্দেহের চোখে দেখে এই ম্যাচের ফলাফলকে। ম্যাথিউজকে সম্প্রতি এশিয়া কাপের ব্যর্থতার পরে অধিনায়কের পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের অন্দরমহলে জয়সূর্যের নৈশজীবন এবং নারীসঙ্গ নিয়ে তৈরি হওয়া নানা বিতর্ক একটা মাথাব্যথার কারণ বলে শোনা যায়। কয়েক মাস আগেই এক মহিলার সঙ্গে তাঁর শারীরিক ঘনিষ্ঠতার অপ্রীতিকর এক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় জোর বিতর্ক হয়েছিল। আরও বড় বিতর্কের ধাক্কা আসতে চলেছে নাকি শ্রীলঙ্কার ‘তুফান’ রক্ষা পাবেন? সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE