Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্বদেশীয় বাধাতেই শেষ সোনার স্বপ্ন

অলিম্পিক্স টেনিস দল গড়া নিয়ে এত বিতর্ক-টিতর্কের পরে শেষমেশ রিও থেকে ভারতের প্রথম পদক টেনিস থেকেই হয়তো আসছে! হয়তো বলছি, শনিবার গভীর রাতে সানিয়া মির্জা-রোহন বোপান্না মিক্স়ড ডাবলস সেমিফাইনালে ৬-২, ২-৬, ১০-৩ হেরে গেলেও একটা পদকের সুযোগ থাকবে ওদের।

সানিয়া-বোপান্নার এই হাসি আর থাকল না।

সানিয়া-বোপান্নার এই হাসি আর থাকল না।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

অলিম্পিক্স টেনিস দল গড়া নিয়ে এত বিতর্ক-টিতর্কের পরে শেষমেশ রিও থেকে ভারতের প্রথম পদক টেনিস থেকেই হয়তো আসছে!

হয়তো বলছি, শনিবার গভীর রাতে সানিয়া মির্জা-রোহন বোপান্না মিক্স়ড ডাবলস সেমিফাইনালে ৬-২, ২-৬, ১০-৩ হেরে গেলেও একটা পদকের সুযোগ থাকবে ওদের। ব্রোঞ্জ প্লে-অফ ম্যাচ যদি জিততে পারে রবিবার।

মজার ব্যাপার, এই ইভেন্টে সোনা বা রুপোর মাঝে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে রয়ে গেল এক ভারতীয়ই! আরও স্পষ্ট করে লিখলে, রিওতে পদক আর সানিয়াদের মাঝে দেওয়াল হয়ে গেল ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজীব রাম। সেমিফাইনালটা যদিও একদিকে সানিয়া-বোপান্না আর এক দিকে ভেনাস-রাজীবের মধ্যে ছিল। কিন্তু উইকএন্ডের সন্ধেয় টেনিসমহলের আড্ডায় দেখলাম মেজাজটা সানিয়া আর পদকের মাঝে এক ভারতীয়— এ রকমই। আর শেষ পর্যন্ত সেটাই হল। শুরুটা দুর্দান্ত করেও সানিয়ারা আর তা ধরে রাখতে পারল না। শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষ একটা করে সেট জেতার পর টাই ব্রেকারে হেরে গেল।

টেনিস সার্কিটে মোটামুটি ঘোরাঘুরি করার সুবাদে রাজীবকে অনেক দিন চিনি। দক্ষিণ ভারতীয়। তবে ওদের দু’পুরুষ আমেরিকার বাসিন্দা। গোটা পরিবারের মার্কিন নাগরিকত্ব। বছর তিরিশ বয়স। মোটেই ফেলে দেওয়ার মতো প্লেয়ার নয়। বরং রাজীবের সিভি বেশ ভাবার মতো হওয়ার কথা সানিয়াদের কাছে। সিঙ্গলসে প্রাক্তন জুনিয়র এক নম্বর রাজীব। এখনও এটিপি সিঙ্গলস র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের প্রথম একশোর ভিতরে পড়ে। আর ডাবলসে তো স্পেশ্যালিস্ট। খুব যদি ভুল না হই, এই মুহূর্তে ডাবলসে লিয়েন্ডারের চেয়েও রাজীবের র‌্যাঙ্কিং ভাল। টিপিকাল সার্ভ-ভলি প্লেয়ার। পেশাদার ট্যুরে রীতিমতো অভিজ্ঞ। আর ভেনাসের অভিজ্ঞতা আর বিগ ম্যাচ টেম্পারামেন্টের কথা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এ রকম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হেলায় জেতাটা মোটেই মুখের কথা নয়।

একটা কথা লিখতে বসে অবাক লাগছে। অলিম্পিক্সের কী মহিমা! যা জানি, রাজীব অনেক বার এআইটিএ-র কাছে দরবার করেছিল, ভারতের হয়ে ডেভিস কাপ খেলার। কিন্তু আমাদের ফেডারেশনের গোঁ, কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশিকে এ দেশের হয়ে খেলতে গেলে তার শুধু ভারতীয় নাগরিকত্ব থাকতে হবে। ডুয়েল সিটিজেনশিপ থাকলে চলবে না। যেটার চল আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি। যে কারণে বিজয়ের ছেলে প্রকাশ অমৃতরাজ একটা সময়ের পর ভারতের হয়ে ডেভিস কাপ খেলা ছেড়ে দিল। প্রকাশের মতোই রাজীবের হয়তো মনে হয়েছে মার্কিন গ্রিন কার্ডের অসংখ্য সুযোগসুবিধে ত্যাগ করে ভারতের হয়ে কেবল ডেভিস কাপ খেলে কী লাভ?

সেই রাজীবই আজ পদক আর সানিয়াদের মাঝে দাঁড়িয়ে। ওদের মিক্সড টিমটাকে অবশ্য আমি অ্যান্ডি মারে-হেদার ওয়াটসন জুটির মতো ভাল বলব না। মানে যে ব্রিটিশ টিমকে শনিবার ভোরে কোয়ার্টার ফাইনালে ৬-৪,৬-৪ হারাল সানিয়া-বোপান্না। ওয়াটসন গত মাসেই উইম্বলডনে মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মারে যতই মিক্সড ডাবলস ম্যাচের একটু আগে হাড্ডাহাড্ডি সিঙ্গলস কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে ক্লান্ত থাক, মারে মারেই। তাদের বিরুদ্ধে সানিয়ারা প্রায় পারফেক্ট টেনিস খেলেছে। দারুণ কম্বিনেশন দেখিয়েছে। সানিয়া যেমন ফোরহ্যান্ড মেরেছে তেমনই সার্ভ করেছে। বোপান্নাও খুব ভাল খেলেছে।

আসলে ওরা বহু বছর একে অন্যের খেলাটা জানে। বহু বছর যাবত অফ সিজনে বেঙ্গালুরুতে মহেশ ভূপতির বাবা কেজি-র অ্যাকাডেমিতে সানিয়া-বোপান্না একসঙ্গে প্র্যাকটিস করে। অনেক দিন আগে বেশ ক’টা মরসুম হপম্যান কাপ টিম টেনিসে মিক্স়ড ডাবলসে সানিয়া-বোপান্নার একটাও ম্যাচ না হারার রেকর্ড আছে। তর্কে বা তুলনায় যাব না। গত বার অলিম্পিক্সে সানিয়া-লিয়েন্ডার কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি উঠেছিল। রিও-তে সানিয়া-বোপান্না এখনই সেমিফাইনালে। সঙ্গে একটা কথা বলব। সানিয়া আর লিয়েন্ডার দু’জনেই রাইট কোর্ট প্লেয়ার। সেখানে বোপান্না ডাবলসে বরাবর লেফট কোর্টে খেলে। একটু অবাক লাগলেও বলব, শনিবার সানিয়াদের টার্গেট করা উচিত ছিল ভেনাস-কে। ভেনাস নামে চমকে না গিয়ে সানিয়াদের মনে রাখা উচিত ও ডাবলস খুব কম খেলে। আর মিক্সড ডাবলস তো একদমই না। কিন্তু সেটাই পারল না সানিয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE