Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
এক নম্বর হওয়ার পরে সানিয়া

আত্মজীবনীতে লিখছি কত বাধা টপকে আমি এখানে

টেনিসে প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে অনেক নজিরই তাঁর দখলে। ডব্লিউটিএ সিঙ্গলস খেতাব। গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলসে প্রি-কোয়ার্টার খেলা। গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব। সিঙ্গলসে বিশ্বের প্রথম তিরিশের মধ্যে আসা। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ার হওয়াটা তাঁর— সানিয়া মির্জার কাছে মনে হচ্ছে ‘অপার্থিব অনুভূতি’।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

টেনিসে প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে অনেক নজিরই তাঁর দখলে। ডব্লিউটিএ সিঙ্গলস খেতাব। গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলসে প্রি-কোয়ার্টার খেলা। গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব। সিঙ্গলসে বিশ্বের প্রথম তিরিশের মধ্যে আসা। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ার হওয়াটা তাঁর— সানিয়া মির্জার কাছে মনে হচ্ছে ‘অপার্থিব অনুভূতি’।

‘‘আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত। সারা জীবন এটারই স্বপ্ন দেখেছি। সমস্ত বাধা টপকে আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি,’’ বলেছেন ডাবলসে বিশ্বের এক নম্বর। সোমবার ডাবলস বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমেরিকা থেকে নিজের শহরের ফ্লাইট ধরেছেন সানিয়া। মঙ্গলবারই হায়দরাবাদের কোর্টে নেমে পড়ছেন। মেয়েদের সর্বোচ্চ দলগত টেনিস টুর্নামেন্ট ফেড কাপের গ্রুপ ওয়ানে ভারতকে তোলার লক্ষ্যে।

গত বার সানিয়া ডাবলসে নামার আগেই সতীর্থরা দুটো সিঙ্গলসে হেরে ভারতের বিদায় নিশ্চিত করে ফেলায় তাঁর খেলা হয়নি। এ বার তাই প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে সানিয়াকে বহু বছর পর সিঙ্গলস খেলতে দেখা যেতে পারে। তবু কিছু দিন আগেও বিশিষ্ট রাজনৈতিক মহলের কটাক্ষ শুনতে হয়েছে সানিয়াকে— ‘দেশদ্রোহী’! পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে বিয়ে করায়। তারও আগে মৌলবাদী ফতোয়া জারি হয়েছিল তাঁর উপর— টেনিস স্কার্ট পরে খেলা যাবে না! এক বছর আগে টিভি সাক্ষাৎকারে কেঁদে ফেলা সানিয়া এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি আত্মজীবনী লিখছি। কয়েকটা অধ্যায় লেখা বাকি। তবে নামটা ঠিক করে ফেলেছি—এগেনস্ট অল অড্‌স। যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিবেশ আর খেলাধুলোর পরিকাঠামো থেকে আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি সেটাকে সমস্ত রকম বাধা টপকে আসাই তো বলে!’’

কেন এক নম্বর আসন তাঁর কাছে এত স্পেশ্যাল? ‘‘পঞ্চাশ বছর পরেও আমার পরিচয় দিতে গিয়ে সবাইকে বলতে হবে বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ার। এটা কেউ আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। যখন ভাবি, হায়দরাবাদে এক মুসলিম পরিবারের মেয়ে আমি গোবর দিয়ে লেপা কোর্ট বানিয়ে টেনিসটা শিখেছি, তখন সত্যিই মনে হয় সব বাধা টপকেছি। মনে হয়, মেয়ে হওয়ার দুর্বলতাটা আসলে মেয়েদের শক্তিই।’’ গত চব্বিশ ঘণ্টায় সানিয়া যে পাঁচটা টুইট করেছেন, তার ভেতর দুটো যথেষ্ট তাৎপর্যের— ‘অন টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ড!’ এবং ‘সেই মানুষগুলোকেও ধন্যবাদ দিতে চাই, যাঁরা আমাকে অবিশ্বাস করেছিলেন!’

দশ বছর আগে সানিয়া সম্পর্কে ‘টেনিসওয়ার্ল্ড’ লিখেছিল, ‘১৯৮৭-তে রমেশ কৃষ্ণনের পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস প্রি-কোয়ার্টার খেলার আশা জাগাচ্ছে এক হায়দরাবাদি টিনএজার মেয়ে— এটা পড়তে বোধহয় অবিশ্বাস্য, কিন্তু এটাই সত্যি।’ সেই বছরই যুক্তরাষ্ট্র ওপেন প্রি-কোয়ার্টারে শারাপোভাকে বেগ দিয়ে হেরেছিলেন উনিশের সানিয়া। সিঙ্গলস বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠে এসেছিলেন কেরিয়ারের সেরা ২৭-এ। কিন্তু কাঁধ, কব্জি, হাঁটু— চোট ও অস্ত্রোপচারের ধাক্কায় সিঙ্গলস ছেড়ে ডাবলসে মনোনিবেশের সিদ্ধান্ত নেন। এক সময় শারাপোভার ফোরহ্যান্ডের সঙ্গে তুলনীয়, ‘ভবিষ্যতের মার্টিনা হিঙ্গিস’ সানিয়া। আর কী কাকতালীয়! সেই হিঙ্গিসের সঙ্গেই মাত্র তেত্রিশ দিনের পার্টনারশিপে সানিয়া আজ ডাবলসে বিশ্বের এক নম্বরের আসনে।

সানিয়া বলছেন, ‘‘আগের পার্টনার হিসের সঙ্গে আমাকে ভুল দিকে খেলতে হচ্ছিল। রসায়নটা জমছিল না। আমার দরকার ছিল এক জন ফিনিশার যে আমার র‌্যালিগুলোকে পরের রিটার্নে ফিনিশ করে দেবে। মার্টিনা হল মেয়েদের সার্কিটে নেটের সামনে সর্বকালের অন্যতম সেরা হাত। সেরা ব্যাকহ্যান্ড। কোর্টে ওর মতো পরিপূরক বোধহয় আর নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE