Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সবুজ পিচে ফের সেই নির্বাচনী জট

ভয়ডর রাখলে চলবে না। শহরটার মতোই এখানকার ক্রিকেট মাঠেও ন্যাতানো, নরমসরম মনোভাবের কোনও জায়গা নেই। ঘাস যদি উড়েও যায়, ওয়ান্ডারার্সের স্বাভাবিক গতি এবং বাউন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পর পর হারে হতাশ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ছবি: বিসিসিআই।

পর পর হারে হতাশ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ছবি: বিসিসিআই।

সুমিত ঘোষ
জোহানেসবার্গ শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৯
Share: Save:

ভয়ের শহর। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হলে ডাকাবুকো হতে হবে। নরমসরম লোক দেখলেই ওরা আরও বেশি করে আক্রমণ করে।

যিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে ক্রিকেটের কোনও সম্পর্ক নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা যে বিরাট কোহালি-দের ২-০ হারিয়ে ইতিমধ্যেই সিরিজ জিতে নিয়েছে, তাতে তাঁর আগ্রহ নেই। ইনি জোহানেসবার্গের ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং সাধারণ ভাবে এখানকার রাস্তায় রাস্তায় লুকিয়ে থাকা বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিতে চান।

ভারতীয় খাদ্যের সন্ধানে বেরনোর আগে গুগ্‌ল ম্যাপ দেখে যেমন বলে উঠলেন, ‘‘জায়গাটা বিপজ্জনক।’’ তা হলে উপায়? জবাব এল, ‘‘যাওয়া যাবে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। উই হ্যাভ টু বি অ্যালার্ট।’’ এর পরেই দু’টো পরামর্শ। ‘‘রাস্তায় দাঁড়াবেন না। ওরা কিন্তু এসে ভাল মানুষের মতো কথা শুরু করে। তাতে গলে গেলেই বিপদ। বি ব্রেভ, বি পজিটিভ।’’

সাহসী থাকো, ইতিবাচক থাকো। জোহানেসবার্গে ভয়কে জয় করার দুই মন্ত্র। সত্যিই শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে কিছুটা ভিতরে অবস্থিত সেই জায়গায় নেমে দেখা গেল, আশেপাশে বেশ কিছু সন্দেহজনক মুখ। দু’একজন সাহায্য চাওয়ার আছিলায় এগিয়ে এসে কথা বলতে চাইছে। ড্রাইভারের পরামর্শ মেনে কোনও ফাঁদে পা না দিয়ে ফের ট্যাক্সিতে এসে বসে মনে পড়ে গেল ‘শোলে’-র গব্বর সিংহের সেই বিখ্যাত সংলাপ— ‘যো ডর গয়া, সো মর গয়া!’ জোহানেসবার্গের স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, এটাই এই শহরের সঙ্গে সব চেয়ে মানানসই সংলাপ।

আর ওয়ান্ডারার্সে ঢুকে এবং সারা দেশে চলতে থাকা সমালোচনার বহর বিচার করে মনে হবে, ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও গব্বর-ফর্মুলা প্রযোজ্য। এখানে প্রথমে ভয়কে জয় করতে হবে। বল-ব্যাটের লড়াই তার পর দেখা যাবে। শনিবারের যা অবস্থান— মাঠ এবং বাইশ গজ আলাদা করা যাচ্ছে না, এতটা ঘাস রয়েছে পিচে। ডারবানের পরে এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সব চেয়ে গতিসম্পন্ন এবং বাউন্সি পিচ থাকে টেস্ট ম্যাচের সময়। ওয়ান ডে-তে অন্য রকম পিচ হয়, সেখানে বড় রানের খেলা হতেও দেখা যায়। কিন্তু টেস্টের পিচে এখানকার খাড়া বাউন্স ব্যাটসম্যানদের জীবন কঠিন করে তোলে। আবার শুভলক্ষণ হচ্ছে, পঁচিশ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে দু’টি টেস্ট জিতেছে ভারত, তার একটি ওয়ান্ডারার্সে। শেষ সফরে এসে কোহালিও এখানেই টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। যে সেঞ্চুরি দেখার পরে অ্যালান ডোনাল্ড পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘‘সচিনের অধ্যাবসায় দেখলাম।’’

স্থানীয় ক্রিকেট প্রশাসনে প্রভাবশালী কারও কার মতে, টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে সেই বুধবার। তার আগে তিন-চার দিন সময় রয়েছে। এত আগে থেকে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না যে, পিচ এ রকম সবুজ থাকবেই। ভারতের পেস বোলাররাও চলতি সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেছেন। স্বয়ং এ বি ডিভিলিয়ার্স সেই কথা স্বীকার করেছেন। ভারতীয় পেসারদের জন্য কি এই সবুজ গালিচা উপহার দিতে চাইবে দক্ষিণ আফ্রিকা? দু’টি টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দু’বার করে অলআউট করেছেন ভারতীয় বোলাররা। সেই চল্লিশটি উইকেটের তেত্রিশটি নিয়েছেন পেসাররা। দুই টেস্টে সাত উইকেট পেয়েছেন একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেলা আর. অশ্বিন। এর মধ্যে সেঞ্চুরিয়নের ন্যাড়া পিচে রয়েছে পাঁচটি উইকেট। ঘাস থাকলে ফের না তাঁকে বসানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। এমনিতেই অজিঙ্ক রাহানে-কে বসানো নিয়ে উত্তাল ভারতীয় ক্রিকেট। এর পর অশ্বিনের মতো সিনিয়রকে বাইরে রাখতে হলে কোরাস আরও বাড়তে পারে শাস্ত্রী-কোহালি জুটির বিরুদ্ধে।

তবু এটা যে জোহানেসবার্গ। ভয়ডর রাখলে চলবে না। শহরটার মতোই এখানকার ক্রিকেট মাঠেও ন্যাতানো, নরমসরম মনোভাবের কোনও জায়গা নেই। ঘাস যদি উড়েও যায়, ওয়ান্ডারার্সের স্বাভাবিক গতি এবং বাউন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোহালিদের টিম ম্যানেজমেন্টের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ঘাস থাকলে ছয় ব্যাটসম্যান খেলাও। স্পিনার বাদ দিয়ে হার্দিক পাণ্ড্য-কে নিয়ে চার পেসারে নামো।

সেটা করতে যাওয়া মানে ফের বিতর্কের আগুন উস্কে দেওয়া। কারণ অশ্বিনকে বাইরে রাখতে হবে। দক্ষিণ ভারতীয় আকাশ গর্জে উঠতে পারে। কোহালি সেই সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। শাস্ত্রী ওয়াকিবহাল। এমনিতে দু’জনেই ডাকাবুকো চরিত্রের। জোহানেসবার্গে নির্ভীক হয়ে পথ চলার মন্ত্রের জন্য আদর্শ। কিন্তু এখন তাঁদের আগ্রাসন এবং দল নির্বাচন নিয়ে এমন সব কাটাছেঁড়া এবং পাল্টা মত শুরু হয়েছে যে, সেই ঝড়ের প্রভাব তাঁদের উপর পড়ে কি না, সেটাই দেখার।

জোহানেসবার্গে টেস্ট শুরুর অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘টেস্ট’। বিতর্কের ঝড় কি শান্ত করে দেবে কোহালিকে? নাকি সেই ডাকাবুকো ভঙ্গিতেই তিনি নিতে চলেছেন আর একটি কঠিন সিদ্ধান্ত?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE