Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীনি-নীতি উপড়ে ব্যক্তি শ্রীনির সম্পর্কে কৌশলী স্ট্র্যাটেজি

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— তাঁর ক্ষমতা কি আজকের পর আরও কমে গেল? রবি শাস্ত্রী— তাঁর সঙ্গে কি কোনও বিদেশি কোচকে এর পর জুড়ে দেওয়া হবে? সচিন তেন্ডুলকর— তিনি সহ তিন সদস্যের পরামর্শদাতা কমিটি যা ছিল একান্তই ডালমিয়ার মস্তিষ্কপ্রসূত, সেটা কি এ বার লুপ্ত হয়ে যাবে?

বৈঠকে ঢুকছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিষেক ডালমিয়া (বাঁ দিকে)। সঙ্গে অনুরাগ ঠাকুর এবং রাজীব শুক্ল। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

বৈঠকে ঢুকছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিষেক ডালমিয়া (বাঁ দিকে)। সঙ্গে অনুরাগ ঠাকুর এবং রাজীব শুক্ল। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

গৌতম ভট্টাচার্য
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— তাঁর ক্ষমতা কি আজকের পর আরও কমে গেল?

রবি শাস্ত্রী— তাঁর সঙ্গে কি কোনও বিদেশি কোচকে এর পর জুড়ে দেওয়া হবে?

সচিন তেন্ডুলকর— তিনি সহ তিন সদস্যের পরামর্শদাতা কমিটি যা ছিল একান্তই ডালমিয়ার মস্তিষ্কপ্রসূত, সেটা কি এ বার লুপ্ত হয়ে যাবে?

আম ভারতীয় ক্রিকেট অনুসরণকারীর আজকের দিনে এই তিনটে জিজ্ঞাসা মনে থাকতেই পারে। বা তিনের যে কোনও একটা। অথচ ৪ অক্টোবর ২০১৫-র ভারতীয় ক্রিকেটে ওপরের একটা প্রশ্নেরও উত্তর নেই।

নতুন যে শশাঙ্ক সরকার এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষমতা গ্রহণ করল, তাদের আশু কর্মসূচি অন্য সব দিকে প্রবাহিত। ক্রিকেট টিমের জেতার আগে তারা এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছে বোর্ডের ভাবমূর্তি ফেরানোকে। নীতি খুব পরিষ্কার, আগে পোকায় খেয়ে ফেলতে থাকা গাছটার ট্রিটমেন্ট তো করি। তার পর না হয় কেমন ফল-ফুল দিচ্ছে ভাবা যাবে।

সুতরাং ধোনি নন, অগ্রাধিকার পাচ্ছেন শ্রীনি।

সুতরাং শাস্ত্রীয় কোচিং পারফরম্যান্স নয়, আলোচিত হচ্ছে বোর্ড সদস্যদের আর্থিক আচরণবিধি।

রোববার দুপুরে নতুন সরকারের সর্বাধিনায়ক নির্বাচনের পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই শশাঙ্ক মনোহর এখনই করতে হবে-র যা তালিকা পেশ করলেন, তেমন ‘থিংগস টু ডু’ সর্বসমক্ষে প্রকাশের মানসিকতা অতীতের কোনও বোর্ড প্রধান দেখাননি। শশাঙ্ক আবার সময়সীমাও বেঁধে দিলেন যে, দু’মাসের মধ্যে এই সংস্কারগুলো করে দেখাবেন। আবার নাকি ভারতীয় মিডিয়ার মুখোমুখি হবেন ৪ ডিসেম্বর।

বরাবরই তিনি দাপুটে। নৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছ। আর সব কিছুতে নিজের মতো— সর্বাত্মক অরিজিন্যাল। মোবাইল ফোন রাখেন না। দ্বিতীয় বার বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেও রাখবেন না। ক্রেডিট কার্ড রাখেন না। এখনও বোর্ডের থেকে হোটেল বা ফ্লাইটের টাকা নেন না। পোশাকের ব্যাপারেও খুব ক্যাজুয়্যাল। আগের বার বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় কিছু স্যুট-টুট বা ফর্ম্যাল শার্ট বানাতে হয়েছিল। চার বছর আগে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ামাত্র সেগুলো বিলিয়ে দেন যে, এগুলো আর রেখে কী করব! এই আবার স্বামী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন দেখে স্ত্রী বর্ষা একটা জ্যাকেট আর শার্ট কিনে এনেছেন। সেটাই পরে আটান্ন বছরের শশাঙ্ক তাঁর ব্যতিক্রমী সাংবাদিক সম্মেলনটা করলেন। নাগপুর ফ্লাইট ধরতে যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে দেখলাম টাইটা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। জ্যাকেটটাও যাব-যাব করছে। ওই ট্রাউজারের ওপর না-গোঁজা হাফ-শার্টই শশাঙ্কের সহজাত আর তার বাইরে এলেই তাঁর বিরক্তি হয়।

স্টাইলটাও তেমনই রয়ে গিয়েছে— বাড়তি জৌলুস বা চাকচিক্যের কোনও দরকার নেই। সব কিছু সীমার মধ্যে থাকো আর সততার সঙ্গে মাথা উঁচু করে কাজ করো। এই ঘরানার ঠিক বিপরীতমুখী সংস্কৃতি চালু করে যিনি ভারতীয় বোর্ডে এত দিন একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, সেই নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন এ দিন মুম্বইয়ে আসেননি। কলকাতায় বৈঠকে ঢোকা নিয়ে দেড় মাস আগে এত নাটক করলেন অথচ আজকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে কাছেপিঠে নেই। যার সারসংক্ষেপ হল, হার অবশ্যম্ভাবী জেনে এই লড়াইটা কার্যত ওয়াকওভার দিলেন। যত দিন না আইনি নতুন কোনও ফন্দির খোঁজ পাওয়া যায়।

সকালে তামিলনাড়ু প্রতিনিধিকে দেখে শশাঙ্ক নাকি এক পশলা কথাও বলেন যে, মামলা-মোকদ্দমার দিকে না গিয়ে শ্রীনিকে বলুন বোর্ডের কাজে এগোতে। এতে দিন-দিন নাম আরও খারাপ হচ্ছে। এত দিন শ্রীনি সম্পর্কে অনেক আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন শশাঙ্ক। দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম ঘণ্টায় দেখা গেল স্টান্স বদলেছে। শ্রীনির পাইয়ে দেওয়ার নীতি তিনি সমূলে উৎখাত করতে চান দু’মাসের মধ্যে। কিন্তু ব্যক্তি শ্রীনিকে প্রথম রাউন্ডে সর্বাত্মক আক্রমণ না করে কৌশলী স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন।

শোনা যায় সুপ্রিম কোর্ট আমদানি করা প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও শ্রীনি সব সময় গর্ব করে বলতেন, খারাপ দিন হলে বাইশ ভোট। নর্ম্যাল গেলে চব্বিশ থেকে ছাব্বিশ। তিরিশ সদস্যের বোর্ডে তাঁর নাকি এতটাই একাধিপত্য।

তা রোববার দেখা গেল চাকা পুরো ঘুরে গিয়েছে। মনোহর-পওয়ারদের এমনিতেই আট-ন’টা কমিটেড ভোট ছিল। এই বোর্ডের চাণক্য অরুণ জেটলির সমর্থনে সেটা মোটামুটি বাইশে দাঁড়িয়েছে। তাই কর্তাদের কেউ কেউ শ্রীনির ঘনিষ্ঠতম হলেও শশাঙ্কের সর্বাত্মক সংস্কারের স্লোগানের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেননি।

অথচ নতুন প্রেসিডেন্টের স্টান্সের পুরোটাই তো প্রাক্তন জমানার বিরুদ্ধে অনাস্থা। তোমরা বদনাম করেছ, আমি নামে ফেরাতে চাইছি। তুমি নিজের জামাই সিএসকের হয়ে বেটিংয়ের অপরাধ করার পরেও তার দায় নাওনি। অথচ আমার ছেলেকে কিনা প্রথম দিনই আমি বোর্ডের লিগ্যাল কমিটি থেকে সরিয়ে দিলাম! যাতে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কোনও প্রশ্ন না ওঠে। তুমি আসলে প্রতিনিধিত্ব করছ যা কিছু অসৎ, ক্লেদাক্ত এবং আপসধর্মী, তার। আমি হলাম সেখানে সততা, বিশুদ্ধতা আর নিরপেক্ষতার প্রতিমূর্তি। শ্রীনির কতটা কালো ভাবমূর্তি, শশাঙ্ক বিলক্ষণ জানেন। তাঁকে আরও কালো দেখাতেই হয়তো প্রথম দিন এমন শুদ্ধতার অভিযান!

বোর্ডে শ্রীনি-ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন, বোর্ডটা এরা এই ভাবে ছিনিয়ে নিল। এ বার আইসিসিতে যদি ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে শ্রীনিকে না নির্বাচিত করে! তা হলে তো মৃত্যুঘণ্টা বাজবে প্রশাসক শ্রীনির। আইসিসি নিয়ে কী করা হবে, প্রথম দিন সুকৌশলে নতুন বোর্ড প্রধান এড়িয়ে গিয়েছেন। সাধারণ ভাবে এই পদটা তাঁর শ্রীনিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা নয়। যদি না জেটলিকে কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া থাকে!

শ্রীনি, তিনি কী করছেন? রাতে বারবার ফোনেও তিনি ধরেননি। দুপুরে শুধু একজন রিপোর্টার তাঁকে আচমকা পেয়ে যান। আজ সানডে, গল্ফ ডে— গল্ফ নিয়ে আছি বলে নাকি শ্রীনি লাইন কেটে দেন।

কারও কারও অবশ্য মনে হচ্ছে ক্রিকেটের ময়দান থেকে প্যাঁচ-পয়জার সমেত বহিষ্কৃত হলে অন্য কোনও খেলা তিনি বেছে নিলেই বা কী। অন্তত ধোনি-শ্রীনির যুগলবন্দিটা তো চুল্লিতে ঢুকে গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE