Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
যুব এশীয় সেরা অধিনায়কের চোখে

দ্রাবিড় স্যর আমাদের কোচ নন, দাদাও

মাত্র ১৬ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাপ্টেন! তাও আবার যে সে দল নয়, ভারত। কী ভাবে সামলাবেন? এই চিন্তায় যখন রাতের ঘুম যাওয়ার উপক্রম ছেলেটার, তখনই ত্রাতা হয়ে সামনে এলেন তিনি। রাহুল দ্রাবিড়।

অভিষেক শর্মা।

অভিষেক শর্মা।

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬
Share: Save:

মাত্র ১৬ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাপ্টেন!

তাও আবার যে সে দল নয়, ভারত।

কী ভাবে সামলাবেন? এই চিন্তায় যখন রাতের ঘুম যাওয়ার উপক্রম ছেলেটার, তখনই ত্রাতা হয়ে সামনে এলেন তিনি। রাহুল দ্রাবিড়।

বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য ক্রিকেট জীবন শুরু করা অভিষেক শর্মার কাছে তখন রাহুল দ্রাবিড় শুধু ক্রিকেট কিংবদন্তি নন, তাঁর ক্রিকেট অভিভাবক, তাঁর অধিনায়কত্বের পাঠশালার গুরুমশাইও।

ষোলো বছরের ছেলেটাই যে পারবে সদ্য জুনিয়র এশিয়া কাপ জেতা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিতে, তা রাহুলের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। জহুরির চোখ, হিরে চিনে নিয়েছিল। জাতীয় জুনিয়র সিলেকশন কমিটির এক সদস্যর মতে, ‘‘রাহুলের পরামর্শেই আমরা অভিষেককে ক্যাপ্টেন বেছেছিলাম। আমরা একটু অবাক হয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু ওর উপর রাহুলের কনফিডেন্স দেখার পর আর দ্বিধা করিনি।’’

কিন্তু ষোলো বছরের অভিষেক বেশ টেনশনে ছিলেন। পারবেন তিনি? তাঁর চেয়েও বয়সে বড় ক্রিকেটারদের ক্যাপ্টেন হয়ে দল চালাতে? তখন রাহুলই তাঁকে সাহস জোগান। শেখানও, কী ভাবে দলকে এক করে রাখতে হবে, কী ভাবে দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্য হয়ে উঠতে হবে, কী ভাবে চাপ সামলে ভাল খেলাটা ধরে রাখতে হবে এবং আরও অনেক কিছু।

অমৃতসরে মোবাইল থেকে সোমবার সন্ধ্যায় অভিষেক বলছিলেন, ‘‘পঞ্জাবের অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম ঠিকই, কিন্তু নাইন্টিনের ক্যাপ্টেন কখনও হইনি। আমার দাদার বয়সি ছেলেদের কী করে সামলাব, সেটা রাহুল স্যর এত ভাল ভাবে শিখিয়ে দেন যে, সারা টুর্নামেন্টে আমার আর কোনও অসুবিধাই হয়নি। দায়িত্ব তো একটা ছিলই। কিন্তু সেই দায়িত্ব সামলেও কী করে নিজের খেলা ধরে রাখতে হবে, তাও বলে দিয়েছিলেন রাহুল স্যর।’’ শুধু ক্যাপ্টেন নয়, দলের অন্য সদস্যদেরও আলাদা করে ডেকে নিয়মিত কথা বলাটাই রাহুলের ‘কোচিং’। প্রত্যেকের ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনা করাটাই তাঁর স্টাইল।

অভিষেক বললেন, ‘‘উনি শুধু আমাদের কোচ নন। মোটিভেশনাল গুরুও। এমন কোচ আমি জীবনে কোনও দিন পাইনি। কোচ মানে জানতাম ক্রিকেট নিয়েই সর্বক্ষণ কথা বলবেন। টেকনিকের ভুলগুলোই ঠিক করে দেবেন। কিন্তু রাহুল স্যর একেবারে আলাদা। আমরা সবাই ওঁকে দাদার মতো ভালবাসি আর বাবার মতো শ্রদ্ধা করি। ওঁর প্রত্যেকটা কথা সারাজীবন মনে রাখার মতো। আর নেটে কী সব অসাধারণ শট দেখিয়েছেন উনি। আমাদের কাছে ওগুলো অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো।’’

ছোট ছোট ছেলেগুলোর দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতি কী রকম, তা জানা নেই। কিন্তু রাহুল স্যরের জন্য যে কিছু করে দেখাতেই হবে, এ কথা ওরা সবাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।

সেই তাগিদ থেকেই বোধহয় ফাইনালে হারের মুখে চলে গিয়েও শেষ হাসি হেসে মাঠ ছাড়েন ভারতের ছেলেরা। ক্যাপ্টেনের কাছ থেকেই জানা গেল, ফাইনালের আগের রাতে রাহুল দলের ছেলেদের ডিনারে নিয়ে যান। সেখানে সবাইকে বলেন, ‘‘এ রকম মুহূর্ত জীবনে বারবার পাবে না। এনজয় করে নাও এই মুহূর্তটাকে। যাতে সারা জীবন মনে থাকে। কাল হার-জিতের কথা ভেব না। তোমরা ভাল খেললে জয় এমনিই আসবে। না এলেও কেউ কিচ্ছু বলবে না। সো গো অ্যাহেড।’’

পরের দিনই এর ফল পান হাতে নাতে। ৮১ রানে আট উইকেট ফেলে দিয়ে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এশীয় খেতাব জিতে নেন অভিষেকরা।

দলের ক্যাপ্টেন যেখানে বলছেন, ‘‘রাহুল স্যর আমাদের জন্য যা করেন, তাতে আমরা ওঁর জন্য সব কিছু করতে পারি’’, তখন আর এই দলের মোটিভেশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE