Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষুব্ধ কোহালি নিজেই গেলেন প্রস্তুতির ভাল জায়গা খুঁজতে

বৃহস্পতিবারই এজবাস্টন মাঠে প্রথম প্র্যাকটিস সেশন ছিল বিরাট কোহালিদের। আগামী ৪ জুন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখানেই ম্যাচ।

ভক্ত: প্র্যাকটিস ঘিরে অসন্তোষ থাকলেও বৃহস্পতিবার সমর্থকদের আবদার মেটাচ্ছেন বিরাট কোহালি।  ছবি: টুইটার

ভক্ত: প্র্যাকটিস ঘিরে অসন্তোষ থাকলেও বৃহস্পতিবার সমর্থকদের আবদার মেটাচ্ছেন বিরাট কোহালি। ছবি: টুইটার

সুমিত ঘোষ
বার্মিংহাম শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৫:১৫
Share: Save:

কোচ বনাম ক্যাপ্টেনের কাজিয়া নিয়ে বিতর্কের ঝড়ের মধ্যেই ভারতীয় দল নতুন এক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ল। বৃহস্পতিবারই এজবাস্টন মাঠে প্রথম প্র্যাকটিস সেশন ছিল বিরাট কোহালিদের। আগামী ৪ জুন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখানেই ম্যাচ।

কিন্তু মাঠে পৌঁছে ভারতীয় দল দেখল, তাঁদের নেট প্র্যাকটিস এরিনা ওয়ানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গাটা আয়তনে ময়দানের টাউন বা গ্রিয়ারের মতো ছোট মাঠগুলিরও অর্ধেক। দু’টো মাত্র নেট রয়েছে। ক্যাচ প্র্যাকটিস করার কোনও জায়গাই পাওয়া যাবে না। লং ক্যাচ দূরে থাক, ওয়ার্ম-আপ করার পর্যন্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।

সাধারণত প্র্যাকটিসের জায়গা ছোট হলে (তা বলে এ রকম পুঁচকে কখনও হয় না) মূল মাঠে দৌড়তে দেওয়া হয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলকে। অথবা মূল মাঠে ক্যাচ প্র্যাকটিস করারও সুযোগ পাওয়া যায়। এখানে সেটাও নাকচ করে দেওয়া হয়। আর সেটা শুনেই ক্ষেপে যায় ভারতীয় দল। সবচেয়ে ক্ষুব্ধ দেখাল কোহালিকে।

অধিনায়ক স্বয়ং রাগত ভাবে স্থানীয় আয়োজকদের বলেন, অন্য কোনও প্র্যাকটিসের জায়গা আমাকে দেখান। তাঁকে বলা হয়, আর একটিই প্র্যাকটিসের জায়গা আছে। তাতে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি চলছে, যেহেতু স্টিভ স্মিথদের শুক্রবারে ম্যাচ। নাছোড় কোহালি তবু বলেন, নিয়ে চলুন আমাকে সেখানে। স্থানীয় সংগঠক এবং নিরাপত্তারক্ষীরা মিলে ভারত অধিনায়ককে সেখানে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন: বীরুর আবেদনে নাটকীয় মোড় কোচ কাজিয়ায়

মাঠের অন্য দিকে সেই প্র্যাকটিসের জায়গা তুলনায় অনেক বড়সড়। অধিনায়ক বেশ গম্ভীর এবং রাগত চোখমুখে তা দেখে ফিরে আসার পরেই আইসিসি কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। ভারতীয় শিবিরের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হয় আইসিসি-কে যে, এত পুঁচকে একটা প্র্যাকটিসের জায়গায় প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা অন্য, বড় মাঠটাতে প্র্যাকটিস করতে চাই। কিন্তু ভারতীয় শিবিরের সেই অনুরোধ বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের সময় বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত আইসিসি শোনেনি।

ভারতীয় দলকে আইসিসি বলেছে, শুক্রবার বড় প্র্যাকটিসের জায়গাটি পাওয়া যাবে না। সেটা মিলতে পারে একমাত্র শনিবার। মানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের আগের দিনই শুধু ভাল জায়গায় প্র্যাকটিসের সুবিধে মিলতে পারে। যা শোনার পর ভারতীয় দলের অনেকেই গজগজ করছেন যে, প্র্যাকটিসের এমন অব্যবস্থা থাকবে কেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশ্ব মানের একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্টে? বিশ্বের সেরা আটটি দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। সর্বোচ্চ মানের সুযোগ-সুবিধেই তো দলগুলির জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত।

সকালে প্রথমে মাঠে এসে ছোট মাঠ দেখে এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল দল যে, কথা চলছিল আইসিসি-কে পত্রাঘাত করা হবে কি না। বোর্ড কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হয় যে, প্রয়োজনে নিয়ামক সংস্থাকে বলা হোক, এত ছোট মাঠে প্র্যাকটিস করব না আমরা। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে যুদ্ধং দেহি মনোভাব ধরে রাখা হয়নি। তবে চিঠি লিখে অভিযোগ জানানো না হলেও এ নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ গোপন করেনি ভারত। এজবাস্টন মাঠের কর্তাদের বলে আরও দু’টি নেট যোগ করার ব্যবস্থা হয়। ছোট জায়গার মধ্যে ঠাসাঠাসি করে মহড়া চলে বিরাটদের।

বিকেলের দিকে এজবাস্টনের মূল মাঠে ক্যাচ প্র্যাকটিস করতে দেখা গেল পাকিস্তানকে। যা শোনার পর ভারতীয় শিবির আরওই প্রসন্ন হবে না বলে ধরে নেওয়া যায়। লন্ডনে থাকার সময় ওভালে কোহালিদের নিরাপত্তা নিয়েও নালিশ করা হয়েছে আইসিসি-র কাছে।

নিরাপত্তার দিকটি দেখার জন্য কোহালিদের সঙ্গে আছেন দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার। আইপিএলে শ্রীসন্তদের স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তাঁর হাতেই ধরা পড়েছিল। তিনি আইসিসি-কে জানিয়েছেন, ওভালে ভারতীয় ক্রিকেটারদের শান্তি এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। সে দিকে আরও নজর দেওয়া দরকার।

ম্যাঞ্চেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে জঙ্গি হানার ঘটনার পরেই বোর্ড ঠিক করে, নীরজ কুমারকে দলের সঙ্গে রাখা হবে। দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে দেখা গেল, এ দিন বার্মিংহামের প্র্যাকটিসেও এসেছেন। আইসিসি এবং স্থানীয় নিরাপত্তা অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকও করলেন। জিজ্ঞেস করায় স্বীকার করলেন, কয়েকটি ব্যাপারে তিনি আইসিসি-কে জানিয়েছেন নজর দিতে।

কারও কারও মনে হচ্ছে, আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ড প্রশাসনিক স্তরে যে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাবেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এ সব ঘটছে কি না। ভারতীয় ক্রিকেট দল বা বোর্ডেও যে কারও মনে এমন প্রশ্ন জাগেনি, তা নয়। কিন্তু পাল্টা যুদ্ধ ঘোষণার আগে তাঁরা যতটা পারা যায় সহ্য করে দেখতে চান।

ভারত বনাম পাকিস্তান মাঠের যুদ্ধ হবে। মাঠের বাইরের বড় দ্বৈরথ সেই ভারতীয় বোর্ড বনাম আইসিসি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE