শ্রদ্ধা: গোপাল বসুর স্মরণসভায় সৌরভ। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। শুধু তাঁর আত্মার শান্তি কামনার জন্য না। তাঁর স্মৃতিতর্পণ করতেও। তাই গোপাল বসুর শোকসভায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল পরিবেশ। অনেকে তা প্রকাশ করতে না পারলেও আবেগের বাঁধ ভাঙল কারও কারও। যেমন দেবু মিত্র। বন্ধুবিয়োগের কষ্টটা চেপে রাখতে পারলেন না এক সময়ে চেতেশ্বর পূজারার কোচ। ইডেনের শোকসভায় কথা বলতে বলতে গলা বুজে এল তাঁর। চোখ ভরে উঠল জলে। শেষ পর্যন্ত, ‘‘আমি আর কিছু বলতে পারছি না’’ বলে নেমে গেলেন মঞ্চ থেকে।
ইংল্যান্ডে ছেলের কাছে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বঙ্গ কিংবদন্তি গোপালবাবু। সেই অসুস্থতাই তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় গত ২৬ অগস্ট। ‘‘ইংল্যান্ডে রওনা হওয়ার আগের রাতে আমাকে ডেকেছিল ওঁর বাড়িতে’’, বলছিলেন দেবু। বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে কফি, সিগারেট খেলাম, গল্পও করলাম অনেক। শেষে বলল, ‘অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, এ বার তুই আয়। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসি। ফের দেখা হবে। তখন কি জানতাম, আর দেখা হবে না?’’ বলতে বলতে আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। গলা বুজে এল। ছোটবেলা থেকে তাঁকে দেখেছেন যিনি, সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিব্যক্তিতেও যন্ত্রণার ছাপ। এক দিন এ ভাবে সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গোপালবাবুর প্রতি শোকবার্তা পড়তে হবে তাঁকে, তা কখনও ভাবতে পারেননি বলেই বোধহয়। বললেন, ‘‘ছোটবেলায় দেশপ্রিয় পার্কে ওঁর কোচিংয়ে প্রাকটিস করতে পাঠাতেন বাবা। তখন থেকেই ওঁকে দেখছি আমি। যখন দেশের হয়ে খেলতাম, তখনও সফল হলেই ফোন করে অভিনন্দন জানাতেন। আমাদের সৌভাগ্য যে, দু’বছর আগেই সিএবি-র জীবনকৃতি সম্মান দিয়ে দিতে পেরেছি ওঁকে। না হলে আফসোস হত।’’
সংক্ষিপ্ত শোকসভায় প্রস্তাব দেওয়া হল প্রয়াত কিংবদন্তির নামে টুর্নামেন্ট করুক সিএবি। ছোটদের টুর্নামেন্ট হলেই ভাল হয়। কারণ, তিনি ছোটদের খুব ভালবাসতেন। অথবা ইডেনের কোনও গেট বা গ্যালারি হোক গোপাল বসুর নামে। প্রস্তাবটা দেন রঞ্জিজয়ী বাংলা অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি গোপালবাবুর নেতৃত্বে রঞ্জি ট্রফি খেলেছিলেন। সম্বরণ বললেন, ‘‘উনি কোনও দিন স্কুল ক্রিকেট খেলননি। তবু কত বড় ক্রিকেটার ছিলেন। দারুণ টেবল টেনিস খেলতেন। আমার সৌভাগ্য যে বাংলার হয়ে খেলার সময় ওঁকে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছিলাম।’’
দলনেতার স্মৃতি ফিরিয়ে এনে সম্বরণ বলেন, ‘‘ওঁকে অনায়াসে স্ট্রোক খেলতে দেখে অবাক হতাম। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে অজিঙ্ক রাহানেকে নিয়ে আমাদের মধ্যে তর্ক বেধে গিয়েছিল। উনি বলেছিলেন, রাহানে ইংল্যান্ডে রান পাবে না। আমি মানিনি। যখন খবর এল উনি আর নেই, তখন ওঁর ছেলেকে ফোন করে প্রথমে কথা বলতে পারিনি। বলি, তোমাকে একটু পরে ফোন করছি। যেমন ক্যাপ্টেন, তেমন কোচ ছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy