Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Sourav Ganguly

প্রত্যাবর্তনের দাদাগিরি। কেরিয়ারে বার বার এ ভাবেই ফিরে এসেছেন সৌরভ

এক সময়ে তাঁকে বলা হত প্রত্যাবর্তনের রাজা। এই ৪৭ বছর বয়সেও বদলাননি সৌরভ।

দাদার ফিরে আসা। —ফাইল চিত্র।

দাদার ফিরে আসা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ২০:০২
Share: Save:

কেউ বলছেন, দাদা বেন স্টোকসের মতো খেললেন। আবার কেউ বলছেন, শেষ বলে ছক্কা হাঁকালেন মহারাজ। রবিবার রাত থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে এ রকম আরও কত সব কথা ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারণ একটাই। দুরন্ত ‘কামব্যাক’ ঘটিয়ে বোর্ডের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

এক সময়ে তাঁকে বলা হত প্রত্যাবর্তনের রাজা। এই ৪৭ বছর বয়সে এতটুকুও বদলাননি সৌরভ। ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানালেও ‘কিং অব কামব্যাক’ হিসেবেই থেকে গিয়েছেন তিনি। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ের এই ‘ট্র্যাক’ মোটেও পাপড়ি বিছানো ছিল না। বরং ছিল উত্থান-পতন ভরা। তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারও তো সে রকমই। এই মেঘ তো এই রোদ! একেবারে শুরুর দিন থেকেই ‘ভাগ্যের মার’ হজম করতে হয়েছে তাঁকে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার বিমানে উঠেছিলেন সৌরভ। ব্রিসবনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাত্র ৩ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মহারাজ। জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর জন্য। সব ঠিকঠাক চললে তো সেই বছরই বিশ্বকাপ খেলতে পারতেন বঙ্গতনয়। চার বছর পরে ইংল্যান্ড সফরে ফের ডাক পান সৌরভ। লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি। পরের টেস্টেও শতরান করেন সৌরভ। এর পরে জাতীয় দলে তাঁর জায়গা কেড়ে নেওয়ার সাহস কেউ আর দেখাননি।

আরও পড়ুন: বোর্ডে এখন এমার্জেন্সি চলছে, স্থিরতা ফেরাতে হবে, মনোনয়ন দিয়েই বললেন সৌরভ

২০০০ সালে ভারতীয় ক্রিকেটের কঠিন এক সময়ে দলের রিমোট কন্ট্রোল তুলে দেওয়া হয়েছিল সৌরভের হাতে। বিদেশের মাটিতে গিয়েও ভারত যে ‘বাঘ’, তা নেতা সৌরভই দেখিয়েছিলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপের কথা কে ভুলতে পারে! ২০০৫ সালে ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ করে আনা হয়েছিল। এর মস্তিষ্ক ছিলেন সৌরভই। কিন্তু, সেই সিদ্ধান্তই ‘বুমেরাং’ হয়ে ফেরে। গুরু গ্রেগের সঙ্গে সংঘাতের জেরে জাতীয় দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয় সৌরভকে। চ্যাপেলের সেই কুখ্যাত মেল মহারাজকে কলঙ্কিত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। এর পরে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের জন্য শুরু হয় এক অন্য লড়াই। ইডেন গার্ডেন্সে সকালে একা একা দৌড়তেন। বেশ কয়েক বছর আগে কঠিন সেই সব দিনের স্মৃতিচারণ করে সৌরভ বলেছিলেন, ‘‘যখনই মনে হত, আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তখন প্রচণ্ড রাগ হত। আমি আরও কয়েক পাক বেশি দৌড়ে ফেলতাম।’’

আরও পড়ুন: মধ্যরাতের নাটক! হেরে যেতে যেতেও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সৌরভ

রঞ্জি ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ২০০৭ সালে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটে সৌরভের। দক্ষিণ আফ্রিকায় কামব্যাক টেস্টে ৫১ রান করেন। সেই সিরিজে ভারত হেরে গেলেও সব চেয়ে বেশি রান করেছিলেন মহারাজই। টেস্টে দারুণ প্রত্যাবর্তনের পরে ওয়ানডে দলেও সুযোগ মেলে সৌরভের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুটো ওয়ানডে সিরিজে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় ৭০। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যান অফ দ্য সিরিজ হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভরাডুবি ঘটেছিল ভারতের। সৌরভের পারফরম্যান্স কিন্তু উজ্জ্বল ছিল। সেই বছরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন সৌরভ। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ খেলেই ব্যাট-প্যাড তুলে রাখেন সৌরভ। তাঁর অবসরের ব্যাপারে কাউকেই কিছু জানতে দেননি। অবসর পরবর্তী পর্বেও ক্রিকেট কেরিয়ারে উত্থান-পতন লেগেই ছিল সৌরভের। আইপিএল-এ ঢক্কানিনাদ করে সৌরভকে ক্যাপ্টেন করেছিল কেকেআর। সেই সৌরভকেই শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি ছেড়ে চলে যেতে হয় পুণে ওয়ারিয়র্সে। ক্রিকেটের মাঠ ছেড়ে ছ’ বছর ধরে ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভ। রবিবার সেখানেও দেখিয়ে দিলেন তিনি প্রত্যাবর্তনের রাজা হিসেবেই থেকে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sourav Ganguly BCCI BCCI President Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE