বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে গোল করে উচ্ছাস।—ছবি এএফপি
অজমেঢ়ে বসে টিভিতে ম্যাচটা দেখার আগে আমার প্রয়াত বাবার কথা মনে পড়ছিল। ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিক্সে এই বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ভারত জিতেছিল ৯-০। যে ম্যাচে একটা গোল করেছিলেন আমার বাবা প্রয়াত ধ্যানচাঁদ।
কিন্তু দিন বদলে গিয়েছে। এটা ২০১৮ সাল। হকির দুনিয়াটা এখন বদলে গিয়েছে অনেকটাই। বিশ্ব হকিতে বেলজিয়াম এখন তিন নম্বর দল। আর ভারত পাঁচ নম্বর। চার বছর আগে নেদারল্যান্ডসে আয়োজিত বিশ্বকাপে এই ম্যাচটায় ভারত হেরেছিল ২-৩। হরেন্দ্র সিংহের ভারত সেই বদলা দেশের মাটিতে নিতে পারে কি না তা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। যা হতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হল না ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। ০-১ পিছিয়ে থেকে ২-১ এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র হল ম্যাচটা।
ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আরও একটা কারণে। তা হল গ্রুপ ‘সি’ থেকে সেরা হয়ে কোন দল সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে। আর কারা ‘ক্রস-ওভার’-এর রাস্তায় পৌঁছাবে শেষ আটে। ম্যাচ ড্র হওয়ায় ভারত ও বেলজিয়াম দুই দলেরই পয়েন্ট দাঁড়াল ৪। কিন্তু গোল পার্থক্যে ভারত (৫) সুবিধাজনক জায়গায় রইল বেলজিয়ামের (১) চেয়ে। ৮ ডিসেম্বর কানাডার বিরুদ্ধে জিতলেই সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যাবে ভারত।
এ দিন ভারত-বেলজিয়াম ম্যাচটা ড্র হলেও যে অনবদ্য হকি তৃতীয় ও চতুর্থ কোয়ার্টারে খেলতে দেখলাম হরেন্দ্রের ছেলেদের, তা মন ভুলিয়ে দিয়েছে। এ রকম সাহস ও গতির আক্রমণাত্মক হকি উপভোগ করতেই তো দর্শকরা মাঠে যান।
গত বিশ্বকাপে টেরি ওয়ালশের ভারতীয় দলের সঙ্গে হরেন্দ্রের ভারতীয় দলের তফাতটা কলিজায়। এই ভারতীয় দল সহজে কাঁপে না। শেষ দুই কোয়ার্টারে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করল চিঙ্গলেনসানা, হরমনপ্রীতরাই। ভাগ্য ভাল থাকলে এই সময় আরও গোল করে ম্যাচটা জিতেও যেতে পারত ভারত।
শুরুতে একদমই খেলাটা ধরতে পারছিল না ভারতীয় মাঝমাঠ। তৃতীয় পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে বেলজিয়ামের ড্র্যাগ ফ্লিকার আলেকজান্ডার হেনড্রিক্স। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে কোনও গোল হয়নি। তৃতীয় কোয়ার্টারে যখন মাঠে নামছে তখন টিভিতে দেখলাম হরেন্দ্র বলছে, ‘‘এক গোলে পিছিয়ে থাকাটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। আরও তিরিশ মিনিটে আছেগোলটা শোধ হয়ে যাবে।’’ যা শুনে আমার মনে পড়ছিল তেতাল্লিশ বছর আগে বিশ্বকাপ হকির ফাইনালে আমাদের অধিনায়ক অজিতপাল সিংহের মুখটা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা শুরুতেই এক গোলে পিছিয়ে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার সময় আমাদের অধিনায়ক ঠিক এ ভাবেই বলেছিলেন, ‘‘বড় ব্যাপার নয়। চল, গোল শোধ হয়ে যাবে।’’ তার পরেই আগ্রাসী মেজাজে সুরজিৎ সিংহ আর আমি গোল করে বিশ্বকাপ হাতে তুলেছিলাম।
এ দিনও শেষ দুই কোয়ার্টারে মাঠে নেমে বেলজিয়ামের উপর আগ্রাসী মেজাজেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ভারতীয় দল। আসলে প্রথম দুই কোয়ার্টারে বলের দখল থাকছিল না ভারতীয়দের। অল্পস্বল্প ভুল পাসও করছিল মাঝমাঠ। কিন্তু তৃতীয় কোয়ার্টার থেকে কোঠাজিতরা দুই উইং ধরে গতিতে এমন সব আক্রমণ করতে লাগল সিমরনজিৎরা যে বেলজিয়াম রক্ষণে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। এই সময়েই পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে প্রথম গোল হরমনপ্রীতের। ৪৭ মিনিটে মনপ্রীত সিংহের সঙ্গে যুগলবন্দিতে দুরন্ত গোল সিমরনজিতের। কিন্তু খেলা শেষের চার মিনিট আগে সাইমন গোগনার্ড গোল করে ২-২ করে দেয় ম্যাচ। শেষ দিকে গোল খেলেও এ দিন দারুণ খেলল ভারতীয় রক্ষণ। প্রতিযোগিতায় গতির সঙ্গে এই পোক্ত রক্ষণটাও দরকার হরেন্দ্রের দলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy