Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
PK Banerjee

আলপিন ফুটিয়ে রক্ত বার করে শপথগ্রহণ

প্রদীপদার জন্য ১৯৬৭ সালে কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহনবাগান।

 পিকে-কে কাঁধে নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস। ফাইল চিত্র

পিকে-কে কাঁধে নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস। ফাইল চিত্র

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

প্রদীপদা (পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়) ছিলেন আমার আদর্শ। ওঁর খেলা দেখার জন্য শ্যামনগর থেকে নিয়মিত কলকাতা ময়দানে আসতাম। স্বপ্ন দেখতাম, প্রদীপদার সঙ্গে কথা বলার।

হঠাৎ এক দিন জানতে পারলাম, প্রদীপদার এক ভাই আমার মামার বন্ধু। তার পর থেকে রোজই মামাকে বলতাম প্রদীপদার সঙ্গে অন্তত একবার দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য। অনেক অনুরোধের পরে সেই সুযোগ এল। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়তাম। মামার সঙ্গে এক দিন শিয়ালদহে রেলের কোয়ার্টারে প্রদীপদার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। এবং প্রথম আলাপেই ওঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ প্রদীপদার মতো কিংবদন্তি আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে গেলেন মুহূর্তের মধ্যে। জিজ্ঞেস করলেন ফুটবল খেলি কি না। ওত বড় ফুটবলার, অথচ বিন্দুমাত্র অহঙ্কার নেই।

প্রদীপদার জন্য ১৯৬৭ সালে কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহনবাগান। নিজেদের মাঠে ইস্টার্ন রেলের বিরুদ্ধে খেলা ছিল মোহবাগানের। প্রিয় দলের খেতাব জয়ের সাক্ষী থাকতে আমিও গ্যালারিতে ছিলাম। কিন্তু প্রদীপদার গোলে হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান। সেই সঙ্গে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশাও শেষ হয়ে গেল। সে দিন খুব রাগ হয়েছিল প্রদীপদার উপরে। ভাবতে পারিনি, কয়েক বছর পরেই প্রদীপদার কোচিংয়েই খেলব।

ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে ১৯৭৬ সালে মোহনবাগানের দায়িত্ব নেন প্রদীপদা। সেই মরসুমে একাধিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম আমরা। ওঁর সব চেয়ে বড় গুণ ছিল, কার কী ভুলভ্রান্তি হচ্ছে বা কীভাবে বল মারতে হবে তা নিজে করে দেখাতেন। আর ছিল ভোকাল টনিকে ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করার আশ্চর্য ক্ষমতা। মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৭৭ সালে ইডেনে ফুটবল সম্রাট পেলের কসমসের বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ। মোহনবাগানের অধিনায়ক তখন আমি। প্রদীপদা কোচ। সম্ভবত ম্যাচের আগের দিন ধর্মতলার একটি পাঁচতারা হোটেলে ফুটবল সম্রাটের সঙ্গে আমি আর প্রদীপদা দেখা করতে গিয়েছিলাম। পেলের ঘর থেকেই বেরিয়েই প্রদীপদা বলেছিলেন, বিপক্ষে পেলে থাকলেও তা নিয়ে ভাববে না। মাথায় রাখবে, ওরা তোমার প্রতিপক্ষ। পেলেকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। প্রদীপদার ভোকাল টনিকের আর একটি চমকপ্রদ ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল। মাঠে নামার আগে ড্রেসিংরুমে আমরা তৈরি হচ্ছি। হঠাৎ প্রদীপদা নিজের হাতেই আলপিন ফুটিয়ে দিলেন। ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। আমরা আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে বললাম, এটা কী করছেন আপনি? কেউ দৌড়ল ওষুধ আর তুলো আনতে। প্রদীপদা শান্ত গলায় বললেন, এই রক্ত ছুঁয়ে তোমরা প্রতিজ্ঞা করো, আজ ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়বে।

খেলাধুলো থেকে শিল্প, সাহিত্য—সব বিষয়েই অগাধ জ্ঞান ছিল। আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন। ওঁর জন্যই এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। ভারতীয় ফুটবলে প্রদীপদা শুধু অন্যতম সেরা ফুটবলার ও কোচ নন। সেরার সেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PK Banerjee Subrata Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE