Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কাগজে নয়, খেলা হবে মাঠে, হুঙ্কার স্টিভনের

এএফসি এশিয়ান কাপে আজ জিতলেই নক-আউটে সুনীল ছেত্রীরা

মরুশহরে তাইল্যান্ডকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দুর্দান্ত অভিযান শুরু করেছেন সুনীল ছেত্রীরা।

মহড়া: কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের সামনে অস্ত্রে শান সুনীল ছেত্রীর। আবু ধাবিতে। ছবি: এআইএফএফ

মহড়া: কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের সামনে অস্ত্রে শান সুনীল ছেত্রীর। আবু ধাবিতে। ছবি: এআইএফএফ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ৭৯তম স্থানে। ভারত ৯৭ নম্বরে। কিন্তু এএফসি এশিয়ান কাপে ছবিটা কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো।

মরুশহরে তাইল্যান্ডকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দুর্দান্ত অভিযান শুরু করেছেন সুনীল ছেত্রীরা। অথচ প্রতিযোগিতার আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরশাহি প্রথম ম্যাচেই আটকে গিয়েছে। বাহরিনের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করেছে তারা। তা সত্ত্বেও ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকেই এগিয়ে রাখছেন অধিকাংশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ। এই উপেক্ষাই যেন তাতিয়ে দিয়েছে ভারতীয় দলকে।

বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় দলের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন কার্যত হুঙ্কার দিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘খেলাটা মাঠে হয়, কাগজে নয়।’’ ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এখনও পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ১৩ বার। ভারত জিতেছে মাত্র তিন বার। আট বছর আগে শেষ সাক্ষাতের ফল ছিল ২-২। স্টিভন যে অতীতের পরিসংখ্যানকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না, আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাঠে নেমে আমাদের ছেলেরা ওদের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করে।’’ এখানেই শেষ নয়। ভারতীয় দলের কোচের মতে, বৃহস্পতিবারের ম্যাচে উদ্বেগে থাকবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। স্টিভনের ব্যাখ্যা, ‘‘এশিয়ান কাপের আয়োজক এ বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। ঘরের মাঠে তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে খেলবে। তাই এই ম্যাচে ওরাই চাপে থাকবে।’’

স্টিভন মনে করছেন, জয়ের জন্য মরিয়া সংযুক্ত আরব আমিরশাহি শারীরিক ফুটবল খেলবে। যদিও তিনি দাবি করলেন, একেবারেই উদ্বিগ্ন নন। বলেছেন, ‘‘সংযুক্ত আরব আমিরশাহি শুধু শারীরিক ভাবে শক্তিশালী নয়, দারুণ দক্ষও। কিন্তু আমার দলের ফুটবলারদের যা ফিটনেস, তাতে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।’’

এএফসি এশিয়ান কাপে ‘এ’ গ্রুপে তিন পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে ভারত। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে এক পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে বাহরিন ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার জিতলেই নক-আউটে যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়বেন সুনীলেরা। কারণ, ১৯৬৪ সালে এশিয়ান কাপে ভারত রানার্স হলেও অংশ নিয়েছিল মাত্র চারটি দল। ১৯৮৪ ও ২০১১ সালে প্রথম পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিল ভারত। তবে এ বার ড্র করলেও গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

এশিয়ান কাপ দেখতে আবু ধাবি পৌঁছে যাওয়া শ্যাম থাপা, আই এম বিজয়নের মতো প্রাক্তন তারকারা আশাবাদী ভারতের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার ব্যাপারে। বুধবার ফোনে শ্যাম থাপা বলছিলেন, ‘‘আগের ম্যাচে দুর্দান্ত জয় আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। এই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে জিততে সমস্যা হবে না।’’ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে ভারত শেষ বার জিতেছিল ২০০১ সালে। তবে সেই ম্যাচে বিজয়ন, ভাইচুং ভুটিয়াকে ছাপিয়ে গোল করে জুলস আলবার্তো নায়ক হয়েছিলেন। বিজয়নের মতে বৃহস্পতিবার ভারতের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তিনি বলেছেন, ‘‘তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে অসাধারণ খেলেছে ভারতীয় দল। সাম্প্রতিক কালে এটাই সেরা পারফরম্যান্স। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ঘরের মাঠে খেললেও আমাদের দল তৈরি।’’

আট বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে শেষ দ্বৈরথে ভারতের হয়ে একটি গোল করেছিলেন জেজে লালপেখলুয়া। অন্যটি করেন গৌরমাঙ্গি সিংহ। চলতি এশিয়ান কাপেও জেজে দুরন্ত ছন্দে। আগের ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নেমে গোল করেছিলেন তিনি। তবুও জেজেকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত নন স্টিভন। তিনি বলেছেন, ‘‘জেজে অসাধারণ ফুটবলার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক কালে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ ও পায়নি। তাই জেজেকে এমন জায়গায় খেলানো উচিত, যেখান থেকে ও সহজে গোল করতে পারে।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওর গোল মুগ্ধ করেছে।’’

জেজের মতো সুনীলও ছিলেন আট বছর আগের সেই ম্যাচে। যদিও তিনি গোল পাননি। তবে এই মুহূর্তে বিধ্বংসী মেজাজে ভারতীয় ফুটবলের সফলতম স্ট্রাইকার। তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে টপকে গিয়েছেন লিয়োনেল মেসিকে। তাঁকে নিয়ে স্থানীয় সমর্থকদের মধ্যেও উন্মাদনা তুঙ্গে। দিন দু’য়েক আগে সুনীলের সঙ্গে দেখা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এক মহিলা সমর্থক সাইকা কোরা চলে গিয়েছিলেন আবু ধাবিতে ভারতীয় দলের হোটেলে। সুনীলের সংক্ষিপ্ত ভিডিয়ো সাক্ষাৎকারও নেন তিনি। সুনীলকে ভারতের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘আপনি হিন্দি বলতে পারেন?’’ হাসতে হাসতে সুনীলের উত্তর, ‘‘অল্প অল্প পারি!’’ এর পরেই তিনি একেবারে সাংবাদিকের মতো প্রশ্ন করেন, ‘‘ভারত বনাম সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচে জিতবে কে?’’ সুনীলের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনি বলুন তো কে জিতবে?’’ সাইকার ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘ড্র। ফল ১-১।’’ ভক্তকে নিরাশ করেননি সুনীলও। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘‘ঠিক আছে ড্র-ই হোক।’’ এর পরেই আসল চমক। ‘সারে জাহাঁ সে অচ্ছা’ গান গাইতে শুরু করেন সাইকা। বিস্মিত সুনীলও গলা মেলান ভক্তের সঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিয়ো পোস্ট করে সাইকা লেখেন, ‘‘অবশেষে দেখা হল সুনীলের সঙ্গে। পরের ম্যাচের জন্য ওকে শুভেচ্ছা।’’

সুনীলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত স্টিভনও। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের জন্য গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু নন, জাতীয় কোচ অধিনায়ক নির্বাচিত করলেন সুনীলকেই। স্টিভন বলেছেন, ‘‘জাতীয় দলের হয়ে সুনীল সব সময়ই নিজেকে উজাড় করে দেয়। অসাধারণ গোলের নজির রয়েছে ওর। সুনীলের জন্যই আমরা আরও ভাল দল হিসেবে গড়ে উঠেছি।’’

ইতিহাস গড়তে সুনীলই অস্ত্র স্টিভনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sunil Chhetri Football AFC Asian Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE