Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বিসিসিআই, তোপ সুপ্রিম কোর্টের

ইডেনে বিশ্বকাপ ফাইনালে কার্লোস ব্রেথওয়েটের হাতে যে হালটা হয়েছিল বেন স্টোকসের, প্রায় সে রকমই অবস্থা হল বিসিসিআইয়ের। আর এখানে ব্রেথওয়েটের ভূমিকায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৯
Share: Save:

ইডেনে বিশ্বকাপ ফাইনালে কার্লোস ব্রেথওয়েটের হাতে যে হালটা হয়েছিল বেন স্টোকসের, প্রায় সে রকমই অবস্থা হল বিসিসিআইয়ের। আর এখানে ব্রেথওয়েটের ভূমিকায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি টিএস ঠাকুর এবং এফএমআই খলিফুল্লাহকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ তীব্র ভর্ৎসনা করে বিসিসিআইকে। আদালতের মূল বক্তব্য ছিল, অনুদানের টাকা আদৌ বোর্ডের অনুমোদিত সংস্থাগুলির মধ্যে ঠিকঠাক ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে না। বিহার ক্রিকেট সংস্থার মতো অনেক সংস্থা একটা টাকাও পায়নি। আবার অনেক সংস্থাকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আদালত পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, বোর্ড যে ভাবে কাজ করছে, সেটা আদতে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া।

আদালতের এই তীব্র আক্রমণের মুখে রীতিমতো দিশেহারা দেখিয়েছে বোর্ডের আইনজীবীদের। বোর্ডের একাংশের আশা ছিল, এ দিন তাদের যুক্তি শুনে কিছুটা নরম হবেন বিচারপতিরা। কিন্তু ব্রেথওয়েট মার্কা ভয়ঙ্কর আক্রমণ যে ধেয়ে আসবে, সেটা তারা বুঝতেই পারেনি।

লোঢা কমিটি যে সুপারিশ করেছিল, তার কিছু মেনে নেওয়া হলেও সব প্রয়োগ করা সম্ভব নয় বলে সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিল বোর্ড। তাতে বোর্ডের পরিচালন ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিসিসিআই। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। উল্টে ‘এক রাজ্য এক ভোট’ নীতি থেকে সরতে নারাজ সুপ্রিম কোর্ট। সে ক্ষেত্রে বাংলা থেকে ভোটাধিকার থাকবে সিএবি-রই, এনসিসি-র নয়। একই ভাবে গুজরাত এবং মহারাষ্ট্র থেকে একটি সংস্থাই ভোট দিতে পারবে।

বোর্ডকে ‘পারস্পরিক লাভজনক সংস্থা’ বলেও এ দিন কটাক্ষ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়েছে, সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশাল টাকা বন্টন করা হয়েছে, কিন্তু জানতে চাওয়া হয়নি কী ভাবে সেই টাকা কাজে লাগানো হচ্ছে। কোনও রকম দায়ভার না নিয়েই ‘ফান্ড’ বন্টন করা হয়েছে। এ এক রকম দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেওয়া।

তবে নতুন করে বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার পর শশাঙ্ক মনোহর কিন্তু পরীক্ষিত হিসাব পেশ করেছিলেন। বোর্ডের নতুন করে ‘অডিটেড অ্যাকাউন্ট’ অনলাইনেও দেখা যাবে বলেছিলেন। কিন্তু ঘটনা হল, সুপ্রিম কোর্ট শশাঙ্ক-জমানার শুদ্ধকরণকে হিসেবের মধ্যে রাখেনি। অতীতে যে ভাবে বোর্ড কাজ করেছে, সে সব মাথায় রেখেই নিজেদের বক্তব্য শুনিয়েছে। যা দেখে শুনে বোর্ডের একাংশ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে— এ সব দুর্নীতি ঘটেছে সেই শ্রীনিবাসনের জমানায়। শ্রীনি যা করে গিয়েছেন, তার ফলেই এখন জেরবার হতে হচ্ছে বোর্ডকে।

এত দিন বিহার ক্রিকেট সংস্থার হয়ে গলা ফাটিয়ে এসেছিলেন যিনি, সেই সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা এই খবরে যথেষ্ট খুশি। রাতে ফোনে বললেন, ‘‘দেশের সর্বোচ্চ আদলত যা বলেছে, আমি তো সেটা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি। বিহারের মতো এত বড় একটা রাজ্য কিন্তু তাদের অনুমোদন নেই, বোর্ড অর্থও দেয় না। এ বার সেই কথাটাই যখন সুপ্রিম কোর্ট বলছে সবার সেটা কানে যাবে।’’

বোর্ডকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করার পর এ দিন লোঢা কমিটির প্রশংসা করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, ‘‘এটা কোনও সাধারণ প্যানেল নয়। আমাদের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে কমিটির উপর। বিচারকদের নিয়ে তৈরি প্যানেলের উপর আস্থা রাখতে হবে। আমরা এটা বলতে পারব না, কমিটি যা বলছে সেটা ন্যায্য নয়। দয়া করে বলবেন না লোঢা কমিটির সুপারিশ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।’’

সর্বোচ্চ আদালতের আরও প্রশ্ন, ‘‘পূর্ণসদস্য ও ভোটাধিকার থাকা সদস্য হিসেবে গুজরাত কেন ৬০ কোটিরও বেশি টাকা পাচ্ছে, গোয়া যার জনসংখ্যা ১০ লাখও নয় তারা কেন ৫৭ কোটি টাকা পাবে আর বিহার পাবে না?’’ জবাবে বোর্ডের আইনজীবী কেকে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘বিহার অ্যাসোসিয়েট সদস্য। তা ছাড়া ওরা আয়-ব্যায়ের হিসেব দিতে অস্বীকার করেছে। ক্রিকেট নিয়ে কতটা কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তার উপরই ফান্ড থেকে কত অর্থ বরাদ্দ হবে সেটা ঠিক করা হয়।’’

বেঞ্চ তখন প্রশ্ন তোলে, ‘‘রেলওয়ে স্পোর্টস প্রমোশন বোর্ড তা হলে পূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও কোনও অর্থ পায় না কেন?’’ বোর্ড উত্তরে জানায়, ‘‘রেলের কোনও আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নেই।’’ পাল্টা তখন সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে, ‘‘তা হলে ত্রিপুরাকে, যার জনসংখ্যা ২৫ লাখ, কেন আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হওয়ার আগে ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হল?’’

মঙ্গলবারের পর বিসিসিআই এখন সর্বোচ্চ আদালতের প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ব্যস্ত। আগামী ৮ এপ্রিল ফের শুনানি। তখন বোঝা যাবে, সুপ্রিম কোর্টের তীব্র আক্রমণ সামলানোর মতো নতুন কোনও বর্ম খুঁজে পেল কি না বিসিসিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court BCCI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE