Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পদক না পেলে চা-বাগানেই ফিরতেন স্বপ্না

বুধবার হেপ্টাথলনে ছয় হাজারের মাইলস্টোন টপকে ইতিহাস গড়ে সোনা জিতলেও পদক গলায় ঝোলাতে পারেননি বঙ্গকন্যা। ডোপ টেস্ট রাত পর্যন্ত শেষ না হওয়ায়।

তৃপ্তি: সোনার পদক নিয়ে কোচের সঙ্গে স্বপ্না। —নিজস্ব চিত্র।

তৃপ্তি: সোনার পদক নিয়ে কোচের সঙ্গে স্বপ্না। —নিজস্ব চিত্র।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

জাকার্তা এশিয়াডে পদক না পেলে ট্র্যাকে আর নামবেন না, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন স্বপ্না বর্মণ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে বিজয়মঞ্চ থেকে নামার পর জাকার্তা থেকে ফোনে সোনার মেয়ে বলে দিলেন, ‘‘পদকটা নেওয়ার সময় দারুণ একটা অনুভূতি হচ্ছিল। কেমন একটা শিরশিরানি অনুভব করছিলাম। বিশ্বাস করুন, প্রতিদিন অনুশীলনে নেমে এত যন্ত্রণা হত যে, পদক না জিতলে অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে গ্রামে গিয়ে চা-বাগানে কাজ করব ঠিক করে ফেলেছিলাম।’’

বুধবার হেপ্টাথলনে ছয় হাজারের মাইলস্টোন টপকে ইতিহাস গড়ে সোনা জিতলেও পদক গলায় ঝোলাতে পারেননি বঙ্গকন্যা। ডোপ টেস্ট রাত পর্যন্ত শেষ না হওয়ায়। এ দিন বিকেলে ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এই সময়টার জন্য রাতে ঘুমোতে পারেননি স্বপ্না। বলছিলেন, ‘‘কীভাবে ঘুমোব? দাঁতের যন্ত্রণা, তায় কোমর-পিঠে ব্যথা। মনে পড়ছে, অনুশীলনের সময় গোড়ালিতে যন্ত্রণা হত বলে আমি আটশো মিটার দৌড়তে চাইতাম না। স্যার (সাই কোচ সুভাষ সরকার) জোর করতেন, ‘পদক পেতে হলে তোকে দৌড়তেই হবে।’ প্রচণ্ড রাগ হত। কাঁদতে কাঁদতে দৌড় শেষ করে হস্টেলে ফিরে যেতাম। কত বার ভেবেছি হস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যাই। মনে পড়ছিল মা-বাবার কথা। ওরা তো আর এশিয়াডের গুরুত্ব বোঝেন না। প্রথম হলেই খুশি হন।’’ জলপাইগুড়ির রাজবংশী পরিবারের মেয়ে হঠাৎই কেমন যেন আনমনা।

চকোলেট খেয়ে খেয়ে দাঁত নষ্ট করে ফেলেছেন। সংক্রমণ এতটাই তীব্র যে, ডান দিকের প্রায় সব দাঁতই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ডান গালে লাল ব্যান্ডেজ বেঁধে স্বপ্নার জাতীয় পতাকা ওড়ানোর ছবি দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন। এ দিন দুপুরে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর আজ শুক্রবার চারটি দাঁত তোলা হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দাঁতের সমস্যা মিটলেও কোমর ও গোড়ালির অস্ত্রোপচার করতে হবে তাঁর। ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ফিরে কয়েক দিন বিশ্রাম নেবেন বাংলার নতুন তারকা। তার পর মুম্বইতে যাবেন অস্ত্রোপচার করাতে। যা খবর, তাতে অন্তত চারটি ছোট-বড় অস্ত্রোপচার করতে হবে তাঁর শরীরে। সে জন্যই ২০১৮ তো বটেই, ২০১৯-এও কোনও প্রতিযোগিতায় ছাত্রীকে নামাবেন না, ঠিক করে ফেলেছেন স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকার। বলে দিলেন, ‘‘২০১৯-এ কোনও বড় টুর্নামেন্ট নেই। তাই ঠিক করেছি, ওকে একেবারে অলিম্পিক্সের জন্য তৈরি করব। সুস্থ না করে মাঠে নামাব না।’’ স্বপ্নার দু’পায়ে ছ’টি করে আঙুল। সে জন্য দৌড়তে সমস্যা হয়। স্প্রিন্ট ইভেন্টে পিছিয়ে পড়ছে। তাই তাঁকে বিদেশের কোনও স্প্রিন্ট অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যেতে চান সুভাষবাবু। স্বপ্না অবশ্য বলছিলেন, ‘‘অলিম্পিক্সে পদকের স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন দেখলে এবং সেটা সফল না হলে খুব কষ্ট হয়।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে দশ লাখ টাকা পুরস্কার এবং সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন এ দিন। দেওয়া হবে বড় সংবর্ধনাও। যা শুনে স্বপ্নার প্রতিক্রিয়া, ‘‘হরিয়ানা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এশিয়া়ডে সোনা জিতলে তো কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে শুনছি। মমতা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা হলে বলব, আমরা খুব গরিব। বাবা-মা খুব কষ্ট করে গ্রামে থাকে। আমাকে কলকাতায় থেকে অনুশীলন করার জন্য একটু থাকার জায়গা দিন।’’ ইতিমধ্যেই দু’টি তেল কোম্পানি, একটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন স্বপ্না। বললেন, ‘‘রাজ্য সরকার আমাকে চাকরি দেবে বলছে, আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমি কোথায় চাকরি করব, স্যরই ঠিক করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swapna Tea Garden Asian Games 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE