Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
কল্যণীতে মাথায় আঘাত বিদর্ভের ব্যাটসম্যানের

ফের ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই মনোজদের

লাঞ্চের পরেই এই ঘটনার পরে কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, আর একটা ফিল হিউজ কাণ্ড নয় তো?

সফল: বিদর্ভের অক্ষয় ওয়াখড়েকে ফিরিয়ে অভিষেক ঘটানো বাংলার পেসার ঈশান পোড়েলের উচ্ছ্বাস। শুক্রবার কল্যাণীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সফল: বিদর্ভের অক্ষয় ওয়াখড়েকে ফিরিয়ে অভিষেক ঘটানো বাংলার পেসার ঈশান পোড়েলের উচ্ছ্বাস। শুক্রবার কল্যাণীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

ঈশান পোড়েলের বাউন্সারটা আদিত্য সরওয়াটের হেলমেটে লাগতেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন বিদর্ভের ব্যাটসম্যান। প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে হয় তাঁকে।

লাঞ্চের পরেই এই ঘটনার পরে কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, আর একটা ফিল হিউজ কাণ্ড নয় তো?

পরে অবশ্য মাঠে ফিরে ব্যাটিং, ফিল্ডিং দুটোই করেন সরওয়াটে। ক্রমশ সকালের সেই আতঙ্ক কর্পূরের মতো উবে যায় ঠিকই। কিন্তু বিকেলে যে আতঙ্ক নেমে এল জেলা শহরের এই ক্রিকেট কেন্দ্রে, তা শেষ পর্যন্ত কাটবে কি? বিদর্ভের আঘাতে বাংলা এই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাবে না তো?

মাথায় ৪৯৯ রানের বোঝা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে বাংলার প্রায় দু’ঘণ্টার ব্যাটিংয়ের পরে শেষ বিকেলে এমনই ভয় গঙ্গাপাড়ের শহরের এই মাঠে।

হবে নাই বা কেন? অভিমন্যু ঈশ্বরণ ইনিংসের চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ হন ললিত যাদবের গুড লেংথ বলে। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর বলেই ফেরেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। পরের বলেই অভিষেক রামন প্রায় আত্মঘাতী শটে বোলার অক্ষয় ওয়াখড়ের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান।

দিনের শেষে বাংলা ৮৯-৩। মনোজ তিওয়ারি, কৌশিক ঘোষেরা ক্রিজে। ড্রেসিংরুমে ব্যাট হাতে নামার অপেক্ষায় ঋদ্ধিমান সাহা, শ্রীবৎস গোস্বামী। কিন্তু সামনে যে রানের পাহাড়। কল্যাণীর এই উইকেটে তৃতীয় ও চতুর্থ দিন ব্যাট করে এই রান উঠবে তো? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

এই মাঠে বহু ম্যাচ খেলা ঈশান পোড়েল দিনের শেষে বলছিলেন, ‘‘আমার যতদূর অভিজ্ঞতা আছে, তাতে বলতে পারি, তৃতীয় দিন থেকে এখানকার উইকেটে বল ঘোরে।’’ বিদর্ভের সর্বোচ্চ স্কোরার সঞ্জয় রামস্বামীও বলে দিলেন, ‘‘উইকেটের যা অবস্থা দেখছি, তাতে কাল দ্বিতীয় সেশন থেকে বল ঘুরবে বোধহয়। আমাদের দু’জন স্পিনার আছে। ওরা পিচ থেকে সাহায্য পেলে নিশ্চয়ই বাংলাকে চাপে ফেলতে পারব।’’ উইকেটের একদিকে আবার পেসারদের ছাড়া ফুটমার্কও তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই ফুটমার্ক স্পিনাররা নিশ্চয়ই কাজে লাগাবেন।

তবে শনিবার বিদর্ভ শিবিরের প্রধান কাজ যে মনোজ তিওয়ারির উইকেট তোলা, তা সাফ জানিয়ে দিলেন ১৮২ রান করা সঞ্জয়।

শুক্রবার সকালের উপর ম্যাচের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলেই আগের দিন জানিয়েছিলেন বাংলার কোচ সাইরাজ বাহুতুলে। বঙ্গ ড্রেসিংরুমেও যে এই রিংটোনই ছিল এ দিন সকালে, তা বোঝা যায় তাঁদের বোলিং দেখে। সঙ্গে আগ্রাসন। কণিষ্ক শেঠ প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন ওয়াসিম জাফরকে। অশোক ডিন্ডা ফেরান বিপক্ষের চার ও আট নম্বর ব্যাটসম্যানকে।

দিনের সেরা বোলার অবশ্য ঈশান পোড়েল। চার শিকার তাঁর। একটি পেয়েও পাননি ইংরেজ আম্পায়ার মার্টিন জন স্যাগার্সের ভুলে। বিদর্ভের সর্বোচ্চ স্কোরার সঞ্জয় রামস্বামীর ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা হয়ে গিয়েছিল ঋদ্ধিমান সাহার হাতে। অনভিজ্ঞতা প্রথম দিন যাঁর সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, চন্দননগরের সেই ঈশানই এ দিন নিজেকে বদলে নিয়ে ঝলসে ওঠার চেষ্টা করছিলেন মাঝে মাঝে। প্রায়ই বাউন্সার দিচ্ছিলেন ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ধরানোর জন্য। দিনের খেলা শেষে বললেন, ‘‘কাল খেলার পরে কোচ, ক্যাপ্টেন আমাকে প্রচুর উৎসাহ জোগান। এটা আমার চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে। আমি এমনিতেই একটু আগ্রাসী। ব্রেট লি ও ডেল স্টেইনের ভক্ত আমি। ওঁদের দেখেই শিখেছি ফাস্ট বোলারদের আগ্রাসী না হলে চলে না।’’ কে বলবে প্রথম রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নেমেছে ছেলেটা।

সকালে তাঁর যে বাউন্সারটা আদিত্য সরওয়াটের হেলমেটে সপাটে গিয়ে লাগে, তার পরে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিজের উপরই বসে পড়েন তিনি। বাংলার ক্রিকেটাররা ছুটে যান সেখানে। প্রাথমিক পরিচর্যার পরে উঠে দাঁড়ালেও তার পরে কোনও রকমে তিনটে বল খেলে আর ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি তরুণ ব্যাটসম্যান। প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে বাধ্য হন। বিদর্ভ শিবির থেকে পরে জানা যায় সুস্থই রয়েছেন তিনি। ক্রিজে ফিরে আরও ২৯ রান করে সেই ঈশানেরই বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান সরওয়াটে। পরে ফিল্ডিং, বোলিংও করেন।

কিন্তু চারটে উইকেট নেওয়ার পরেও উৎসাহ ও উত্তেজনার পারদ এতটাই চড়ে গিয়েছিল তাঁর যে, পরপর বাউন্সার দিতে শুরু করেন। ব্যাটসম্যানরা সেগুলো ছাড়তেই থাকেন। উইকেট পাওয়ার মতো বল তখন কমই দিলেন। এ ভাবেই বিদর্ভের স্কোর পাঁচশোর দিকে চলে যায়। এই নিয়ে ঈশানের বক্তব্য, ‘‘আমাদের তখন পরিকল্পনাই ছিল ওভারে অন্তত দু’টো করে বাউন্সার দেব। ব্যাটসম্যানদের ওভাবেও আউট করা যেত। তবে ওরা ভাল ব্যাটিং করেছে, এটা স্বীকার করতেই হবে।’’

ব্যাটিংয়ের পরে এ বার বিদর্ভের বোলিংয়েরও না প্রশংসা করতে হয় বাংলা শিবিরকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE