Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জয়ের মধ্যেই নতুন প্রজন্ম নিয়ে তল্লাশি

এক দিকে চলতি সিরিজের বাকি দুই টেস্টের ভাবনা ও প্রস্তুতি চলবে। অন্য দিকে ভবিষ্যতের রাস্তায় দলকে আরও মজবুত করার পরিকল্পনাও নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় চিন্তার হাত ধরেই পৃথ্বী শ এবং হনুমা বিহারীর মতো দুই তরুণ প্রতিভা ইংল্যান্ডে বাকি দুই টেস্টের দলে ঢুকে পড়লেন।

ভারতীয় দলে নতুন মুখ পৃথ্বী শ এবং হনুমা বিহারী। ছবি পিটিআই।

ভারতীয় দলে নতুন মুখ পৃথ্বী শ এবং হনুমা বিহারী। ছবি পিটিআই।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

একটা চোখ বর্তমানে। অন্যটা ভবিষ্যতে। ট্রেন্ট ব্রিজে টেস্ট জেতার মধ্যেও এই দুই লক্ষ্যের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না ভারতীয় দলে।

এক দিকে চলতি সিরিজের বাকি দুই টেস্টের ভাবনা ও প্রস্তুতি চলবে। অন্য দিকে ভবিষ্যতের রাস্তায় দলকে আরও মজবুত করার পরিকল্পনাও নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় চিন্তার হাত ধরেই পৃথ্বী শ এবং হনুমা বিহারীর মতো দুই তরুণ প্রতিভা ইংল্যান্ডে বাকি দুই টেস্টের দলে ঢুকে পড়লেন।

ট্রেন্ট ব্রিজে জিতলেও সহজে ভুলে যাওয়ার উপায় নেই যে, প্রথম দুই টেস্টে এজবাস্টন এবং লর্ডসে কী হয়েছে। এই দু’টি টেস্ট পরাজয় বেশ কিছু দুর্বল দরজায় করাঘাত করে গিয়েছে। যেমন ওপেনারদের নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এম বিজয় প্রায় সাত-আট বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়ে ফেলেছেন। বেশ কিছু সময় ধরেই তাঁর ব্যাটে অন্ধকার। তরুণ রক্তের জন্য তাঁকে তাই জায়গা করে দিতেই হল।

বিজয়কে গত কাল টেস্ট জেতার আনন্দের মধ্যেও বেশ মনমরা লাগছিল। এমনিতেই তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সুযোগ পান না। শুধুই টেস্ট খেলেন। সেই দল থেকেও বাদ পড়ে গেলেন মানে তাঁর ক্রিকেটজীবনেই অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিল। সামনের দিকে তাকানোর ব্যাপারে মোটামুটি যা আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বিজয় যদি ভারতীয় দলে ফিরে আসেন, অবাকই হতে হবে। পৃথ্বী শ-কে নিয়ে শুধু মুম্বই বা ভারতীয় ক্রিকেট মহলেই নয়, আগ্রহ তৈরি হয়েছে কোহালিদের দলের মধ্যেও। ট্রেন্ট ব্রিজে শিখর ধওয়ন এবং কে এল রাহুলের ওপেনিং জুটি ভালই করেছে। এই মুহূর্তে তাঁরাই খেলবেন। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যে এ বারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক পৃথ্বী যোগ্য বিকল্প, তা নিয়ে কারও সংশয় নেই। মুম্বইয়ের নতুন বিস্ময় প্রতিভাকে তাই তৈরি করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।

হেড কোচ রবি শাস্ত্রী নিজে মুম্বইয়ের হাড়ভাঙা, হার-না-মানা মানসিকতায় বড় হওয়া ক্রিকেটার। তিনি পৃথ্বীর সম্পর্কে খোঁজখবর না নিয়ে উৎসাহী হবেন বলে মনে হয় না। যদিও কোচের দায়িত্বে ফিরে আসার পর থেকে নির্বাচনী বৈঠকে যোগ দেন না শাস্ত্রী। তিনি নির্বাচনী মামলা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। সাধারণত অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে আলোচনা করেই বলে দেন যা বলার। ভারতীয় ‘এ’ দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর সঙ্গে বেশ ভাল সম্পর্ক শাস্ত্রীর। কখনওসখনও দ্রাবিড়কে ফোন করেও ভারতীয় দলের হেড কোচ তাঁর পরামর্শ চাইতে পারেন যে, অমুককে নেওয়া যায় কি না। বা সিনিয়র দলে এক জন ওপেনার দরকার, কাকে নেওয়া উচিত?

অবাক হওয়ার থাকবে না যদি দ্রাবিড়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ওপেনার হিসেবে পৃথ্বী এবং মিডল-অর্ডারে হনুমা বিহারীকে নিয়ে আসা হয়ে থাকে। পৃথ্বীকে নিয়ে যেমন ইতিমধ্যেই আলোড়িত ভারতের ক্রিকেট মহল, তেমনই বিহারীও বেশ নাম করে ফেলেছেন। এখনকার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদের পরে অন্ধ্র প্রদেশ থেকে ১৯ বছর পরে সুযোগ পাওয়া প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার তিনি। এই মুহূর্তে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ গড় তাঁর। স্টিভ স্মিথের চেয়েও এগিয়ে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করেন। সম্প্রতি দ্রাবিড়ের ‘এ’ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে খেলে গিয়েছেন পৃথ্বীও। ক্রিকেটার হিসেবে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তিনি অবশ্য অনেক বছর ধরেই ইংল্যান্ডে আসছেন ক্লাব ক্রিকেট খেলতে।

ওপেন এবং মিডল-অর্ডারে দুই নতুন মুখ এনে ফেলার পরে এর পরের লক্ষ্য হতে পারেন কোনও তরুণ পেসার। কারও কারও মনে হচ্ছে, এই দলের মধ্যে প্রজন্ম বদলের হাওয়া আসতে শুরু করেছে। অনেকেই তিরিশ পেরিয়ে যাচ্ছেন। বিজয় বেরিয়ে গেলেন। ধওয়নকে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তেমনই মিডল-অর্ডারে পূজারা, রাহানেদের পরে কেউ তৈরি নেই। করুণ নায়ারকে দিয়ে কতটা কী হবে, সন্দেহ আছে। বিহারীর উপরে অনেকে আস্থা রাখছেন। এই মুহূর্তে ভারতীয় পেস বোলিং আক্রমণ দারুণ করলেও ইশান্ত শর্মা এবং মহম্মদ শামির বয়স বাড়ছে। কতটা শরীরের উপর ধকল তাঁরা নিতে পারছেন, সেটাও নজরে রাখতে হবে। হঠাৎ করে যাতে শূন্যতা তৈরি না হয় সেই কারণে পেস বোলিং বিভাগেও নতুন মুখ আনা হতে পারে।

শাস্ত্রী এই মুহূর্তে কোহালির মতো সিনিয়রদের নিয়ে থাকলেও তাঁর বিশেষত্বই হচ্ছে তরুণদের নিয়ে বাজিমাত করা। মুম্বইয়ের অধিনায়ক হিসেবে সব চেয়ে তরুণ দল নিয়ে বাংলাকে হারিয়ে রঞ্জি ট্রফি জিতেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অস্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা নরেন্দ্র হিরওয়ানিকে লেলিয়ে দিয়ে ভিভ রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলেন। ২০০৭-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়ে ফেরার পরে তাঁকে অস্থায়ী কোচ করে ভারতীয় বোর্ড তরুণ দল পাঠায় বাংলাদেশে। ভারতীয় দলের স্থায়ী কোচ হওয়ার পরে হার্দিক পাণ্ড্যকে অলরাউন্ডার হিসেবে তীক্ষ্ম করায় ডুবে রয়েছেন তিনি। ঋষভ পন্থকে চাঙ্গা করে কঠিন পরিস্থিতিতে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামিয়েছেন ট্রেন্ট ব্রিজে। শোনা গেল, ঋষভকে নাকি শাস্ত্রী এবং কোহালি বলে দেন, তুই ব্যর্থ হওয়ার ভয় পাস না। আমরা আছি। মাঠের মধ্যে গিয়ে নিজেকে মন খুলে উড়তে দে, যা।

যদিও ট্রেন্ট ব্রিজে জেতার পরে সব চেয়ে বেশি করে চোখে পড়বে ভারতীয় দলের মনোভাব। কোনও বিজয়োৎসবের বালাই নেই। গত কাল রাতে হোটেলেও কোনও খানাপিনার আয়োজন হয়েছিল বলে খবর নেই। শোনা গেল, কোচ এবং অধিনায়ক নাকি উল্টে দলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এখনও ইংল্যান্ড সিরিজে ২-১ এগিয়ে। আমাদের কাজ অর্ধেকও হয়নি।’’

ট্রেন্ট ব্রিজ থেকে কোহালিরা এ দিন লন্ডনে এলেও মনে-মনে সাউদাম্পটন পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। প্রথম লক্ষ্য এখন ওখানে ২-২ করো, তার পরে ওভালে ঝাঁপাও ডন ব্র্যাডম্যানের দলকে ছোঁয়ার জন্য!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE