রাজকোট ভারতীয় স্পিনারদের দমিয়ে দেবে না। বরং ওদের আরও উন্নত করে তুলবে। প্রতিকূল পরিস্থিতি সাধারণত সে রকমই করে থাকে। মানসিক ভাবে ভারতীয় স্পিনাররা উন্নতি করবেই। একটা উদাহরণ দিই। এবড়োখেবড়ো রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় নিশ্চয়ই কেউ ঘণ্টায় একশো কিলোমিটার স্পিড তুলবে না। তখন লোকে সতর্ক ভাবে, রাস্তার উপর নজর রেখে গাড়ি চালাবে।
ওই পরিস্থিতিতে ভারতের ধৈর্য দরকার ছিল। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে পিচ ফ্ল্যাট ছিল। ইংরেজরাও বোকামি করেনি। বাউন্স আর স্পিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরেই অশ্বিন-জাডেজা-মিশ্রদের মারা শুরু করেছিল। অগুনতি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে ইংল্যান্ড। ভারতীয় স্পিনারদের ওদের ঘরের মাঠেই সব কিছু ভুলিয়ে ছেড়েছে।
ওই সময় ভারতের উচিত ছিল রে-রে করে ঝাঁপিয়ে না পড়ে অপেক্ষা করা। হয়তো বা পিচের একটা দিকে একটু বেশিক্ষণ বল করে যাওয়া। যে সময় দরকার ছিল ব্যাটসম্যানদের ভুলের জন্য অপেক্ষা করা, তখন ভারত দ্রুত উইকেট তোলার লড়াইয়ে তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়ল। আশা করি এই টেস্টটা ভবিষ্যতেও জরুরি রেফারেন্স হিসেবে মনে রাখবে ওরা। মানে, পরে যখন ওরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়বে। যখন টেনশনে টিমের সবার তালু ঘেমে উঠবে।
বিশাখাপত্তনম অবশ্য বেশি করে ভারতীয় উইকেটের মতো হবে। এই মাঠে যে সাম্প্রতিক অতীতে অমিত মিশ্র পাঁচ উইকেট নিয়েছে, নিশ্চয়ই সেটা ও কাউকে ভুলতে দেবে না। রাজকোটের হোঁচটের পরেও কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে অমিত মিশ্রর পাঁচ উইকেট সবার মনে আছে। দ্বিতীয় টেস্টে একটা সুযোগ ওর প্রাপ্য। আর রাজকোটের পিচে যদি তিন স্পিনার খেলানোর সামর্থ থাকে, তা হলে বিশাখাপত্তনমে স্পিন ভোজের আশা দেখানো উইকেটে সেটা না করার কোনও কারণ নেই।
গৌতম গম্ভীর নিয়েও কিন্তু আমার বিশেষ চিন্তা নেই। ওর মতো ব্যাটসম্যানের জন্য বিশাখাপত্তনম আদর্শ। যদি না পুরো ফিট লোকেশ রাহুল ওর জায়গাটা নেওয়ার জন্য তৈরি থাকে। যে পিচ স্পিনারদের সাহায্য করে, যে পিচে ইন-ফিল্ডের সীমানা পেরোনো সব সময় সম্ভব নয়, সেখানে সিঙ্গলস অমূল্য সম্পদ।
বাকি কাউকে নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। হ্যাঁ, রাজকোটের দুটো ইনিংসে টার্নের বিরুদ্ধে কাট বা ফ্লিকের চেষ্টা না করে সোজা ব্যাটে খেললে ভাল করত অজিঙ্ক রাহানে। বিশেষ করে যখন ভারত পিছন থেকে ফেরার যুদ্ধ করছে। তবে ওরা মানুষ, রোবট নয়। আর রাহানে তো এই ব্যাটিং লাইন-আপের ধ্রুবতারা।
বিরাট কোহালির অবশ্যই আলাদা একটা অনুচ্ছেদ প্রাপ্য। ও যে ভাবে ঝুঁকে পড়ে ডিফেন্স করছিল, তাতে অনেকেই দারুণ প্রভাবিত হয়েছে। আক্রমণে বা আরও বেশি করে ডিফেন্ড করার সময় ওর ফুটওয়ার্ক দেখতে দুর্দান্ত লাগছিল। রাজকোটে পরিস্থিতি যেমন ছিল, তাতে বিরাটকে প্রাণপ্রণ লড়াই করে নিজের সহজাত প্রবৃত্তি দমিয়ে রাখতে হয়েছিল। কিন্তু রাজকোটে বিরাট যা যা করেছে, বিশাখাপত্তনমে সেগুলোর সঙ্গে ওকে আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে। কারণ এটা এমন একটা মাঠ যেখানে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ আর ডিনার মেনুতে একটাই আইটেম— স্পিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy