Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ব্যালান্স শিট দেখিয়ে পাল্টা জবাব, গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে সিএবি-তে

অভূতপূর্ব আর্থিক ক্ষতি এবং তা নিয়ে সংস্থার ফিনান্স কমিটি সদস্যের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে তীব্র কাজিয়া তৈরি হয়ে গেল সিএবিতে। সংস্থার এক যুগ্ম সচিব ও কোষাধ্যক্ষ রীতিমতো ফেটে পড়লেন পাল্টা দিতে গিয়ে। প্রচারমাধ্যমের সামনে ব্যালান্স শিট ফেলে দেখানো হল কোন খাতে কতটা খরচ হয়েছে। সংস্থার কর্তাদের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে অভিনব নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:০২
Share: Save:

অভূতপূর্ব আর্থিক ক্ষতি এবং তা নিয়ে সংস্থার ফিনান্স কমিটি সদস্যের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে তীব্র কাজিয়া তৈরি হয়ে গেল সিএবিতে। সংস্থার এক যুগ্ম সচিব ও কোষাধ্যক্ষ রীতিমতো ফেটে পড়লেন পাল্টা দিতে গিয়ে। প্রচারমাধ্যমের সামনে ব্যালান্স শিট ফেলে দেখানো হল কোন খাতে কতটা খরচ হয়েছে। সংস্থার কর্তাদের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে অভিনব নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া হল। বলে দেওয়া হল, এ বার থেকে গাড়ি নিতে হলে সহ সচিবের থেকে স্লিপ নিতে হবে!

উষ্মার লক্ষ্যবস্তু— ফিনান্স কমিটি সদস্য হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য। সিএবিকে তিন কোটি সত্তর লক্ষ টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে দেখে যিনি শুক্রবার মোটামুটি বোমা ফাটিয়ে দেন সিএবি কর্তাদের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ ছিল দু’টো। প্রথমত, গাড়ি ও খাওয়াদাওয়ার পিছনে সম্মিলিত ভাবে পাঁচ কোটি খরচ হয়েছে। গাড়ির পিছনেই গিয়েছে যার মধ্যে তিন কোটি এব‌ং পুরোটাই অর্থহীন। পাশাপাশি গত বারের বার্ষিক সভায় কী কারণে সদস্যদের ‘ট্যাব’ উপহার দিয়েছে সিএবি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ফিনান্স কমিটি সদস্যের যে অভিযোগ সিএবিতে ঝড় তুলে দেয়। নাটকের পর নাটক চলতে থাকে। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলে দেন, ‘‘ট্যাব তো উনিও পেয়েছিলেন। সেটা তা হলে ফিরিয়ে দিলেন না কেন? আসলে উনি সে ভাবে সিএবিতে আসেন না। এলে জানা যেত, কোথায় কী খরচ হচ্ছে।’’ যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় আবার ব্যালান্স শিট হাজির করে ফেলেন মিডিয়ার সামনে। দেখানো হয়, গাড়ির পিছনে সম্মিলিত খরচ সত্তর লক্ষের আশেপাশে। প্রশ্ন তোলা হয়, সেটা কী করে তিন কোটি বলা হচ্ছে? স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের খরচও যে মোটেও চার কোটি নয়, সেটাও দেখিয়ে দেওয়া হয়। যা নিয়ে স্টেডিয়াম কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রক মিত্র আবার বলে দিয়েছিলেন যে, খরচের হিসেব নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা নেই যেহেতু কোনও বৈঠক হয়নি। কিন্তু এ দিন সিএবি যুগ্ম-সচিব ব্যালান্স শিট খুলে বলে দেন, স্টেডিয়ামের পিছনে এ বার খরচ হয়েছে দু’কোটি ছিয়াশি লক্ষ টাকা। গত বার ছিল এক কোটি সত্তর লক্ষ টাকা। বাড়তি খরচের ব্যাখ্যাও বিশদে দিয়ে দেওয়া হয়। ‘‘যে হিসেব হিরণ্ময়বাবু দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ ভুল। সিএবি তো কারও একার নয়, সবার। এতে কি সিএবির ভাবমূর্তির ভাল হল?’’ পাল্টা প্রশ্ন তুলে দেন যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। এটাও বলা হতে থাকে যে, খাওয়াদাওয়ার খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলাও অত্যন্ত অপমানজনক। প্রতিষ্ঠাদিবস, বার্ষিক অনুষ্ঠান বা ইডেনে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকলে কি খাওয়াদাওয়া একমাত্র সিএবি শীর্ষকর্তারা করে থাকেন? আর এতই যদি অসুবিধে থাকে, তা হলে সব বন্ধ করে দিলেই হয়! স্টেডিয়াম কমিটির চেয়ারম্যানকেও ছাড়া হয়নি। চিত্রক মিত্রের মন্তব্যের পাল্টায় যুগ্ম সচিব বলে দেন, ‘‘উনি ঠিকই বলেছেন। স্টেডিয়াম কমিটির মিটিং ডাকা হয়নি। কিন্তু কেন হয়নি উনিও জানেন। আমিও জানি!’’

সিএবি-র অন্য যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নতুন উদ্ভুত বির্তকে ঢুকতে চাইলেন না। কিন্তু তাতে উত্তেজনার প্রশমিত হয়নি। বরং সন্ধে থেকে দফায় দফায় নাটক আরও বাড়তে থাকে। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু যাঁকে করা হল, প্রথমে সেই হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় ফের মুখ খোলেন। বলতে থাকেন, সিএবি থেকে প্রাপ্ত ‘ট্যাব’ তিনি ফিরিয়ে দেবেন! আর বর্তমানে সিএবিতে তিনি যান না, কারণ এ সবের প্রতিবাদ করলে লাভ হয় না, তাই। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, এত দিন তা হলে কেন নীরব ছিলেন? পাওয়া মাত্র ট্যাবও ফেরত দেননি কেন? উত্তরে ফিনান্স কমিটি সদস্যের জবাব, ‘‘কোনও সার্কুলার দেওয়া হয়েছিল যে ট্যাব দেওয়া হবে সদস্যদের? প্রতিবাদের কোনও মঞ্চ ছিল? থাকলে সে দিনই ফেরত দিতাম। ওটা আমি খুলেও দেখিনি। আর এ বার ওটা সিএবিকে ফিরিয়েও দেব।’’ বলে হিরণ্ময়ের ফের সংযোজন, ‘‘যত দিন ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম, এ সবের প্রতিবাদ করেছি। মিডিয়ায় যা আমি বলেছি, সেটা বৈঠকেও বলেছি। আর খরচ ততটাই দেখানো হচ্ছে যতটা ওরা দেখাতে চাইছে। বললে আমিও ব্যালান্স শিট নিয়ে আসছি।’’

ততক্ষণে আবার আরও একটা নাটক হয়ে গিয়েছে। ফিনান্স কমিটির অধীনে থাকা স্ক্রুটিনি কমিটির দু’জন সদস্য বীরেন মিত্র ও চিন্ময় দে এ দিন সিএবিতে এসে পদত্যাগ করে চলে গিয়েছেন! তাঁদের মুখ্য অভিযোগ, সিএবি সহ সচিব অনু দত্তের বিরুদ্ধে। দু’জনেই বললেন যে, ফিনান্স কমিটির বৈঠকে অনু দত্তের সই করা একটা ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, সচিবের অধিকারে যা পড়ে, তাতে সহ সচিবের অধিকার আছে কি না? সই তিনি করতে পারেন কি না? অনু দত্ত নাকি তাঁদের তখন বলেন, স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সইয়ের অধিকার তাঁকে দিয়েছেন। আর বলেন যে, স্ক্রুটিনি কমিটির নামে যে অনিয়ম চলছে সেটা তিনি মিডিয়াকে জানাবেন। তাই অপমানে স্ক্রুটিনি কমিটি থেকে এমন পদত্যাগ। যা শুনে অনু দত্ত বললেন, ‘‘গত ছ’মাসে আমার সই করা ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। তা হলে এখন কেন উঠল?’’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবার বললেন, ‘‘এটুকু বলতে পারি সিএবি-র গঠনতন্ত্র আছে যে সচিব, প্রেসিডেন্ট এমনকী ওয়ার্কিং কমিটির নির্দেশে সহ সচিব দরকারে সচিবের কাজ করতে পারে। আর আমি জানতাম না যে ওঁরা দু’জন পদত্যাগ করেছেন। বীরেনবাবু ও চিন্ময়বাবু দু’জনেই অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। বহু দিন ধরে সিএবিতে আছেন। আমি বলব ওঁদের পদত্যাগ না করতে।’’

আর জগমোহন ডালমিয়া— গোটা ঘটনায় সিএবি প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া কী? সন্ধেয় যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে ডালমিয়া-পুত্র বললেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সচিব অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত। রাতে করতে। রাত বারোটা নাগাদ ফের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ধরা যায়নি। সিএবি প্রেসিডেন্টের নিজের ফোন বন্ধ। ডালমিয়া-পুত্রও আর ফোন ধরেননি। যা দেখে কারও কারও বিস্ময় লাগছে যে, এত তোলপাড় পড়ে গেল তাঁর সংস্থায় আর সিএবি প্রেসিডেন্ট কি না গোটা দিনে কোনও হস্তক্ষেপই করলেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sourav Ganguly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE