Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বর্ণহীন অনুষ্ঠানে প্রাপ্তি বিতর্ক

বাংলার ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে জুলাই শেষের এই দিনটা সাধারণত ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে। গোটা বঙ্গের সফল ক্রিকেটারদের এ দিন মঞ্চে ডেকে নেয় সিএবি। দেশের দুঁদে ক্রিকেট-ব্যক্তিত্বদের এক জনকে প্রত্যেক বছর আনা হয়। জেলা থেকে কলকাতা, বিভিন্ন প্রান্তের ক্রিকেট প্রশাসকরা আসেন। অতীতের এক প্রখ্যাত মুখকে আজীবনের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মানের স্মারক।

সিএবি ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে বেশ ঘরোয়া মেজাজে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত।

সিএবি ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে বেশ ঘরোয়া মেজাজে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৪:০০
Share: Save:

বাংলার ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে জুলাই শেষের এই দিনটা সাধারণত ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে। গোটা বঙ্গের সফল ক্রিকেটারদের এ দিন মঞ্চে ডেকে নেয় সিএবি। দেশের দুঁদে ক্রিকেট-ব্যক্তিত্বদের এক জনকে প্রত্যেক বছর আনা হয়। জেলা থেকে কলকাতা, বিভিন্ন প্রান্তের ক্রিকেট প্রশাসকরা আসেন। অতীতের এক প্রখ্যাত মুখকে আজীবনের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মানের স্মারক। ঐতিহ্য মেনে প্রত্যেক বছর এটা হয়ে থাকে। ঐতিহ্য ধরলে, বাংলার ক্রিকেট-পীঠস্থানের এটাই আদতে বিজয়া দশমী।
শনিবার বিকেলে সিএবি যে অনুষ্ঠান বঙ্গ ক্রিকেটকে উপহার দিল, তাতে ক্রিকেটীয় স্বর্ণ মুহূর্ত থাকল না বললে অন্যায় হবে। বরাবরের মতো মনে রাখার মতো অনন্য কিছু মুহূর্তের সাক্ষী এ দিনও থেকে গিয়েছে বৃষ্টিভেজা ইডেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের যখন খুদে ক্রিকেটারদের ‘‘তোমাদের মধ্যে কে কে সৌরভ হতে চাও’’ জিজ্ঞেস করলেন আর তাতে যখন প্রায় সমস্ত কচিকাঁচার হাত উঠল, রোম্যান্স জন্ম নিয়েছে। বা যখন প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক প্রধান বলে দিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মাঠ ইডেন গার্ডেন্স, বলে দিলেন, ‘‘আশা করব এই তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে আরও একটা সৌরভ আমরা পাব। যে বাংলা থেকে দেশের হয়ে খেলবে, হয়তো বা দেশের অধিনায়কত্বও করবে!’’ হাততালির প্রাচুর্য দেখে মনে হয়েছে ভবিষ্যৎ বোধহয় ইতিমধ্যেই বর্তমান।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— তিনি সম্ভবত দিনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটা করে গেলেন। বললেন, ‘‘প্রশাসক হিসেবে আমরা বাংলার ক্রিকেটের দেখাশোনা করি। কিন্তু খেলাধুলোর শহর হিসেবে আমাদের অনেক কিছু এখনও করে দেখানো বাকি। সিএবি তখনই সফল হবে যখন তোমরা, তরুণ ক্রিকেটাররা সফল হবে। দেশের হয়ে খেলবে, বাংলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’

দুঃখের হল, তার পরেও অনুষ্ঠান পূর্ণতা পেল না। বরং বিতর্ক-ঝঞ্ঝা-দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হয়ে তা দাঁড়াল মনখারাপ করা এক অনুষ্ঠানে। যেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল, তবু প্রাপ্তি নেই। থাকবেও বা কী করে?

আজীবন স্বীকৃতির প্রাপক দিলীপ দোশী— অনুপস্থিত। আসতে পারলেন না। নামটা ঘোষণা করে শুধু ছেড়ে দেওয়া হল। বলা হল, পরে তাঁর জন্য আলাদা অনুষ্ঠান হবে।

বর্ষসেরা ক্রিকেটার অভিমন্যু ঈশ্বরন— তিনিও থাকতে পারলেন না। তাঁকে এ দিন যেতে হল চেন্নাই। টি এ শেখরের শিবিরে যোগ দিতে।

উপরোক্ত দুই ঘটনা তবু প্রত্যাশিত ছিল। দোশী যে আসবেন না বা ঈশ্বরনকে যে পাওয়া যাবে না, সেটা জানা ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হয়ে গেল আরও গোটা কয়েক বিসদৃশ ঘটনা।

যেমন, সাম্প্রতিকে সিএবির আর্থিক সঙ্কট নিয়ে উদ্ভুত বিতর্ক, খাবারদাবারের খরচ নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন ওঠা থামাতে অভূতপূর্ব ভাবে বার্ষিক অনুষ্ঠানে কুপন সিস্টেমে চলে গেল সিএবি। প্যাকেট পেতে চাই কুপন। কিন্তু সেটাও ঠিকঠাক বিতরণ না হওয়ায় পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে অনেকেই তা পেলেন না বলে অভিযোগ উঠে পড়ল।

যেমন, বিহার ক্রিকেট সংস্থার কিছু প্রতিনিধি তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রাখায় অনুষ্ঠানে পৌঁছতে অনেক দেরি হল সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার। সিএবি প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে সভাপতিত্বের ব্যাটন নিতে হল ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্তকে। ডালমিয়া যখন ঢুকলেন, অনুষ্ঠান প্রায় শেষ। তাঁর হয়ে ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যানের বক্তৃতাও দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

সেরা অনূর্ধ্ব উনিশ জেলা ক্রিকেটার ঋষভ শেঠিয়ার হাতে আনন্দবাজার পত্রিকা চ্যালেঞ্জ ট্রফি

ও পাঁচ হাজার টাকার চেক তুলে দিচ্ছেন কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। শনিবার সিএবিতে।

যেমন, ক্রিকেটারদের ‘ড্রেস কোড’ বিতর্কের ফের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা। বছর কয়েক আগে বিষেণ সিংহ বেদী এসে বলে গিয়েছিলেন ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট ড্রেস কোডের কথা। সেই মতো গত বছর লক্ষ্মীরতন শুক্লদের বিশেষ ফর্ম্যাল পোশাকও দেওয়া হয়েছিল সিএবির পক্ষ থেকে। এ বার অবশ্য সে সব কিছুই দেখা গেল না। ফর্ম্যাল শার্ট-প্যান্টের জায়গায় ক্রিকেটাররা মঞ্চ থেকে পুরস্কার নিলেন সেই জিন্স, রংবেরঙের টি-শার্ট পরে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিএবিরই কোনও কোনও সদস্যের যা ‘দৃষ্টিকটু’ লেগেছে।

সবশেষে বৃষ্টি। শোনা গেল বৃষ্টির ঝঞ্ঝাটে পড়ে বেশ কিছু জেলা প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতেও অনুষ্ঠান-ম়ঞ্চ ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে। এক ঝাঁক ক্রিকেটার কেএসসিএ-তে প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট খেলছেন। আর একদল এ দিন উড়ে গেলেন চেন্নাই। টিএ শেখরের ক্যাম্পে। তাঁরা তো ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা যাননি, তাঁরাও এলেন কোথায়? লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ তিওয়ারিরা শহরে থেকেও অনুষ্ঠানে আসেননি। অশোক দিন্দাকে শুধু দেখা গিয়েছে।

আসলে শনিবার সিএবি অনুষ্ঠানে শুধু উৎসবের কাঠামোটাই ছিল। কেউ টেরও পায়নি সবার অলক্ষ্যে কখন প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে গিয়েছে!

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE