সেই-সময়ে: ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মোহনবাগানের অন্যতম ভরসা ছিলেন নন্দীগ্রামের এই ভূমিপুত্র। সংগৃহীত
সত্তর ও আশির দশকের কলকাতা ফুটবল ময়দানের উন্মাদনা নিয়ে নানা ‘মিথ’ চালু রয়েছে। সেই সময়ে দলবদল নিয়ে টানটান উত্তেজনা থাকত। দলবদলকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি, বোতল ছোড়াছুড়ি, বোমার লড়াইও হয়েছে। দুই ক্লাবের যুুযুধান সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাটানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের সেল। শুধু দলবদল নয়, বড় দল যদি ছোট দলের সঙ্গে কোনও ম্যাচ ড্র করত বা হারত তাহলেও গোলমাল হত।
একজন ফুটবলার হিসেবে সেই সব দিন খুব কাছ থেকে দেখেেছন সুযশ বেরা। কলকাতার ফুটবল রিক্রুটাররা তখন সন্তোষ ট্রফিকেই মূল ‘টার্গেট’ করতেন। লক্ষ্য ছিল, উঠতি ফুটবলার বেছে ক্লাব কর্তাদের নজরে আনা। বেশিরভাগ সময় একজন ফুটবলারের পিছনে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল দুই দলের রিক্রুটারেরা লেগে থাকতেন। তাঁকে আগে কে কব্জা করতে পারবেন, সেই নিয়ে রেষারেষি চলত। অনেক সময়ে ফুটবলারদের ‘তুলে নিয়ে’ গোপন ডেরায় রেখে দেওয়া হত। সেই ঠিকানা সংশ্লিষ্ট ফুটবলারের বাড়ির লোককেও জানতে দেওয়া হত না। এমনই ছিল দলবদলের উত্তেজনা।
সুযশবাবুর মোহনবাগানে সই করার পিছনেও রয়েছে সেরকমই রোমহর্ষক গল্প। ১৯৮১ সালে সল্টলেকে হওয়া জাতীয় শিবিরে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তার আগে মোহনবাগান থেকে ‘অফার’ পেয়ে গিয়েছেন। সুযশবাবু বলেন, ‘‘এক দিন শিবির থেকে বেরোচ্ছি, হঠাৎ অচেনা একজন এসে তাঁর গাড়িতে উঠতে বললেন। তখন চেতলায় ভাড়া থাকি। কলকাতা সেভাবে চিনি না। কিছুটা ভয় পেয়েই গাড়িতে উঠলাম। তারপর সেই গাড়িকে বিশুকে (ফুটবলার বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য) তুলে গাড়ি চলল খিদিরপুরের দিকে। গিয়ে থামল একটি বাড়ির সামনে। দেখলাম, কয়েকজন যুবক বাড়ি ঘিরে রেখেছে। আমাদের যত্ন করল। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরার কথা কেউ বলছিল না। তখন বিশু বলল, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা মোহনবাগানের ডেরা। দলবদলের সময়ে এরকম হয়। পরের দিন গাড়ি করেই আইএফএ অফিসে নিয়ে গিয়ে সই করানো হয়।’’
শুধু ভালবাসা নয়, সমর্থকদের রাগের সামনেও পড়তে হয়েছে সুযশবাবুকে। ১৯৮৩ সালে কলকাতা লিগে বাটার সঙ্গে একটি ম্যাচ ড্র করেছিল মোহনবাগান। তারপর ফুটবলারেরা সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ তাঁদের তাঁবু থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। চলছিল পাথর ছোড়া ও গালিগালাজ। সুযশবাবুর কথায়, ‘‘বাবলুদার (সুব্রত ভট্টাচার্য) মেজাজ একটু চড়া ছিল। উনি তাঁবু থেকে বেরোতে না পেরে লাথি ছুড়তে শুরু করেন। শেষে আসরে নামেন শৈলেন মান্না। তিনি সবাইকে শান্ত করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy