জুবিন গর্গের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর অন্ধ ভক্ত হিমা দাস। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের মেয়েটা শুধু ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে ফুটবলই পেটাত না। বেআইনি কিছু দেখলেও ঝাঁপিয়ে পড়ত। অবশ্য দামাল মেয়ের বেপরোয়া স্বভাবের জন্য তাঁর বাবাকে আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে ক্ষিপ্ত নন। বরং গর্বিতই রঞ্জিৎ দাস। আন্তর্জাতিক দৌড়ে ভারতের হয়ে প্রথম সোনাজয়ী মেয়ের বাবা যে তিনি!
সোনার মেয়ে হিমা দাসকে রাজ্য ক্রীড়ার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে ঘোষণা করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। পাশাপাশি তাঁকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদানও দেওয়া হবে বলে শনিবার নুমালিগড়ে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফেরার পরে রাজ্যের তরফে তাঁকে সম্বর্ধনাও দেওয়া হবে।
কিন্তু এই গত মাসেও ফেডারেশন কাপ, পোল্যান্ড, সিনিয়র আন্তঃরাজ্য অ্যাথলেটিক্সে সোনা পাওয়া হিমার ‘সৌজন্যে’ রঞ্জিৎবাবুকে আদালতে দৌড়াতে হয়েছে। আদরের ‘ধিঙ এক্সপ্রেস’-কে নিয়ে যখন অভিনন্দনের স্রোতে ভাসছে গোটা পরিবার-গ্রাম থেকে শুরু করে অসম, তখনই হিমার বিভিন্ন কাণ্ডকারখানার কোলাজ মনে করাচ্ছেন পরিবার ও গ্রামের মানুষজন।
আরও পড়ুন
মনে হচ্ছে স্বপ্ন, সোনা জিতে বললেন হিমা
হিমা অনেক দিন থেকেই ছাত্র সংগঠন আসু-র সদস্য। ধিঙের এক আসু নেতা জানান, আসু-র আঞ্চলিক ক্রীড়া সম্পাদক হিমা। আসু-র নেতৃত্বে গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজে বরাবরই সামনে থাকেন তিনি। গ্রামে বেআইনি মদের ব্যবসা চালু থাকায় বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। তাই মদের ঘাঁটি উৎখাত করতে হিমার নেতৃত্বে মহিলা বাহিনী সেখানে হামলা চালান। ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এর পরেই ওই ব্যবসায়ীরা পাল্টা মামলা করেন। অবশ্য হিমাকে বাঁচিয়ে মামলা ঠোকা হয়েছিল তাঁর বাবার নামে। তাই জুনের শেষ সপ্তাহেও রঞ্জিৎবাবুকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।
অপর আসু সদস্য তথা হিমার ভ্রাতৃস্থানীয় অঙ্কুরকুমার নাথ জানান, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই হিমা এক দিন দৌড়ে টাটা সুমোকে হারিয়ে দিয়েছিল। তখন থেকেই হিমাদির পায়ের জোর সকলে জানে। বড় হওয়ার পথে সব সময় ছেলেদের সঙ্গেই খেলত। জ্যাঠতুতো দাদার সঙ্গে হিমা মাঠে ফুটবল খেলতে গেলে অন্য ছেলেরা আপত্তি জানাত। মেরে তাড়িয়ে দিত হিমাকে। বাধ্য হয়ে রঞ্জিৎবাবু নিজে মেয়েকে নিয়ে মাঠে যেতেন। অন্য ছেলেদের বুঝিয়ে মেয়েকে খেলাতেন। ছেলেদের কাছ থেকে মোটরবাইক কেড়ে নিয়ে চালাত মেয়েটা।
ফুটবল জেলা স্তরেও খেলেছে হিমা। কিন্তু তাঁর জীবন বদলে দেওয়ার নেপথ্য নায়ক ধিঙের জওহর নবোদয় স্কুলের শিক্ষক শামসুল হক। তিনিই ফুটবল খেলার সময় লক্ষ্য করতেন, বলের চেয়ে দ্রুত দৌড়োচ্ছে হিমা। তাই হিমাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দৌড়ের রাস্তায় আনেন শামসুল স্যার।
আরও পড়ুন
ঘৃণা আর চোখরাঙানিকে পিছনে ফেলে এই বিশ্বকাপ আসলে উদ্বাস্তুদের
এ দিন হিমার বাড়িতে যান অসম অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্তারা। নেতা-বিধায়কদের ভিড় লেগেই আছে বাড়িতে। জুবিন গর্গের অন্ধ ভক্ত হিমা। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলের নামেও জুবিনের গানের কথা। জুবিন তাঁকে নিয়ে বলেন, “এখন যাঁরা হিমার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন তাঁদের অনেকেই হিমাকে আগে চিনতই না। যখন হিমার সঙ্গে আমার আলাপ তখন কেউ ওর নাম জানে না। কিন্তু ওর মনের জোর আর চোখে ঝলকানি দেখেই বুঝেছিলাম মেয়েটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। ওকে বলেছিলাম, তুমি দৌড়ে যাও। আমি পিছনে থাকব। এমনকি তখন সরকারি সাহায্যও পায়নি মেয়েটা। এখন সরকার ওকে রেলে চাকরি দিতে চাইছে। কিন্তু আমার মতে এখন অন্য কোনও দিতে মন না দিয়ে ওর শুধু দৌড়ের ট্র্যাকে মন দেওয়াই প্রয়োজন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy